জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সামাল দিয়ে রোগবালাইয়ের আক্রমণ প্রতিরোধ, বীজতলার মাণ নিয়ন্ত্রণ এবং অসময়ের সবজি চাষসহ আধুনিক কৃষিতে নতুন সংযোজন ‘পলিনেট হাউজ’। গ্রিনহাউস’র আদলে দেশীয় কৃষি ব্যবস্থাপনায় এই পদ্ধতি। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে খুব সহজেই। হাতের মুঠোয় নতুন এই প্রযুক্তি চলে আসায় কৃষককে কোনো বেগ পেতে হবে না।
এই পলিনেট হাউস প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টি, তীব্র তাপদাহ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে শাক-সবজি এবং ফলমূলসহ সব ধরনের কৃষি উৎপাদন।
তাই অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ায় পলিনেট হাউসে উৎপাদিত ফসলের দিকেই এখন আগ্রহ বেশি কৃষকদের। তবে এখনও সবখানে নেই ‘পলিনেট হাউস’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের বংপুরে গিয়ে দেখা যায় ‘কৃষি উদ্যোক্তা শামীমের ২৫ শতক জমিতে কৃষি বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প এর অর্থায়নে নির্মিত পলিনেট হাউস।
এখানে শীতকালীন টমেটো, ফুলকপি ও কাঁটা বেগুন এবং চায়না বেগুনের বীজ বুনেছেন। আপাতত তিনি বীজ থেকে চারা উৎপাদন করছেন। এরপর অন্যান্য ফসল চাষের ব্যাপারেও ভাববেন। তবে পলিনেট হাউসের মধ্যে এই দুই মাসের মধ্যেই তিনি উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন। আশপাশের কৃষকরা এখনই পলিনেট হাউসের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন।
তারা এতদিন নিম্নমানের চারা ও মেয়াদোত্তীর্ণ চারা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতেন। কিন্তু তার এখান থেকে উন্নতমানের বীজের চারা পেয়ে অনেক খুশি। বাজারের চেয়ে দামও কম। তাই তাদের অনেকে এখন ব্যক্তি উদ্যোগেই এই পলিনেট হাউস নির্মাণের কথা ভাবছেন।
এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পলিনেট হাউসে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, রঙিন (হলুদ) তরমুজ, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস ও অন্যান্য অসময়ের সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এছাড়াও গ্রীষ্মকালেও ফলবে শীতকালীন সবজি। এর মধ্যে টমেটো, ফুলকপি, বেগুন, গাজর ইত্যাদি ফসল রয়েছে। এর ফলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র্য আসবে, তেমনি অনেকেই আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান পাবে। ওপরে উন্নতমানের পলিথিনের আচ্ছাদন থাকে। তাই এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায়। এজন্য অতি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। আর এই পদ্ধতিতে কৃষকরা সারা বছর সবজি চাষ করতে পারবেন। এতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সব ধরনের সবজি চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে সফলতা পাবেন। কৃষি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরমর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার জানান, গোমস্তাপুর উপজেলায় এই প্রথম পলিনেট হাউস তৈরি হয়েছে। যা দেখে এখন শিক্ষিত বেকার যুবকরাও আগ্রহী এবং উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তারা আশা করছেন, পলিনেট হাউসের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ফলবে তেমনি অফ সিজনে অন্যান্য সবজি উৎপাদন হবে। পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগও তৈরি হবে। ফলে সবজি চাষে বৈচিত্র্যতা আসবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, নিরাপদ খাবার উৎপাদনের জন্য পলিনেট হাউজ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আদ্রতা এবং তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী উচ্চমূল্যের ফসল সহজেই আবাদ করা যায়। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে বালাইনাশকের ব্যবহার খুব সীমিত পর্যায়ে করা হয়ে থাকে। অল্প পরিসরে পলিনেট হাউজের মাধ্যমে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে জেলার কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি সংযোজন হয়েছে।