মাহরাম ছাড়া নারীর হজ কতটুকু শুদ্ধ?
পুরুষের চেয়ে একটি শর্ত বেশি পালন সাপেক্ষে নারীর জন্য হজ ফরজ। আর তাহলো- ‘মাহরাম।’ মাহরাম ছাড়া নারীর জন্য হজপালনে বাধ্যবাধকতা নেই। সে যতো সম্পদশালীই হোক না কেন। তবে নারীদের হজ পালন প্রসঙ্গে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
মাহরাম কারা?
নারীর জন্য প্রথম মাহরাম হলো- স্বামী। অতঃপর যাদের সঙ্গে ইসলামি বিধান মোতাবেক দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েজ এবং যাদের সঙ্গে বিয়ে হারাম। ইসলামের পরিভাষায় তারাই নারীর জন্য মাহরাম। এ সব লোকদের সঙ্গে সামর্থ্যবান নারীরা হজে গমন করতে পারবেন।
হজ পালনে স্বামীর অনুমতি
কোনো নারীর ওপর যদি হজ ফরজ হয় এবং স্বামী ছাড়াও তাকে নিয়ে হজের যাওয়ার মতো মাহরাম থাকে; আর স্বামী যদি তার স্ত্রীকে হজে যাওয়ার অনুমতি না দেয়- সেক্ষেত্রে নারীর করণীয় সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আলি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোনো মানুষের আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য তো কেবল ভালো কাজের জন্য।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
সুতরাং মাহরাম থাকলে নারীর হজে যাওয়ার জন্য স্বামী অনুমতি না দিলেও হজ আদায় করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে স্বামী অনুমতি ছাড়াই নারী হজে যেতে পারবেন।
নারীদের হজ পালন বিষয়ে ইমামদের বক্তব্য
হজরত ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর মতে, নারীর হজ ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো- ‘মাহরাম।’ মাহরাম না থাকলে সম্পদ যতই থাকুক না কেন, নারীর ওপর হজ ফরজ হবে না।’ -বাদায়িউস সানা
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো নারী কোনো পুরুষের সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ব্যতিত সফর করবে না।’
এক সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমার স্ত্রী হজ করতে যাচ্ছে আর আমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজে যাও।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক (রহ.)-এর মতে, ‘নারীর ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য ‘মাহরাম’ শর্ত নয়। বরং নারীর হজ পালনে শর্ত হলো- তার (হজে গমনকারী নারীর দীর্ঘ সফরের) নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়। সফরের পথ যদি নিরাপদ হয় তবে মাহরামবিহীন একজন নারী একদল মাহরামওয়ালী নারীর সঙ্গে হজে যেতে পারবে।’
হজরত আদি ইবনে হাতেম (রা.) আনহু বর্ণনা করেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে আদি! যদি তোমার জীবনকাল দীর্ঘ হয়, তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে, ইরাকের হীরা অঞ্চল থেকে একজন নারী একাকী উটের হাওদায় বসে কাবা তওয়াফ করবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবে না।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
ইসলামি আইন বিষয়ের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হেদায়া’য় এসেছে, ‘কোনো নারী যদি মাহরাম ছাড়া হজ করে তবে ওই নারীর হজ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু মাহরাম ব্যতিত হজের দীর্ঘ সফর করার কারণে ওই নারী গোনাহগার হবেন।’
আবার কেউ কেউ বলেন, ‘নারীর উচিত মাহরাম পাওয়ার জন্য জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি কোনো মাহরাম না পান তবে তিনি নিজে হজে না গিয়ে অন্যের মাধ্যমে বদলি হজের ব্যবস্থা করবেন। আর এটাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।’
উল্লেখ্য যে, নারীদের হজের এ শর্তাদি ওমরার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
শরিয়ত কী বলে?
সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় বর্তমান সময়ে হজ আদায়ে নারীর জন্য মাহরাম একান্ত আবশ্যক। মাহরাম ছাড়া কোনো নারীর পক্ষে পর্দা মেনে হজ সম্পাদন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই মাহরাম ব্যতিত কোনো নারীর জন্যই হজে যাওয়া জায়েজ নয়। এতে সওয়াবের পরিবর্তে গোনাহ হবে। হজের সফর দীর্ঘদিনের হয়। এ সফর মাহরাম ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণও বটে।
এখন প্রশ্ন হলো- মাহরাম ছাড়া কোনো নারী হজ আদায় করলে সেটা কী হবে। এক্ষেত্রে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- তার হজ আদায় হয়ে যাবে মাকরুহে তাহরিমির সঙ্গে।
অনেক সময় দেখা যায়, কোনো নারীর তার নিজের মাহরামের সঙ্গে হজে না যেয়ে মাহরামসহ হজে যাচ্ছেন এমন নারীর সঙ্গে হজে যান। তাদের ক্ষেত্রেও একই হুকুম। অর্থাৎ তারা মাহরাম ছাড়াই হজে যাচ্ছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। ইসলামের বিধান হলো- কোনো নারী কোনো নারীর মাহরাম হতে পারে না।
রিয়াদ থেকে প্রকাশিত ফতোয়ায়ে লাজনায় বলা হয়েছে, `যে নারীর মাহরাম নেই সে মহিলার ওপর হজ ফরজ নয়। এটা সুফিয়ান সাওরি, হাসান বসরি, ইবরাহীম নাখয়ি, ইমাম আহমদ, ইসহাক, ইবনে মুনজির ও ইমামে আজম হজরত আবু হানিফার অভিমত। আর এটাই সঠিক।’ -ফতোয়ায়ে লাজনা
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল্লাহ বিন বাজসহ কয়েকজন বিশ্ববরেণ্য মুফতি এ ফতোয়ায় স্বাক্ষর প্রদানের মাধ্যমে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। -ফতোয়ায়ে লাজনা