‘শান্তির শহর’ হারার
হজরত বেলাল (রা.) ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন। তার নাম মুসলমানমাত্রই জানেন। এ মহান সাহাবি ছিলেন ইথিওপিয়ার অধিবাসী। শুধু তিনি নন; যে ১৮ বছরের বালক রোমানদের পরাজিত করেন, সেই উসামা বিন যায়েদ (রা.)ও ছিলেন ইথিওপিয়ান।
আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইথিওপিযা। উঁচু পর্বত আর মরুভূমি দিয়ে গড়া ১১ লাখ ৪ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি রুক্ষ দেশ এটি। ইথিওপিয়ার মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মুসলিম। বাকিরা খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী।
ইথিওপিয়ার পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত প্রাচীন প্রাচীরঘেরা একটি শহরের নাম হারার। শত শত মসজিদ আর মাজারের শহর এটি। তাই হারারকে ইসলাম ধর্মের চতুর্থ পবিত্রতম শহর হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকে। এ শহরের সবচেয়ে বড় মসজিদের নাম- জুম্মা মসজিদ।
শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা আর পুরোনো ঐতিহ্য লালনের কারণে কেউ কেউ শহরটিকে অভিহিত করেন জীবন্ত জাদুঘর হিসেবেও।
হারারকে শান্তির শহর নামে অভিহিত করা কয়। হারারের রাস্তা আর সরু অলিগলিগুলোতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মসজিদ আর মাজার। এই শহরকে অনেকেই মক্কা, মদিনা ও জেরুজালেমের পর ইসলাম ধর্মের চতুর্থ পবিত্রতম শহর বলে বিবেচনা করেন। কারণ, হারারের স্থানীয়দের দাবি- এই অঞ্চলের মানুষ মদিনার বাসিন্দাদেরও আট বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারীরা ষষ্ঠ শতাব্দীতে মক্কায় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে এখনকার এই ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া অঞ্চলে হিজরত করে চলে আসেন।
শতাব্দীর পর শতাব্দী শহরটিতে ইসলামি পণ্ডিতরা বসবাস করে আসছেন। এটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রও বটে। শহরের বড় বড় বাজারগুলোতে চোখে পড়ে মহিলারা রংবেরংয়ের কাপড় আর মসলার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সুপ্রাচীনকাল থেকেই হারারের সঙ্গে বাণিজ্য চলে আসছে হর্ন অব আফ্রিকার, মধ্যপ্রাচ্যের, ভারতের- এমনকি চীনেরও।
হারার শহর তার ঐতিহ্যের বেশিরভাগটাই ধরে রেখেছে। এর সমৃদ্ধশালী মুসলিম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এখনও বহমান। জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বিষয়টিকে একটি ‘বিরল উদাহরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
যে কারণে স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, শিল্প-সংস্কৃতির বাতিঘর আর ধর্মীয় সম্প্রীতির লীলাভূমি হিসেবে আফ্রিকা মহাদেশের জন্য হারার শহরের দেওয়ার আরও অনেক কিছুই আছে।
ইথিওপিয়াতে ৮০টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত। তন্মধ্যে ওরোমো, তিগ্রিনিয়া, গুরাগে, ওয়েলামো, আফার, সোমালি ও আরবি ভাষা উল্লেখযোগ্য।
তবে ইথিওপিয়ার জনগণের প্রায় এক-চতুর্থাংশের মাতৃভাষা আমহারিক। এটি সমগ্র ইথিওপিয়ার সার্বজনীন ভাষা হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রচলিত।
সেই আমহারিক ভাষায় এবার পবিত্র কোরআন অনুবাদ প্রকাশ পেলো। তুরস্কের ধর্মীয় সংস্থার ব্যবস্থাপনায় পবিত্র কোরআনের এই অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নতুন এ ভাষায় প্রকাশিত ১৫ হাজার কোরআনের কপি আমহারিক ভাষাভাষীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
তুরস্কের ধর্মীয় সংস্থার পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬৭টি দেশের বিভিন্ন ভাষায় কোরআন অনুবাদ ও বিতরণ করা হয়েছে।