রোজার জন্য নিয়তের দরকার আছে কি?

  • মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রমজান রোজা পৃথক পৃথক আমল, সেহেতু প্রতিদিনের রোজার জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত শর্ত, ছবি: সংগৃহীত

রমজান রোজা পৃথক পৃথক আমল, সেহেতু প্রতিদিনের রোজার জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত শর্ত, ছবি: সংগৃহীত

হাদিসে আছে, প্রতিটি আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ নিয়তবিহীন কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে না, তা দ্বারা দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না। তাই প্রতিটি আমল শুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত নিয়ত। অন্য সব ইবাদতের মতো রোজার জন্যও নিয়ত করা ফরজ। রমজান মাসের প্রতিটি রোজা যেহেতু পৃথক পৃথক একেকটি আমল সেহেতু রমজানের প্রতিদিনের রোজার জন্যও পৃথক পৃথক নিয়ত শর্ত।

মনের স্থির সংকল্পকে নিয়ত বলে। নিয়ত করতে হয় মনে মনে। মনের সংকল্পবিহীন নিছক মুখে কিছু আবৃত্তি করার নাম নিয়ত নয়। তবে মনের সংকল্প স্থির হওয়ার পর তা মুখেও বলা যেতে পারে। রোজার নিয়ত নামে যে আরবি গদ সমাজে প্রচলিত আছে তা হাদিসে বর্ণিত হয়নি। এমনকি ফিকহের প্রাচীন প্রামাণ্য গ্রন্থাবলীতেও এ বাক্যের কোনো অস্তিত্ব নেই। অতএব, উক্ত আরবি বাক্যগুলো বলার মধ্যে বাড়তি কোনো সওয়াব ও ফজিলত নেই।

বিজ্ঞাপন

রমজানের রোজার নিয়ত করার শুরুর সময় হলো আগের দিনের সূর্যাস্ত। অর্থাৎ রোববারের রোজার নিয়ত করা যাবে শনিবারের সূর্যাস্তের পর থেকে। শনিবারের সূর্যাস্তের পূর্বের নিয়ত রোববারের রোজার জন্য যথেষ্ট হবে না।

আর রমজানের রোজার শেষ সময় হলো দিনের মধ্যভাগ। অর্থাৎ সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে সমান দু’ভাগ করলে প্রথম ভাগ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নিয়ত করার সুযোগ থাকে। সুবহে সাদেকের সময় যদি হয় ৩টা ৫০ মিনিট আর সূর্যাস্তের সময় যদি হয় ৬টা ৪০ মিনিট তাহলে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট হলো সে দিনের রোজার নিয়তের শেষ সময়। সুবহে সাদেক থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত যদি রোজা ভাঙার কোনো কারণ পাওয়া না যায় তাহলে বেলা ১১টায় রোজার নিয়ত করলেও রোজা হবে। তবে সুবহে সাদেকের পূর্বেই নিয়ত করা উত্তম।

বিজ্ঞাপন

একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম গোত্রের এক লোককে বললেন, মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দাও, যে খাবার খেয়েছে সে যেন বাকি দিন না খেয়ে থাকে। আর এখনও যে কিছুই খায়নি, সে যেন রোজা রাখে। কেননা, আজ আশুরা দিবস। -সহিহ বোখারি: ২০০৭

আগের দিনের সূর্যাস্তের পূর্বেই কেউ অজ্ঞান হয়ে গেল আর পরের দিনের মধ্যভাগের পর জ্ঞান ফিরে পেল তাহলে তার রোজা শুদ্ধ হবে না। কেননা নিয়ত করার সময়ের মধ্যে সে নিয়ত করতে পারেনি।

কেউ সেহরি খেতে পারলা না। এমতাবস্থায় সকাল থেকে দোদুল্যমান থাকল, রোজা রাখবে কিনা। স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছিল না। এমতাবস্থায় যদি রোজা ভাঙার কোনো কারণ পাওয়া না যায় আর দিনের মধ্যভাগের আগেই রোজা রাখার স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে তাহলেও তার রোজা হবে।

রাতে নিয়ত করলে এভাবে মনে মনে সংকল্প করবে যে, আল্লাহর জন্য আজ রোজা রাখব। আর সুবহে সাদেকের পর দিনের মর্ধভাগের পূর্বে নিয়ত করলে মনে মনে এভাবে সংকল্প করবেন, আল্লাহর জন্য আজ রোজা রাখলাম। কোনো কোনো ইসলামি স্কলার মনে করেন, রোজার উদ্দেশ্যে সেহরি খাওয়াই নিয়তের জন্য যথেষ্ট।