রমজানে রাসূলুল্লাহর দানশীলতা
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব মানুষের চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। আর মাহে রমজানে যখন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তার সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি আরও বেশি বদান্যতা প্রকাশ করতেন।
হজরত জিবরাইল (আ.) মাহে রমজানের প্রত্যেক রাতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে কোরআনে কারিম তেলাওয়াত শুনতেন। সহিহ মুসলিম শরিফের ২৩০৮ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাতকালে কল্যাণবহ মুক্ত বায়ুর চেয়ে বেশি দানশীল হতেন।’
মাহে রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতার চরম শ্রেষ্ঠত্বকে আরব কবিগণ এই মর্মে উল্লেখ করেছেন: ‘তিনি পূবালী হাওয়া আর কল্যাণ বায়ুর চেয়ে দানশীল।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাত বা কার্যক্রমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও মহত্তম গুণ হলো তার দানশীলতা। দানশীলতার দিক থেকে পৃথিবীর কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অগ্রগামী হতে পারবে না। এমনকি, তুলনীয়ও হতে পারবে না। কারণ তিনি তার পুরো জীবন ও সম্পদ মানুষ ও মানবতার কল্যাণে দান করেছেন।
ইসলাম ও সিরাতের ইতিহাসে বস্তুনিষ্ঠভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতার বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। এমন বহু দৃষ্টান্তও রয়েছে যে, কেউ কোনো কিছু প্রার্থনা করলে তিনি না করতেন না। এমনকি, তার পরিধেয় কাপড়ও যদি কেউ চাইতো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তা দিয়ে দিতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতার অনেক চমৎকার বিবরণ হাদিসের প্রায় সকল গ্রন্থেই উল্লেখিত হয়েছে। যখন রমজান মাসের আগমন হতো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদারতা ও দানশীলতার মনোভাব দিয়ে রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাসকে স্বাগত জানাতেন। আনসার ও মুহাজিরদের সুযোগ-সুবিধার খোঁজ-খবর করতেন। সবাইকে দানশীলতা অবলম্বনের জন্য তাগিদ দিতেন।
শুধু নিজেই নন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রিয় উম্মতকেও রমজান মাসে দানশীলতা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করেছেন। রমজানে দানশীলতার যে সুযোগ বৃদ্ধি পায়, ইফতার ও সেহেরি দিয়ে মানুষকে আপ্যায়নের মাধ্যমে, তা গ্রহণ করতেও বলেছেন তিনি। রোজাদারকে একটি খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করানোর পাহাড় পরিমাণ নেকির কথাও জানিয়েছেন তিনি।
রমজানে প্রতিটি ভালো কাজ সত্তর গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ মাসে যত বেশি দান, সদকা করা যাবে, তা বহু গুণে বৃদ্ধি পাবে। এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র রমজান মাসে নিজে দানশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রিয় উম্মতকেও দান, সদকা বৃদ্ধির উপদেশ দিয়েছেন। রমজানে রোজা, তেলাওয়াত, জিকির ইত্যাদি নানা আমলের সঙ্গে সঙ্গে জাকাত, দান, সদকা দেওয়ার আমলগুলো করাও সকলের কর্তব্য। এতে আল্লাহর হুকুম পালন করা এবং রমজানের বদৌলতে নেকি বৃদ্ধি পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করা যায়।