রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত সওয়াব ও কল্যাণে ভরপুর
ফজিলত ও বরকতময় রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত সওয়াব ও কল্যাণে ভরপুর। রমজানের সওগাত আমাদেরকে বার বার আমলে ও আখলাখে রমজানকে সুষ্ঠ-সুন্দরভাবে পালন করার আহ্বান জানায়। অলস ও অহেতুক বসে বসে রমজান অতিবাহিত করলে মোবারক এই মাসের পরিপূর্ণ কল্যাণ ও সফলতা হাসিল করা সম্ভব হবে না।
আমলের কথা বা সুকর্মের বিষয়ে কোরআনে বার বার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। জ্ঞানীদের জন্য বহু নিদর্শন ও দৃষ্টান্ত পবিত্র কোরআনে বার বার উল্লেখিত হয়েছে। বহু জাতির উত্থান-পতনের ঘটনাসমূহের মাধ্যমে মানব জাতিকে সঠিক পথনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সূরা ও অধ্যায়ে।
কোরআন হলো উপদেশ ও হেদায়েত। কিন্তু সেই উপদেশ, হেদায়েত, সঠিক পথের দিশা বিনা চেষ্টা ও শ্রমে পাওয়া যাবে না। গভীর চর্চা ও অধ্যয়নের মাধ্যমে শিখতে হবে ও আত্মস্থ করতে হবে পবিত্র কোরআনের আলোময় শিক্ষাগুলো।
পবিত্র ঐশী গ্রন্থের শিক্ষাগুলো গ্রহণ করার জন্য মুসলমানগণ উদ্যোগী না হলে উপদেশ, হেদায়েত, সঠিক পথের দিশা তথা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের মূলমন্ত্র কেমন করে পাওয়া সম্ভব হবে? পরিশ্রম ও চেষ্টা ছাড়া তো কিছুই শেখা বা পাওয়া যায় না। নিজেকে উন্নত, সুশিক্ষিত, সফল ও কল্যাণমণ্ডিত করতে হলে নিরন্তর চেষ্টা ও চর্চা করতে হবে। পবিত্র কোরআনের সূরা রাদের ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করেছেন,
‘নিশ্চয় আল্লাহ ওই পর্যন্ত কোনো জাতির (ভাগ্য/অবস্থা) পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের (ভাগ্য/অবস্থা) পরিবর্তন করে।’
অতএব নিজের ভাগ্য/অবস্থা বদলের জন্য নিজে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা করে কাজে নেমে গেলেই সফলতা আসবে। অলস ও অকেজো বসে থাকলে সফলতা কস্মিনকালেও আসবে না।
এই যে আমাদের সামনে দিয়ে রহমত, বরকত, মাগফেরাত, নাজাতের মহিমান্বিত মাস রমজান চলছে, আমরা বসে থাকলে, এ মাসের ফজিলতগুলো কেমন করে হাসিল করবো? আলস্য, হতাশা, বিমুখতার কারণে অচল, অকর্মণ্য হয়ে বসে থাকলে রমজানের সীমাহীন সুযোগ ও সওয়াবের অংশীদার হওয়া কেমন করে সম্ভব হবে? রমজানের পবিত্র ও মূল্যবান সময়ে প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিজের কর্ম ও তৎপরতা সম্পর্কে আত্মসমীক্ষা ও আত্মসমালোচনা করা।
প্রতিটি মুসলমানের জানা আছে যে রমজান কয়েকটি বিশেষ কারণে শ্রেষ্ঠ মাসের একটি। কারণ:
১. রমজানে ইসলামের অন্যতম রোকন বা স্তম্ভ সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে।
২. কোরআন নাজিলের কারণে কোরআনের মাস হিসেবে রমজান সম্মানিত।
৩. এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সহিহ মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যখন রমজান মাস আসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।’
৪. রমজানে রয়েছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ‘লাইলাতুল কদর’। রমজানে এমন একটি রাত আছে, যাকে কোরআনে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ রাতের প্রশংসায় আল্লাহতায়ালা একটি স্বতন্ত্র সূরা পবিত্র কোরআনে নাজিল করেছেন। সেই সূরা কদরে বলা হয়েছে, ‘কদরের রাত হাজার মাস (তথা চুরাশি বছর চার মাস) থেকেও উত্তম।’
৫. রমজানে রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। রমজানে রোজাদারের দোয়া কবুল করা হয়। দিনে-রাতে যে কোনো সময় রোজাদারের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। বিশেষত ইফতার সামনে রেখে দোয়া কবুলের বিষয়ে বহু বর্ণনা রয়েছে। রমজানে আল্লাহতায়ালা অধিকহারে বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। মুসনাদে আহমাদের একটি হাদিসে দোয়া কবুল ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি বিষয়ে বলা হয়েছে।
৬. রমজান গোনাহ মাফের মাস। এ মাসে আল্লাহ বান্দার গোনাহ মাফ করেন। রমজানে অধিক তওবা ও আমলের মাধ্যমে গোনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। রমজান পেয়েও গোনাহ মাফ করাতে না পারা ব্যক্তিকে ‘হতভাগ্য’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৭. এ মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তি আদায়ের মাস। রমজানের সঙ্গে নাজাত, মাগেফেরাত সম্পর্কিত। আমল ও রহমত আর বরকতের সঙ্গে সঙ্গে মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার সুযোগ রমজান মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অন্যতম।
৮. রমজানে আমলের সওয়াব বা প্রতিদান বহু গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নফল ইবাদতের সওয়াব অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য করে দেওয়া হয়। এমনকি, রমজানের ওমরার সওয়াব হজের সমতুল্য করে দেওয়া হয়। আবু দাউদ শরিফের ১৯৯১ নম্বর হাদিস এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজান মাসে ওমরা পালন করা আমার সঙ্গে হজ করার সমতুল্য।’
অতএব পবিত্র মাহে রমজানের সব ধরনের কল্যাণ হাসিলের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোই প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর একান্ত কর্তব্য হওয়া উচিত।