অন্যের বাসার খাবারে ‘ওদের’ সেহেরি-ইফতার
বছর চারেক আগে মাকে হারিয়েছে শিশু আরিফুল। তখন থেকেই মায়ের স্নেহবঞ্চিত আরিফুল মাদরাসায় পড়াশোনা করছে। আরবি প্রাথমিক শিক্ষা শেষে এখন কোরআনে কারিমের হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন তার। আট বছর বয়সী এ শিশু নামাজ-রোজাও নিয়মিত আদায় করেন।
এই মাহে রমজানে বুক ভরা আনন্দ আর তৃপ্তি নিয়ে আরিফুল সেহেরি ও ইফতার করতে পারেন না। কারণ প্রতিদিনই তাকে অন্যের বাসার (লজিং) খাবারে সেহেরি ও ইফতার সারতে হয়। এতে বেশিরভাগ দিনেই ওর কপালে খুব সাদামাটা খাবার জোটে।
আরিফুলের মতো ছোট-বড় নানা বয়সী আরও ৩২ শিশু অন্যের বাসায় সেহেরি ও ইফতার করেন। তাদের ভাগ্যে সেহেরি ও ইফতারে ভালো খাবার খুবই কম জোটে। কারণ নদীবেষ্টিত গ্রামের সাধারণ মানুষরাই তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকেন।
রংপুর মহানগর থেকে অন্তত ১৩ কিলোমিটার দূরে তিস্তা নদীবেষ্টিত গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়ন। এখানকার দক্ষিণ হাবু (কিসামত) হাফিজিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং এ আরিফুলের মতো অনেক অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশুরা পড়ালেখা করছেন।
আধাপাকা টিনসেটে তৈরি এই মাদরাসায় ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৩৩ জন শিশু রয়েছে। এরা কায়দা, আমপারা ও কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা শিক্ষাও নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে রহমতুল্লাহ্ নামে একজন হাফেজে কোরআন সেখানে শিক্ষকতা করছেন।
সারা বছরের মতো রমজান মাসেও এই মাদরাসার ছাত্রদের অন্যের বাসায় গিয়ে খেয়ে আসতে হয়। তবে খুব দূরে কারও লজিং হলে, সেখান থেকে খাবার আগে-ভাগেই এনে রাখেন অনেকে।
আল-আমিন সাইফি নামের এক ছাত্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমাদের পরিবারে অভাব অনটন থাকায় লিল্লাহ্ বোডিংয়ে ভর্তি হয়েছি। এখানে পড়ালেখার মান ভালো। স্থানীয়রা থেকে শুরু করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সবাই আন্তরিক। ওনারাই আমাদের লজিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেহেরি ও ইফতারের সময় আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খেয়ে আসি।'
আরেক ছাত্র শফিউল ইসলাম বার্তা২৪.কম বলেন, 'আল্লাহ্ রিজিকে যা রেখেছেন, তাই তো খেতে হবে। আমরা অন্যের বাসায় গিয়ে খাই কিন্তু রমজানের আনন্দ তৃপ্তি পাই না। আমরা ৩৩ জন একসাথে বসে খেতে পাই না। তবে কখনও কখনও মাদরাসায় বিভিন্নজনের দেওয়া ইফতার সবাই মিলে একত্রে খাই।'
২৮ বছরের পুরোনো দক্ষিণ হাবু (কিসামত) হাফিজিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ্ বোডিংটি এভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে। গঙ্গাচড়া উপজেলাসহ লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলার বিভিন্ন এলাকার এতিম, অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের ছাত্ররা এখানে পড়ালেখা শিখছেন বলে জানান শিক্ষক হাফেজ রহমতুল্লাহ্।
স্থানীয় সমাজকর্মী ও সংগঠক মিজানুর রহমান লুলু বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'গ্রামবাসীর সহযোগিতায় মাদরাসাটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানকার ছাত্রদের জন্য লজিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রমজান মাসে বিভিন্নজনের পাঠানো খাবার দিয়ে ইফতার হয়ে থাকে।'