বিশ্ব মুসলিমের মহামিলন কেন্দ্র 

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কাবা শরিফে বিশ্ব মুসলিমের মিলনমেলা। ছবি বার্তা২৪

কাবা শরিফে বিশ্ব মুসলিমের মিলনমেলা। ছবি বার্তা২৪

মক্কা (সৌদি আরব) থেকে: হজের সময় তো বটেই, সারা বছরের প্রতিটি দিনই পবিত্র কাবা শরিফ  বিশ্ব মুসলিমের মহামিলনের এক অনিবার্য কেন্দ্রস্থল।  'লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক' ধ্বনি উচ্চারণ করে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে মুসলিম নর-নারী হাজির হন এখানে।

সকলেই এক ও অভিন্ন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, 'হে আল্লাহ, আমি উপস্থিত হয়েছি। হে আল্লাহ, আপনার কোনো শরিক নেই। আপনি এক ও অদ্বিতীয়। সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য।'

বিজ্ঞাপন

কেউ কারো ভাষা জানেন না। কারো চেহারার সঙ্গে কারো কোনো মিল নেই। কিন্তু সকলোর মধ্য একটি মিল সবাইকে এক কাতারে মিলিত করেছে। তা হলো, তাওহিদের স্বাক্ষ্য। সকলেই এক আল্লাহর বান্দা হিসাবে ঘোষণা দিয়ে মিশেছেন ইসলামের ঐক্যের বন্ধনে। মুসলিম উম্মাহর অংশ হয়ে সকলেই একাকার হয়েছেন হেরার জ্যোতিময় কালেমার নূরানী  কাফেলায়।

হজের নির্ধারিত দিনগুলো ছাড়া বছরের বাকী সব দিনে বায়তুল্লাহর পবিত্র কাবা চত্বরে ওমরাহ পালনের জন্য মুসলিমরা সমবেত হন। সাধারণত রমজান মাসে ওমরাহ পালনের আগ্রহ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসের বাণীতে উল্লেখিত হয়েছে, 'যে ব্যক্তি রমজানে ওমরাহ পালন করবে, সে আমার (নবীর) সঙ্গে ওমরাহ পালনের সৌভাগ্য লাভ করবে।' ফলে অনেক নিবেদিতপ্রাণ মুসলমান রমজানে ওমরাহ পালনের জন্য আকুল হয়ে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

রমজান ছাড়াও বছরের সুবিধাজনক সময়ে মানুষ ওমরাহ করতে আসেন মক্কার পবিত্র বায়তুল্লাহর কাবা শরিফে। তারা সেখানে তাওয়াফ বা সাত বার চক্কর দিয়ে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান সাত বার সাঈ করেন বা দৌড়ান। এক বিস্ময়কর বিষয় হলো, আল্লাহর ঘরে তাওয়াফ এবং সাঈ এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয় না। দিনে বা রাতে, শীতে বা গ্রীষ্মে, ঝড়ে বা বৃষ্টিতে, দুর্যোগ বা ঝঞ্ঝার মধ্যেও কেউ না কেউ আল্লাহর মহিমা উচ্চারণের মাধ্যমে তাওয়াফ ও সাঈ করছেনই। আল্লাহর শানে ঊর্ধ্বকাশের বায়তুল মা'মুরে ফেরেশতাদের আর পৃথিবীতে বায়তুল্লাহে মানুষের প্রার্থনা নিরবধি। সদা চলমান। 

প্রার্থনার চিরন্তন ধারায় সমবেত হতে মানুষ দলে দলে উপস্থিত হন পবিত্র কাবায়। উৎসবমুখর তাদের অংশগ্রহণ। সাধারণত প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ বয়সে হজ, ওমরাহ করার একটি প্রবণতা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পরিলক্ষিত হলেও বৈশ্বিক বাস্তবতা ভিন্ন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুসলমানরা তরুণ ও যুবক বয়সেই আসেন হজ ও ওমরাহে। তারা আসেন সপরিবারে। আনন্দময় মনোভাবে অংশ নেন নামাজে, তাওয়াফে, সাঈ এবং অন্যান্য আমলে।দলবেঁধে ঘুরে বেড়ান মক্কার পবিত্র স্থানগুলোতে। চোখ ও মন ভরে দেখেন আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার অপরূপ নিদর্শন। পুষ্ট করেন তাদের ঈমান। শুদ্ধ করেন তাদের আমল। ঐক্যবদ্ধ হন ইসলামী উম্মাহর ঐতিহাসিক কাফেলায়। তারপর রূহানিয়াতের ফল্গুধারায় প্লাবিত হয়ে প্রত্যাবর্তন করেন স্বদেশে।