আরও ৫ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা চায় হজ এজেন্সিগুলো

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কাবা প্রাঙ্গণে হজযাত্রীদের একাংশ, ছবি: সংগৃহীত

কাবা প্রাঙ্গণে হজযাত্রীদের একাংশ, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজযাত্রার জন্য প্রাক-নিবন্ধনের পর মৃত্যু ও অসুস্থতাসহ নানা কারণে যারা হজপালনে সৌদি আরব যেতে পারেন না, তাদের পরিবর্তে অন্যদের হজপালনের সুযোগকে রিপ্লেসমেন্ট বা প্রতিস্থাপন বলে। জাতীয় হজ ও ওমরা নীতিমালা অনুযায়ী মৃত্যু বা মারাত্মক অসুস্থতাজনিত কারণে নিবন্ধিত কেউ হজে যেতে না পারলে তার পরিবর্তে অন্য কাউকে হজে পাঠানোর জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় অনুমতি দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে এজেন্সিকে ওই হজযাত্রীর অসুস্থতার পক্ষে চিকিৎসকের সনদপত্র অথবা মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর সনদপত্র জমা দিতে হবে। সৌদি দূতাবাস কর্তৃক হজ ভিসা দেওয়া বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ফ্লাইট চালু সাপেক্ষে যাত্রীদের রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ রয়েছে।

তবে হজ সেবা সংশ্লিষ্ট অনেকেই বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানিয়েছেন, নীতিমালায় যাই থাকুক, রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে হজ এজেন্সিগুলোকে বাড়তি কিছু সুবিধা দেওয়া হয়। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। যেমন নীতিমালায় ৫ শতাংশ হারে প্রতিস্থাপনের কথা বলা হলেও মন্ত্রণালয় বিশেষ সার্কুলার জারি করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে এই সুবিধা দিয়ে থাকে। চলতি বছরও ১০ শতাংশ হারে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তার পরও কিছু এজেন্সি দাবি করছেন আরও ৫ শতাংশ সুবিধার।

বিজ্ঞাপন

চলতি হজ মৌসুমে ইতোমধ্যে এজেন্সিগুলোকে প্রতি ১০ শতাংশ হারে প্রতিস্থাপনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে তা নির্ধারিত সময়ের জন্য হওয়ার কারণে কিছু এজেন্সি তখন এই সুবিধা নিতে পারেনি। এখন এজেন্সিগুলো আরেক দফায় এই সুযোগ চায়। প্রতিস্থাপনের সুবধিা না পাওয়ার কারণে অনেক এজেন্সি এখনও সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করে তাসরিয়ার অনুমোদন নিতে পারছে না। এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ও গত কয়েক দিন কয়েক দফায় এজেন্সিগুলোকে তলব করে তাদের সর্বশেষ অবস্থান জানার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ প্রায় ৪০টি এজেন্সিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় ডেকেছিল।

এ বিষয়ে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেছেন, আমরা শুরুতেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক হজযাত্রীকে রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেওয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় দুই দফায় আমাদের হজযাত্রীদের ১০ শতাংশ করে রিপ্লেমেন্টের সুযোগ দিয়েছে। এখন যারা হজযাত্রীদের পাঠানোর ব্যাপারে তথ্য দিতে পারছে না তাদেরকে ডেকে প্রকৃত অবস্থা জানার চেষ্টা করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, রিপ্লেমেন্টের জন্য নতুন করে অনুরোধ করার কিছু নেই। আমরা আগেই অনুরোধ করে রেখেছি সেটি বিবেচনায় রেখে ধর্ম মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা আশা করি।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন এজেন্সি মালিক রিপ্লেসমেন্ট সুবিধার বিষয়ে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আসলে আগের বছর ১৫ শতাংশের বেশি রিপ্লেসমেন্ট দেওয়া হয়েছে তিন দফায়। এবারও দুই দফায় সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সময় নির্ধারিত থাকা কারণে পরে যাদের রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য আবার সুযোগ দেওয়া দরকার। এ ছাড়া দেখা গেছে, অনেকে শতকরা হারে সে সংখ্যায় রিপ্লেসমেন্টের সুবিধা পেয়েছে তার প্রকৃত রিপ্লেসযোগ্য হজযাত্রীর সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। ফলে সে আরেক দফায় সুবিধার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।

তাদের দাবি, যারা হজের জন্য প্রাক-নিবন্ধন করেছেন তাদেরই তো রিপ্লেসমেন্ট দেওয়া হবে। এতে কোটা খালি থাকা বা সরকারের লাভ-লোকসানের কিছু নেই। বরং কোনো এজেন্সি তার হজযাত্রী পাঠাতে না পারলে তার বাড়ি ভাড়ার টাকা এমনকি বিমানের টিকিটের টাকাসহ ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আর ওই সব হজযাত্রীর কোটাও খালি যাবে। ফলে সব কিছু বিবেচনা করে সর্বশেষ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেওয়া উচিত।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য এবার সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার কারণে হজ ফ্লাইট নিয়ে কোনো ঝামেলা এখন পর্যন্ত হয়নি। আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে হজযাত্রীদের নামে বিমানের টিকিট নিশ্চিত করাসহ হজ অফিসে পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা নিশ্চিত করার বিষয়টি আগেই নিশ্চিত করার অংশ হিসেবেই দফায় দফায় এজেন্সিগুলোকে ডেকে তাদের সর্বশেষ তথ্য জানছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এখনও কিছু এজেন্সির সৌদি আরবের বাড়ি ভাড়া ও তাসরিয়ার ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তথ্য না থাকায় প্রকৃত অবস্থা জেনে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানা গেছে মন্ত্রণালয় সূত্রে।

উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি মিলে এ বছর বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী যাওয়ার কথা। ৫৯৮টি বেসরকারি এজেন্সি এ বছর হজ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব গেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স হজযাত্রীদের পরিবহন করছে। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ১০ আগস্ট পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ১৭ আগস্ট এবং শেষ ফিরতি ফ্লাইট ১৫ সেপ্টেম্বর।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হজপালনের জন্য সৌদিতে যাওয়া বাংলাদেশি মধ্যে চার পুরুষ ও একজন নারী ইন্তেকাল করেছেন।