আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন, ক্ষমা করেন
রহমত, বরকত, মাগফেরাত, নাজাতের রমজান মাসে মুসলমানদের জন্য আল্লাহর দিকে ফিরে আসার ও তওবা করার মহাসুযোগ সৃষ্টি হয়। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে রমজান রোজাদারদের আল্লাহর দিকে এবং তওবার দিকে ধাবিত করে। রমজানের সাংস্কৃতিক আবহের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে খোদাপ্রেম, আত্মশুদ্ধি ও তওবার প্রেরণা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পবিত্র রমজানের রোজা ও আত্মশুদ্ধির সময়ে ঐশী গ্রন্থ আল কোরআনের একটি অম্লান বাণী মুসলমানদের হৃদয়ে তীব্র দোলা দেয়। মুক্তি ও কল্যাণের আশাবাদ জাগ্রত করে সূরা যুমারের ৫৩ নম্বর আয়াত, যেখানে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছো, তারা আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে কখনও নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার অফুরন্ত ভাণ্ডারের দরজা খুলে যায় পবিত্র রমজান মাসে। রমজান মাসে দিনে রোজা আর রাতে নামাজের মাধ্যমে আমরা রহমত ও ক্ষমার সুযোগ পেয়ে থাকি। কারণ, মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিস থেকে জানা যায়, ‘মহান আল্লাহ রাতের বেলা তার হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের অপরাধীরা তওবা করতে পারে, আর তিনি অনুরূপ দিনে তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যাতে অপরাধীগণ তওবা করতে পারে। এমন চলতে থাকে যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হয়।’-সহিহ মুসলিম: ২৭৫৯
আল্লাহতায়ালার ক্ষমাশীলতার সীমা-পরিসীমা নেই। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর ক্ষমার মহাসমুদ্রের কথা বার বার উল্লেখিত হয়েছে। মহিম্বান্বিত সত্তা! আমাদের সর্বদা অপরাধ সত্ত্বেও আমাদের দান করেন, ক্ষমা করেন। বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধ করতে থাকে এবং অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করে, আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করতে থাকেন। কারণ ক্ষমা করার ক্ষমতা ও এখতিয়ার একমাত্র আল্লাহর রয়েছে। কারণ তিনিই একমাত্র মালিক সারা জাহানের। অতএব তারই (মালিকের) রয়েছে ক্ষমার মহান গুণ ও ক্ষমতা।
অতএব অপরাধে আকীর্ণ মানুষের উচিত মহান সৃষ্টিকর্তা ও মালিক আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে ক্ষমা ভিক্ষা করে নেওয়া। সূরা আলে ইমরানের ১৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, সাথে সাথেই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা, আল্লাহতায়ালা ছাড়া আর কে আছে যে গোনাহ ক্ষমা করতে পারে? তদুপরি এরা জেনে বুঝে এদের গোনাহের ওপর অটল হয়ে বসে থাকে না।’
অতএব অপরাধ ও ভুলের জন্য দ্রুত অনুশোচনা ও তওবা কাম্য। এতে মানুষ ভুল থেকে শুদ্ধ হয়। পরিশুদ্ধি লাভ করে। পাপের বা ভুলে ওপর অটল থাকলে অজ্ঞতা, অন্ধকারতা ও গোমরাহি মানুষকে বেষ্টনি দিয়ে রাখবে। কিন্তু খালেস তওবা করা হলে নিষ্পাপ হওয়ার সুযোগ থাকে। সঠিক পথের দিশাও পাওয়া যায় তাওবা, অনুশোচনার মাধ্যমে।
আল্লাহতায়ালার অনুগত বান্দার লক্ষণ হলো, তারা কখনোই গোনাহের অটল হয়ে বসে থাকে না। ভুল করলেও ভুল বা অপরাধের স্বীকারোক্তি দিয়ে ক্ষমা চায়। অপরাধ করলে লজ্জিত হয়। আল্লাহ এমন অনুতপ্ত, লজ্জিত, তওবাকারীকেই ভালোবাসেন, ক্ষমা করেন।
একটি হাদিসের শিক্ষা এই প্রসঙ্গে আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতেহ হবে, যা সুনানে তিরমিজির ৩৫৪৫ নম্বর হাদিস রূপে সংযোজিত রয়েছে, ‘সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান মাস পেলো, অথচ নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারলো না।’
রমজানে এবং জীবনের সর্বক্ষণ আল্লাহতায়ালার অসীম ক্ষমার ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করা হবে মুসলিমের প্রধান কর্তব্য। রমজান মাস পেয়ে নেক আমল ও তওবা দ্বারা ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারার মধ্যেই নিজের সফলতা অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত।