জামালপুর শাহী মসজিদ: দূরদূরান্তের মানুষ আসেন মান্নত পূরণে
ঐতিহ্যবাহী জামালপুর শাহী মসজিদ। গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের পূর্বপাশে অবস্থিত একটি মসজিদ। মসজিদটির নির্মাণ তারিখ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানা যায় না। অনুমান করা হয়, মসজিদটির বয়স কয়েক শ’ বছর। প্রাচীন মসজিদটি আজও অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে অর্থাভাবে থমকে গেছে নানা ধরণের উন্নয়ন কাজ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ইংরেজ শাসন আমলে মসজিদটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। মসজিদ এলাকায় লোকবসতি না থাকায় বনজঙ্গল আচ্ছন্ন হয়ে মসজিদটি ঢাকা পড়ে যায়। বিগত ৬০ দশকের প্রথম দিকে গাইবান্ধা মহকুমা প্রশাসক হক্কানি কুতুবউদ্দিন নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এসডিও হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় লোকদের কাছে মসজিদটির ইতিকথা শোনেন। লোকজনের কথা শুনে তিনি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মসজিদটি অনুসন্ধান করতে থাকেন।
কিন্তু মসজিদটির জায়গায় বিশাল বট গাজ গজিয়ে ওঠায় মসজিদটি বটবৃক্ষের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। হঠাৎ একদিন প্রচণ্ড এক ঝড়ে বট গাছটি ভেঙে পড়লে স্থানীয় লোকজন মসজিদটি দেখতে পায়। সেই থেকে মানুষ মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদ হিসেবে অবহিত করতে থাকে।
কথিত আছে, মসজিদটি উদ্ধারের কিছুদিন পর সিলেটের কামেল ব্যক্তি হজরত শাহ্ জামাল (রহ.) স্বপরিবারে এ এলাকায় আগমন করেন। তিনি মসজিদটি দেখাশুনা শুরু করেন। সেই থেকে মসজিদটির নামকরণ হয় জামালপুর শাহী মসজিদ।
মসজিদের ইতিহাস প্রসঙ্গে লোকমুখে প্রচলিত আছে, তৎকালীন সময়ে সৈয়দ ভোম আলী ভারতের শিলিকুড়ি থেকে সুলতান মাহমুদের আমলে হজরত খাঁজা মঈন উদ্দিন চিশতির নির্দেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এই এলাকায় এসে হজরত শাহ জামালের সঙ্গে মিলিত হন। সম্ভবতঃ তারাই এই মসজিদ নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ হিসেবে মসজিদটি প্রায় ৭০০ বছর আগে নির্মিত।
এর পর হজরত শাহ জামালের নামানুসারে ইউনিয়ন ও গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে, ‘জামালপুর।’ এই মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে পীরে কামেল হজরত শাহ জামাল (রহ.)-এর মাজার।
মসজিদের জমির কাগজপত্র খতিয়ে দেখা গেছে, ৪০ সনের রেকর্ড অনুযায়ী মসজিদের ১৬ শতক জমির মালিক ছিলেন বড় জামালপুর গ্রামের মরহুম খন্দকার আবদুল মজিদ গং। পরবর্তীতে মসজিদের নামে জমিটি লিখে দেন তারা। ফলে এ মসজিদের দাতা আবদুল মজিদ গং।
জামালপুর শাহী মসজিদের ইমাম মো. আবদুল হালিম ও মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. মাহাবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, মসজিদটি বাহির থেকে অনেক বড় মনে হলেও মসজিদের ভেতরে শুধুমাত্র দুই কাতারে ৬০ জন মুসল্লি নিয়ে নামাজ আদায় করা যায়। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এলাকার লোকজন মসজিদের মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে সামনের দিকে (সংযুক্ত) মসজিদ ভবন নির্মাণ করা হয়েছ।
মসজিদের ২য় তলার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন প্রায় সাতশ’ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
জামালপুর শাহী মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজহার আলী সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতি শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষরা মসজিদে মান্নতের নগদ টাকা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, চাল ও মিষ্টি নিয়ে আসেন এবং পোলাও করে শিন্নি বিতরণ করেন এখানে। কথিত আছে, যে কেউ যে কোনো নিয়তে মান্নত করলে আল্লাহর অশেষ রহমতে তা পূরণ হয়।
তিনি আরও জানান, ধর্মপ্রাণ মানুষের সাহায্য-সহযোহিতা ও মান্নতের অর্থ ইত্যাদি দিয়ে স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে মসজিদ পরিচালনা করা হয়।
মসজিদের ধারাবাহিক সংস্কার কাজ থেকে শুরু করে ইমাম-মুয়াজ্জিনের মাসিক সম্মানি ও অন্যান্য খরচ এই অর্থ থেকে করা হয়।
জামালপুর শাহী মসজিদ কমিটির সভাপতি খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন বার্তা২৪.কমকে জানান, আগের চেয়ে মসজিদটির অনেক প্রসার করা হয়েছে। আরও অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। এ পর্যন্ত ১ম ও ২য় তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৩য় তলা নির্মাণাধীন। এখনও মসজিদের টাইলস, জানালার গ্লাস, অজু খানা, টয়লেট, প্রসাব খানা ও ৩য় তলার কাজসহ অনেক কাজই বাকী রয়েছে কিন্ত অর্থাভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না।