রমজান হলো কোরআনের মাস

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রমজান হলো কোরআনের মাস, তাই এ মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে, ছবি: সংগৃহীত

রমজান হলো কোরআনের মাস, তাই এ মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র রমজান মাস হলো রোজার মাস। তাকওয়া বা খোদাভীতির মাস। রহমত, বরকত, নাজাত, মাগফেরাতের মাস। বিশেষভাবে কোরআনের মাস।

কোরআনে কারিম রমজান মাসকে ভালোবাসে। রমজান ভালোবাসে কোরআনকে। কোরআন ও রমজান হলো অভিন্ন, মাণিকজোড়। কেননা, স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা নিজেই ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।’-সূরা বাকারা: ১৮৫

বিজ্ঞাপন

ইসলামি থিওলজি বা ধর্মতত্ত্ব অনুযায়ী, রমজান মাসে ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন সংরক্ষিত ফলক বা ‘লাওহে মাহফুজ’ হতে নিকটবর্তী আসমানে নাজিল হয়েছিল। ফলে রমজান পবিত্র কোরআন নাজিল বা অবতরণের সম্মানে সম্মানিত মাস। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে আল্লাহর ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে কোরআনের পুনরাবৃত্তি করতেন। অধিক পরিমাণে কোরআন শুনতেন। তেলাওয়াত করতেন। কোরআন নিয়ে চিন্তা-ফিকির করতেন । কোরআনের ছায়াতলে জীবন কাটাতেন এবং উম্মতকে কোরআনের দিকে আহ্বান জানাতেন ও কোরআনের প্রতি প্রণোদিত করতেন।

কারণ পবিত্র কোরআন সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা নিজেই বলেছেন, ‘আমি এ মোবারক গ্রন্থটি আপনার উপর নাজিল করেছি। যাতে করে মানুষ এর আয়াতসমূহের ব্যাপারে চিন্তা-গবেষণা করতে পারে এবং জ্ঞানবান লোকেরা এর দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।’-সূরা সোয়াদ: ২৯

বিজ্ঞাপন

মানবতার মুক্তিস্বরূপ রমজান মাসে নাজিল হওয়া পবিত্র ঐশী গ্রন্থ আল কোরআন ও রমজানের মাসের মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক হবে, এটাই স্বাভাবিক। রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত, চর্চা ও গবেষণার একটি আলাদা মজা ও আলাদা স্বাদ আছে। রমজান মাস যেন কোরআনের সুবাসে আমোদিত থাকে। ব্যক্তিগত তেলাওয়াত ও তারাবি নামাজের তেলাওয়াতের মাধ্যমে রমজান মাসে নুজুলে কোরআন বা কোরআন নাজিলের অম্লান স্মৃতি যেন প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর মধ্যে জাগরুক হয়।

পবিত্র কোরআনের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ উম্মতের জন্য রেখেছেন। যেমন-

১. তোমরা কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করো। কারণ কোরআন শেষ বিচার দিবসে তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আসবে।

২. তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে, অন্যকে শিক্ষাদান করে।

৩. যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে এবং কোরআন পাঠে দক্ষ হয়, সে সম্মানিত লিপিকার ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে কোরআন পাঠ করে এবং কোরআন পাঠ করতে আটকে যায় (কষ্ট করে করে কোরআন চর্চা ও পাঠ করে), তার জন্য দ্বিগুণ প্রতিদান।

৪. তোমরা দুই উজ্জ্বল আলোকময় সূরা বাকারা এবং সূরা আলে ইমরান তেলাওয়াত করো। কারণ, এ দু’টি সূরা শেষ বিচারের দিবসে দু’টি মেঘখণ্ড অথবা দু’টি সামিয়ানা অথবা দু’টি পক্ষ প্রসারিত পাখির ঝাঁকের রূপে আসবে এবং তার পাঠকারীতে ছায়া দেবে।

পবিত্র কোরআনের প্রতিটি সূরা ও আয়াতের গুরুত্ব, সম্মান, মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনার শেষ নেই। বিশেষত রমজান মাসে কোরআনের তেলাওয়াত ও চর্চার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে মাহে রমজানে মুসলিম উম্মার ঘরে ঘরে চলে কোরআনের আবাদ। ঘরের প্রতিটি সদস্য প্রতিক্ষণ কোরআনের তেলাওয়াতে এমনভাবে মশগুল থাকে, যেন মনে হয় সুমিষ্ট মধু নিয়ে গুঞ্জরণ করছে মৌমাছি।

মুসলমানগণ ব্যক্তিগত ও জাতিগতভাবে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও চর্চার মাধ্যমে এই ঐশী বিধানসমূহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে। কেননা, কোরআন ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ বা সরল/সোজা/কল্যাণের পথ দেখায়। কোরআন অন্তরের নূর বা আলোকরশ্মিস্বরূপ। মানসিক বিভ্রান্তি ও রোগের শেফা বা চিকিৎসা হলো- আল কোরআন। কোরআনের অপর নাম হলো ফোরকান, যা সত্যের পথে চালিত করে। কোরআন মানুষের সৌভাগ্যের দিক-নির্দেশনা, মুক্তির সনদ, জীবন-যাপনের পথে পালনকর্তার বিধানের ভাণ্ডার।

ফলে কোরআনের ছায়াতলে জীবন কাটানোর মানে হলো, কোরআন তেলাওয়াত ও চর্চার মাধ্যমে কোরআনে বর্ণিত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার আদেশ ও নিষেধের অনুসরণ করে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণের অধিকারী হওয়া। তাই রমজানে সর্বক্ষণ কোরআনের সাথে থেকে নিজেদেরকে জোতির্ময় করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য। পবিত্র রমজান মাসের অতি মূল্যবান ও মোবারক সময়ে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের আজমত বুঝে আমল করে আমাদের জীবনকে সৌভাগ্যমণ্ডিত করার কাজে সর্বশক্তি নিয়োজিত করতে আমরা যেন পিছপা না হই।