এজেন্সির প্রতারণা: মক্কায় ভোগান্তিতে ডাক্তার দম্পতি

  • জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শহিদুল ইসলাম সহিদ, পবিত্র হজপালন করতে এসে হজ এজেন্সির প্রতারণা আর বঞ্চনায় ভেঙে গেছে তার মন। ছবি: বার্তা

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শহিদুল ইসলাম সহিদ, পবিত্র হজপালন করতে এসে হজ এজেন্সির প্রতারণা আর বঞ্চনায় ভেঙে গেছে তার মন। ছবি: বার্তা

মক্কা মোকাররমা (সৌদি আরব) থেকে: অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শহিদুল ইসলাম সহিদ। বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির সদ্য সাবেক মহাসচিব। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতালের) একাডেমিক পরিচালক। জীবনে কত হাজার রোগীর ভেঙে যাওয়া হাত-পায়ের হাড় জোড়া দিয়েছেন তার হিসেব নেই। তবে মক্কায় পবিত্র হজপালন করতে এসে হজ এজেন্সির প্রতারণা আর বঞ্চনায় ভেঙে গেছে তার মন।

ভগ্ন হৃদয়ে একটু প্রতিকারের আশায় হজ মিশন থেকে হাব। এ কর্মকর্তা থেকে সে কর্মকর্তা, দিন থেকে রাত ঘুরেও প্রতিকার পাননি; বরং চরকির মতো ঘুরছেন।

বিজ্ঞাপন

অবর্ণনীয় কষ্টে কেঁদেছেন। আল্লাহর ঘরে গিয়েও প্রতিকার চেয়েছেন। দু’হাত তুলে ফরিয়াদ জানিয়েছেন, আল্লাহর দরবারে। ‘হে আল্লাহ! যেসব জালেম আমার এবং আমার অসুস্থ স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করছে তাদের হেদায়েত করো।’

প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে সমাজের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক- এবারের হজ মৌসুমে এজেন্সির প্রতারণা থেকে রেহাই মেলেনি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শহিদুল ইসলাম সহিদের মতো অসহায় অসংখ্য মানুষের। যতো দিন যাচ্ছে, ভারী হচ্ছে অভিযোগের পাল্লা।

বিজ্ঞাপন

স্ত্রীকে নিয়ে ২০ দিনের প্যাকেজে হজ করতে এসেছিলেন অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শহিদুল ইসলাম সহিদ। চেকের মাধ্যমে হজ এজেন্সি আবাবিল ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরকে জনপ্রতি দিয়েছিলেন ৬ লাখ টাকা।

এজেন্সি কর্তৃপক্ষ বলেছিলো, মক্কা আর মদিনায় তাদের রাখা হবে হোটেল হিলটনে। কিন্তু না, তাদের দেওয়া কোনো কথাই রাখেনি এজেন্সি কর্তৃপক্ষ। ৭ আগস্ট মক্কায় পৌঁছতেই দুর্ভোগ সঙ্গী হয় এই দম্পতির।

কিসের হিলটন! মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে দোরখোদাই এলাকার নিম্নমানের একটি বাড়িতে রাখা হয় আমাদের।

একটি ঘরে ছয়টি বিছানা। গাদাগাদি পরিবেশ। তার মধ্যেই অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে কাবাঘরের উদ্দেশে বের হলাম।

একটা মোটা মতো লোক এসে বললো, বাইরে তল্লাশি চলছে। এখন যাওয়া যাবে না। আমরা আল্লাহর ঘরের উদ্দেশে এসেছি। আমাদের নাকি যাওয়া যাবে না! ইবাদত যে করবো, সেখানেও বাঁধা!

বুঝতে বাকী রইলো না, আমরা ভয়াবহ প্রতারণার জালে বন্দি! একে ধরে, ওকে ধরে- পৌঁছলাম হজ মিশনে। সেখানে পরিচিত সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি আমার ছাত্রদের দু’একজনকে পেলাম। তারা শুনে তো অবাক। মাত্র সাড়ে তিন কি চার লাখ টাকার প্যাকেজেও এর চাইতে ভালো জায়গায় থাকা যায়!

গেলাম হাব অফিসে। ফজলু সাহেব নামের এক লোক প্রতারক এজেন্সির মালিককে ডেকে বললেন, রাতের মধ্যে সমাধান করে দিতে হবে।

ওই পর্যন্তই। তারপর থেকে অসুস্থ স্ত্রীকে হুইল চেয়ারে ঠেলে নিয়ে যাই হারাম শরিফে। বিশ্বাস করবেন না। কষ্ট পাই, আর আল্লাহর কাছে কাঁদি। পরিত্রাণ চাই।’

এ পর্যন্ত বলে একটু বিরতি নেন অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শহিদুল ইসলাম সহিদ।

‘হাব অফিসে আমার আসা যাওয়া দেখে এজেন্সির মালিক ইউসুফ বললো, যা হবার হয়ে গেছে; আমরা সামনের দিকে চলি।’

আমি হাব নেতাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে এজেন্সি মালিকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকলাম। প্রতিকার তো পাইনি, উল্টো ২০ দিনের জায়গায় আমাকে এখন বলা হচ্ছে- ৩০ দিন থাকতে হবে।

কিছুদিনের মধ্যে ৮৫ জন ডাক্তার নিয়ে আমার কানাডা যাওয়ার কথা। সেই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে আমার যেখানে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, সেখানে আমি পবিত্র এই নগরীতে নিজেই পড়েছি সীমাহীন ভোগান্তিতে।

যোগাযোগ করা হলে মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, একজন প্রখ্যাত চিকিৎসকের সঙ্গে এই ধরনের প্রতারণার বিষয়টি আমরা সবাই জানি। বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক। আমরা তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি।

তিনি বলেন, কিভাবে এই পবিত্র নগরীতে তারা আল্লাহর মেহমানদের সঙ্গে এ ধরণের প্রতারণা করেন তা মাথায় ধরে না।

এদের কর্মকাণ্ড এমন যে, একজনের জন্যে অন্যদের বদনাম হয়। দেশের বদনাম হয়।

যোগাযোগ করা হলে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, এ ধরণের অভিযোগ দু:খজনক। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স।

বিষয়টি আমার নজরেও এসেছে। সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিকে ডেকে কড়া ভাষায় সর্তক করা হয়েছে। সে অঙ্গীকার করেছে, সমস্যাগুলোর সমাধান করে দেবে। আশা করি, শিগগির সমাধান হয়ে যাবে।