রোজা ভাঙার কারণের সঙ্গে চিকিৎসার কিছু পদ্ধতির সম্পর্ক খুবই স্পষ্ট, যা সবাই বোঝে। কিন্তু চিকিৎসার এমন কিছু পদ্ধতি আছে যার সঙ্গে রোজার সম্পর্ক বেশ জটিল। চিকিৎসার এ জটিল পদ্ধতিগুলো আধুনিককালে উদ্ভাবিত হওয়ায় কোরআন-হাদিসে এমনকি ফিকহ শাস্ত্রের প্রাচীন প্রামাণ্য গ্রন্থাবলীতে এগুলোর হুকুম সরাসরি নেই। কিন্তু মূলনীতি দেওয়া আছে।
সেসব মূলনীতির আলোকে আধুনিক পদ্ধতিগুলোকে বিশ্লেষণ করে সেগুলোর হুকুম নির্ণয় করেছেন নিকটতম সময়ের অনেক প্রথিতযশা ফকিহ ও ফিকহি সংস্থা। তারা এ বিষয়ের ওপর স্বতন্ত্র গ্রন্থও রচনা করেছেন। যেমন ফিকহুন নাওয়াযিল, আলমাওসুআতুত তিব্বিয়্যিা আলফিকিহিয়্যা, আলাতে জাদিদা কে শারয়ি আহকাম ইত্যাদি।
বিজ্ঞাপন
মারকাযুদ দাওয়াহর শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া ‘মাহে রমযানের সওগাত’ নামক পুস্তিকাতে উপরোক্ত উৎসগ্রন্থসমূহ থেকে চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতিগুলোর হুকুম সংকলন করেছেন।
সাধারণ পাঠকদের সুবিধা বিবেচনা করে উক্ত পুস্তিকার আলোকে চিকিৎসা সংক্রান্ত রোজার মাসয়ালাগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো-
বিজ্ঞাপন
রোজা অবস্থায় কানে তেল, ড্রপ বা যেকোনো ঔষধ ব্যবহার করা যাবে। এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না। তদ্রুপ কানে পানি ঢোকলেও রোজা ভাঙবে না।
নাকে ড্রপ, স্প্রে ইত্যাদি যেকোনো কিছু ব্যবহারের পর যদি তা গলায় পৌঁছে বা এগুলোর স্বাদ অনুভূত হয় তাহলে রোজা ভাঙবে। অন্যথায় রোজা ভাঙবে না।
চোখে ড্রপ, সুরমা, মলম ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ অনুভূত হয় তবুও রোজা ভাঙবে না।
ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে। যদি রোজা অবস্থায় এটা ব্যবহারের একান্তই প্রয়োজন পড়ে তাহলে তা ব্যবহার করবে আর পরে এ রোজার কাজা করবে। তবে ব্যবহারের পর সুস্থ থাকলে বাকি দিন অনাহারেই কাটাতে হবে।
পুরুষ বা মহিলার প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কোনো ঔষধ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না। এমনকি উক্ত যন্ত্রে কোনো পিচ্ছিল বা তরল পদার্থ লাগানো থাকলেও রোজা ভাঙবে না।
মলদ্বার দিয়ে কোনো ঔষধ প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে।
রক্ত দিলে বা নিলে কোনোটাতেই রোজা ভাঙবে না। তাই রোজা অবস্থায় ডায়ালাইসিস করা যাবে। তবে রক্ত দেওয়ার কারণে অধিক দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে রোজা অবস্থায় রক্ত দেওয়া মাকরুহ।
ইঞ্জেকশন, ইনসুলিন ও স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না। তবে গ্লুকোজ স্যালাইন খাদ্য-পানির কাজ দেয়; রোজা অবস্থায় মারাত্মক অসুস্থতা ব্যতীত তা নেওয়া মাকরুহ।
ইসলামের প্রচার-প্রসার, বিস্তৃতি ও স্থায়িত্বে ওয়াজ মাহফিলের অবদান ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সর্বস্তরের জনসাধারণকে ইসলামমুখী করার ক্ষেত্রে ওয়াজ মাহফিলের বিশেষ ভূমিকা আছে। কিন্তু আফসোসের বিষয়, বর্তমানে দ্বিনি মাহফিলগুলো তার ঐতিহ্য ও জৌলুস হারানোর পথে এবং ক্রমে তা মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাচ্ছে।
আল্লাহতায়ালা বান্দার ভালো কাজের বিনিময়ে প্রতিদান ও পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। তবে বিনিময় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয়টি নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। কোনো কাজ করার পেছনে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য থাকলে পরিমাণে অল্প হলেও সেটিই তার মুক্তির পাথেয় হিসেবে বিবেচিত হবে। ওয়াজ মাহফিলসহ সব ধরনের ইবাদতে বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমার ঈমান খাঁটি করো, অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’ -মুসতাদরাকে হাকেম : ৪/৩৪১
বর্তমানে ওয়াজ মাহফিল সম্পৃক্ত কমিটি, বক্তা, শ্রোতা বেশির ভাগের পরিশুদ্ধ নিয়তের অভাব অনুমেয়। তাই তিন শ্রেণির উচিত পরিশুদ্ধ নিয়ত নিয়ে কিছু সমস্যা পরিহার করে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা। এক্ষেত্রে বক্তাদের দায় বেশি।
প্রায়ই দেখা যায়, বক্তার কারণে নানাবিধ সমস্যা ঘটছে। বিশেষ করে চুক্তি ও কন্ট্রাক্ট করে বক্তব্য দেওয়া, প্রদর্শনেচ্ছা, সঠিক ইলমের অভাব, ওয়াজের ছন্দ-গান ও কবিতাকে প্রাধান্য দেওয়া, মিথ্যা কল্পকাহিনি বর্ণনা করা, অহংকার (পোশাক, দেহের, কণ্ঠের) করা, কথা ও কাজের হেরফের করা এবং সময় সচেতনতার অভাব ইত্যাদি।
তাই ইসলামি স্কলাররা বলেন, বক্তাদের জন্য করণীয় হলো- বক্তৃতা ও আমলে ইখলাস থাকা, সহিহ ইলমের অধিকারী হওয়া, বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য দেওয়া, বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনি না বলে কোরআন-হাদিসভিত্তিক কথা বলা, আমানতদারির সেঙ্গে উত্তমভাবে লেনদেন করা, ইসলামের বিধানাবলির পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করা, প্রতিশোধপ্রবণতাবিমুখ হওয়া, নির্লোভ তথা খাওয়া-পাওয়ার মনোভাব পরিহার করা ও অন্যের ভুলের সমালোচনা না করে শুধু সঠিক তথ্য তুলে ধরা।
মনে রাখতে হবে, নিজে সৎ কাজে অনুগত না থেকে অন্যদের সৎ কাজে আহবান করা এবং অন্যায় থেকে বিরত না থেকে নিষেধ করা একটি বড় অপরাধ, যার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। এই মর্মে হজরত উসামা বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, যাতে আগুনে পুড়ে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং গাধা যেমন গম পেষার সময় ঘানির চারপাশে ঘুরতে থাকে, অনুরূপভাবে সেও তার নাড়ি-ভুঁড়ির চারপাশে ঘুরতে থাকবে। এ সময় জাহান্নামবাসীরা সেখানে জমা হয়ে জিজ্ঞেস করবে, হে অমুক! তোমার ব্যাপার কী? তুমি না আমাদের সৎ কাজের আদেশ করতে এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করতে? জবাবে সে বলবে, আমি তোমাদের সৎ কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু আমি নিজে তা করতাম না। আর তোমাদেরকে অন্যায় কাজে নিষেধ করতাম, কিন্তু আমি নিজে তা করতাম। -সহিহ বোখারি : ৩২৬৭
বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের গ্রন্থ সম্মাননা ২০২৪ প্রদান ও জুলাই বিপ্লবের স্বরচিত কবিতা পাঠ প্রতিযোগিতা শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে লেখকদের বই প্রকাশের গল্প বলার সুযোগও থাকবে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের উদ্যোগে বিকেল তিনটায় রাজধানীর বাংলা মোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান শুরু হবে।
এর মধ্যে অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট আলেম লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং ফোরামের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবের স্বরচিত কবিতা পাঠ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
ফোরামের ফেসবুক পেজে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নিয়ম জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিকেল ৩টায় কবিতা পাঠ প্রতিযোগিতা শুরু হবে। যথাসময়ে এসে নাম নিবন্ধন করতে হবে।
জুলাই বিপ্লবের ওপর স্বরচিত ছড়া-কবিতা হতে হবে। কবিতা এ-ফোর সাইজের কাগজে লিখে অথবা কম্পোজ করে জমা দিতে হবে। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হবে।
জানা যায়, তরুণ লেখকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম দ্বিতীয়বারের মতো ‘লেখক ফোরাম গ্রন্থ সম্মাননা ২০২৪’ প্রদানের জন্য ফোরাম সদস্যদের কাছে তিন মাস (গত সেপ্টেম্বর ২০২৪) আগে বই আহ্বান করেছে। এ ছাড়া ফোরামের সদস্যদের থেকে যারা সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত, তাদের থেকে ২৩ সালের মধ্যে প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত ৩টি ফিচার/প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি (প্রামাণ্য অনুলিপি) পাঠাতে বলা হয়েছে।
সভাপতি কবি মুনীরুল ইসলাম জানান, ‘সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যথাসময়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। আলেম লেখকদের মিলনমেলা হবে। সিনিয়র-জুনিয়র তারকা লেখকরা উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবের কবিতা পাঠ, আমাদের অনন্য আয়োজন। এর মধ্য দিয়ে জুলাই এবং নতুন বাংলাদেশকে পাঠকের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস হবে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম ইসলামি ধারার তরুণ লেখকদের জাতীয় সংগঠন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কর্মরত এবং সারাদেশে ছড়ানো লেখকদের নিয়ে ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এই সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে সারাদেশের প্রায় পাঁচশ লেখক এই সংগঠনের সদস্য।
হজযাত্রী সমন্বয়, লিড এজেন্সি নির্ধারণ ও মোনাজ্জেম নির্বাচনের সময় বেঁধে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী এজেন্সিসমূহকে এসব কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখা হতে এ সংক্রান্ত পত্র জারি করা হয়েছে।
২০২৫ সালে হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী এজেন্সির কাছে প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সৌদি সরকার ২০২৫ সনের হজে অন্যান্য দেশের জন্য এজেন্সি প্রতি হাজির কোটা দুই হাজার জন নির্ধারণ করেছে। তবে বাংলাদেশের অনুরোধে এদেশের এজেন্সি প্রতি হাজির সংখ্যা সর্বনিম্ন এক হাজার জন নির্ধারণ করেছে।
এ কারণে ২০২৫ সনে অনুমোদিত হজ এজেন্সিসমূহের মধ্যে যে সব হজ এজেন্সির নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা এক হাজারের চেয়ে কম, সেসব এজেন্সির হজযাত্রী স্থানান্তর ও সমন্বয়পূর্বক লিড এজেন্সি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। হজ ও উমরা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২২ (সংশোধিত)-এর ২৬ বিধি অনুযায়ী পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে লিড এজেন্সি নির্ণয়পূর্বক সমন্বয়কারী এজেন্সিসমূহের হজযাত্রীদের ই-হজ সিস্টেমে লিড এজেন্সিতে স্থানান্তর করার বিধান রয়েছে। এছাড়া ২০২৫ সনের হজ প্যাকেজ ও গাইডলাইনের অনুচ্ছেদ ৯(১২) এ বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সমন্বয় কার্যক্রম শেষ হলে সমন্বয়কারী এজেন্সি হতে লিড এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে হজযাত্রীর উড়োজাহাজ ভাড়া বাবদ অর্থ প্রেরণ করবে এবং লিড এজেন্সি তার ব্যবস্থাপনাধীন সব হজযাত্রীর উড়োজাহাজ টিকেটের অর্থ এয়ালাইন্সের বরাবর পে-অর্ডার ইস্যু নিশ্চিত করবে।
মক্কার মসজিদে হারামের বিভিন্ন স্থানে লিখিত আরবি ক্যালিগ্রাফি স্থাপত্য সৌন্দর্যে নতুনমাত্রা যোগ করেছে। পবিত্র কাবার গিলাফ ও দরজায় উৎকীর্ণ ক্যালিগ্রাফি এর অন্যতম। ফলে পবিত্র হজ ও উমরা পালনকারীদের হৃদয় জুড়িয়ে যায় কালো গিলাফে আবৃত পবিত্র কাবা অবলোকন করে। মসজিদে হারামের প্রাঙ্গণে পৌঁছে এক অপার্থিব ভালো লাগায় মোহিত হয়ে থাকে গিলাফে উৎকীর্ণ সোনার সুতোয় বোনা ক্যালিগ্রাফি দেখে। কাবার ভেতরে-বাইরে এই অত্যাশ্চর্য ক্যালিগ্রাফির প্রতি মানুষের আকর্ষণ অপরিসীম ও চিরন্তন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময় কাবার গিলাফে ক্যালিগ্রাফির কথা জানা যায় না। তবে ৪০ হিজরি মক্কা ও তায়েফে প্রাপ্ত উৎকীর্ণলিপি থেকে জানা যায়, আরবি ক্যালিগ্রাফির তখন বেশ উন্নত স্টাইল প্রচলন ছিল। সৌদি আরবের উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উস্তাদ ড. নাসের বিন আলী আল-হারেসি এক গবেষণায় এ তথ্য জানান।
কাবার গিলাফে আরবি ক্যালিগ্রাফির নান্দনিক উপস্থাপনের বিষয়ে রিয়াদের ইমাম বিন সউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া কলেজের উস্তাদ ড. মুহাম্মদ বিন হুসাইন আল মাওজান বলেন, ইতিহাসের তথ্য-উপাত্ত মতে, মিসরের মামলুক সুলতানদের আমলে কাবার ভেতর ও বাইরে আলাদাভাবে গিলাফ আবৃত করা হত এবং তাতে আরবি ক্যালিগ্রাফি দিয়ে অলঙ্কৃত করা হত। মামলুক আমলের ৭৬১ হিজরিতে সুলতান নাসের হাসান বিন মুহাম্মদ বিন কালাউনের সময় কাবার ভেতরের গিলাফের একখণ্ড এখনও সংরক্ষিত আছে।
তবে কাবার গিলাফের ভেতর-বাইরে উভয় অংশে শৈল্পিক এবং নয়নাভিরাম ক্যালিগ্রাফির অলঙ্করণ শুরু করেন তুর্কি উসমানিয় সুলতানগণ। তাদের সময়ে ক্যালিগ্রাফির সবচেয়ে নান্দনিক শৈলী সুলুস ও জালি সুলুসের ব্যবহার শুরু হয়। মামলুক সুলতানদের সময়ে রায়হানি ও মুহাক্কাক শৈলীর কায়রো ধারায় ক্যালিগ্রাফি ব্যবহৃত হতো। তবে কাবার চারপাশে মসজিদে হারামে কুফি কাইরোয়ানি, জাহরি-নাবতি লিপির অলঙ্করণ ছিল।
সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ আলে সৌদ ১৩৪৬ হিজরিতে গিলাফ বা কিসওয়া তৈরির একটি বিশেষ কারখানা নির্মাণের নির্দেশ দেন এবং সে বছরেই অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ক্যালিগ্রাফি সজ্জিত গিলাফ তৈরি করে কাবা ঘর আবৃত করা হয়।
ক্যালিগ্রাফির শৈলী নির্ধারণের জন্য বিশ্বের নামকরা ক্যালিগ্রাফারদের এক সম্মেলন আহ্বান করা হয়, সেখানে সুলুস লিপিকেই সর্বসম্মত রায় দেওয়া হয়। বর্তমানে গিলাফের খ্যাতনামা ক্যালিগ্রাফার মুখতার শিকদার (বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত) এ তথ্য জানান।
কাবার গিলাফের বাইরের কালো কাপড়ে স্বর্ণমণ্ডিত রেশমি সুতা দিয়ে দক্ষ কারিগর দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করা হয়। মুখতার শিকদার বলেন, ঝারনিখ কালি দিয়ে প্রথমে কাপড়ে ক্যালিগ্রাফির আউটলাইন দেওয়া হয়, তারপর কারিগররা হরফের ভেতর রেশমি সুতার মোটা লাইন বসিয়ে স্বর্ণের সুতা দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে হরফ ফুটিয়ে তোলেন। গিলাফের কালো জমিনে স্বর্ণের সুতার ঢেউ খেলানো বুননের ক্যালিগ্রাফির সোনালি আভা এক জান্নাতি আবেশ ছড়িয়ে দেয়।
বাদশাহ ফাহদ বিন আবদুল আজিজের সময় থেকে গিলাফের প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে সৌদি বংশোদ্ভূত আবদুর রহিম আমিন বোখারি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ক্যালিগ্রাফি হিসাবে কোরআন মাজিদের আয়াত, আল্লাহতায়ালার গুণবাচক নাম বিশেষ নকশা আকারে উপস্থাপন করা হয়। হজরে আসওয়াদের ওপর অংশে আল্লাহু আকবর ক্যালিগ্রাফিসহ বর্তমানে গিলাফের অধিকাংশ ক্যালিগ্রাফি মুখতার শিকদারের হস্তলিখিত। কাবার ভেতরের অংশের গিলাফে তিরাজ নামে তেরছা ধরনের বিশেষ বুনন ও কালেমা ক্যালিগ্রাফি করা হয়।
কাবার স্বর্ণমণ্ডিত ধাতব দরোজার ওপর সুলুসলিপিতে ক্যালিগ্রাফি বিদ্যমান। কাবার স্থাপত্য প্রদর্শনিতে প্রাচীন কাঠের নকশা করা দরোজায় মুহাক্কাক লিপিতে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গিলাফে এবং দরোজার ক্যালিগ্রাফিতে বিভিন্ন আয়াত দিয়ে অলঙ্কৃত করা হয়েছে। দরোজার তালা ও চাবি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র আকৃতি এবং গঠনের, এতে সুক্ষ্মভাবে ক্যালিগ্রাফি উৎকীর্ণ দেখা যায়। এমনকি কাবা ঘরের ছাদের ধাতব চৌকোনা আকারের পানি নিঃসরণ নলটির দুই পাশে সুলুসলিপিতে কোরআন মাজিদের আয়াত উৎকীর্ণ করা হয়েছে। এ নলটিও নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবর্তন করা হলেও তাতে যথারীতি ক্যালিগ্রাফি রয়েছেই।
কাবা ঘরের ভেতর চার দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের পাথরের পাতে সুরা ও কালিমা ক্যালিগ্রাফি উৎকীর্ণ আছে। এসব ক্যালিগ্রাফিতে মুহাক্কাক, রায়হানি, সুলুস, কুফি শৈলীর ব্যবহার দেখা যায়। কাবার দরোজা দিয়ে ঢুকে হাতের ডানপাশে হাতিমের দিকের দেয়ালের ডানপাশে বাব আত-তাওবা নামে একটি দরোজা আছে। এটি ধাতব নির্মিত এবং স্বর্ণমণ্ডিত, এতে কোরআনে কারিমের আয়াত ও আল্লাহতায়ালার নাম দিয়ে সুলুসলিপিতে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। বাদশাহ খালিদ বিন আবদুল আজিজের নির্দেশে এতে স্বর্ণ দ্বারা প্রলেপ দেওয়া হয়।
পবিত্র কাবা ঘরে কোরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি দিয়ে সুশোভিত করার মাধ্যমে ইসলামের আধ্যাত্মিক শিল্পকলার যাত্রা শুরু হয়। মানুষ আল্লাহতায়ালাকে চর্ম চোখে দেখতে পায় না, কিন্তু আল্লাহর বাণীর এই নান্দনিক শৈলী অবলোকন করে হৃদয়ে তাকে অনুভব করে। এই বোধ মানুষকে উত্তরোত্তর স্রষ্টায় সমর্পিত ও নিবেদিত হতে প্রেরণা জোগায়। এ ধারা চলবে অনন্তকাল।