বন্ধের পথে বানিয়াচং তাজবিদুল কোরআন মাদরাসা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তাজবিদুল কোরআন মাদরাসায় পড়াশোনা করছেন শিক্ষার্থীরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

তাজবিদুল কোরআন মাদরাসায় পড়াশোনা করছেন শিক্ষার্থীরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

সহিহ শুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন শিক্ষার বিশ্বস্ত ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান তাজবিদুল কোরআন মাদরাসা। এখানে কেরাতের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সদরের পাইকপাড়া খাকশীরি গ্রামে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি এখন ধ্বংসের মুখে। আর্থিক টানাপোড়ানের কারণে ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতার বিকল্প দেখছেন না প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।

১৯৮৫ সালে বানিয়াচং সদরের পাইকপাড়া খাকশীরি গ্রামে বিশিষ্ট কারি মো. সালাউদ্দিন দ্বীনি শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষার্থীদের সামান্য বেতন ও এলাকাবাসীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুদানে পরিচালিত হয়ে আসছে মাদরাসাটি। এই মাদরাসা থেকে দেশবরেণ্য অনেক কারি শিক্ষা নিয়েছেন। নিয়মিত শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রতি রমজান মাসে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই মাদরাসায় কেরাত প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা কারি সালাহউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ছেলে কারি মাওলানা রাফি উদ্দিন মাদরাসাটির হাল ধরেন। বর্তমানে ১৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর তাদের পাঠদানের জন্য রয়েছে ১৩ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী।

বর্তমানে নানা সমস্যা জর্জরিত গুরুত্বপূর্ণ এই মাদরাসাটি। জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে মাদরাসার ভবন। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে ক্লাসরুমে ভেসে যায়। শ্রেণি কক্ষের অভাবে কখনও খোলা আকাশের নিচে আবার কখনও অন্যত্র ঘর ভাড়া নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করতে হচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করা সস্তব হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে নূরানি বিভাগের শিক্ষক হাফেজ শফিউল ইসলাম বলেন, ‘মাদরাসাটির অবস্থা এখন করুণ। জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এছাড়া কখনও খোলা আকাশের নিচে আবার কখনও অন্য স্থানে ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।’

কেরাত বিভাগের শিক্ষক কারি আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আর্থিক দূরবস্থার কারণে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। একইসঙ্গে আমরা শিক্ষকরা সামান্য টাকা বেতনে এখানে চাকরি করছি। কিন্তু তাও ঠিকভাবে পাই না। ফলে আমাদেরকেও পরিবার-পরিজন নিয়ে খারাপ অবস্থা কাটছে।’
তিনি বলেন, ‘দ্বীন শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি-বেসরকারি অনুদানের বিকল্প নেই।’

কেরাত বিভাগের শিক্ষক কারি তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘৫০ জন নারী শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের জন্য নারী শিক্ষক মাত্র ৩ জন। ফলে পাঠাদানে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমরা আশা করব দ্বীন শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন।’

এ ব্যাপারে মাদরাসার মুহতামিম কারি মাওলানা রাফি উদ্দিন বলেন, ‘মাদরাসাটি নিয়ে আমার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিলো। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এই মাদরাসাটিতে একদিন পাঁচ তলা একটি ভবন হবে। কিন্তু তার স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। উল্টো অর্থের অভাবে মাদরাসাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি অন্য এক জায়গায় চাকরি করি। ওই চাকরিতে যে বেতন পাই তা দিয়ে পরিবার চালানোই দায় হয়ে গেছে। এর মধ্যে মাদরাসাটিতে অনুদান দেওয়া কমে গেছে। এ অবস্থা সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা না পেলে মাদরাসাটি একদিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’