বর্ষবরণে ত্রিশালের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজন
দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। উৎসবের বাকি আছে আর মাত্র কয়েক দিন। বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটি পালনে হালখাতা, পান্তা ইলিশ, গান-বাদ্যসহ নানা আয়োজনের জোর প্রস্তুতি চলছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি)।
বর্ষবরণ উদযাপনের পুরো আয়োজনের দায়িত্ব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের উপর। বাংলার ঐতিহ্য তুরে ধরতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। তাদের দিক-নির্দেশনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছেন বিভাগটির শিক্ষকরা।
জাককানইবি-তে বৈশাখে এবারের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে।’
প্রতিবারের মতো এবারো মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছে বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন ধরনের প্রতিকৃতি। সঙ্গীতের মূর্ছনা এবং নানা আড্ডার মধ্য দিয়েই পুরোদমে চলছে কাজ।
এবারের বৈশাখের মূল আকর্ষণে রয়েছে ১৫ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে চারুকলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের তৈরী বিভিন্ন প্রতিকৃতি। এগুলো ঐতিহ্যগতভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় পালন করে আসছে, সেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে। মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান মোটিফ থাকবে ‘ময়ূরপঙ্খী নাও’।
দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তৈরি করছেন বিশাল আকৃতির পেঁচা, ঘোড়া, টেপা পুতুল, ময়ূরপঙ্খী নাও, পালকী, শখের হাঁড়ি, মুখোশ, ডালা, পাখা, পট চিত্র, কাগুজে বাঘ ইত্যাদি।
এবারের বৈশাখ উদযাপন কমিটির আহবায়ক চারুকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, নগরবাসী বর্মন ও সদস্য সচিব কল্যানাংশু নাহা। নাহা বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, অশুভ সব চিন্তা নিপাত যাকম এরই অন্তঃস্থলগত মানসিকতাকে ধারণ করে এবার জাগ্রত হোক প্রতিটি বাঙ্গালি বিবেক। আমরা চাই, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। অসাম্প্রদায়িক ও অহিংস, সহনশীল, নারীবান্ধব ও সুবিবেচক সমাজ গঠনে এটি একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়াক বিশ্বের বুকে। বাঙ্গালি জাগুক তার পুরোনো ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক আবহের বাংলার প্রতিচ্ছবিতে। জয় হোক চিরায়ত বাঙ্গালিয়ানার।
পহেলা বৈশাখ ১৪২৬ উদযাপন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী আয়োজনের প্রথম দিনে চৈত্র সংক্রান্তিতে থাকছে যাত্রাপালা ‘বাঙ্গালী’ এবং ফানুস উৎসব। চারুকলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপঙ্কর বৈরাগীর সার্বিক নির্দেশনায় চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিনীত এই যাত্রা নির্দেশনা দিয়েছেন নৃত্যপালা, নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যাবিভাগের প্রভাষক মাজহরুল হোসেন তোকদার।
দ্বিতীয় দিনের প্রধান আয়োজনে বৈশাখকে কেন্দ্র করে তিন দিনব্যাপী চলবে বৈশাখী মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, গ্রামীণ খেলা, যেমন খুশি তেমন সাজো ইত্যাদি। এছাড়া ক্যাম্পাস সংলগ্ন দোকানগুলোতে স্থানীয়রাও হালখাতাও খুলে বসবেন।
বৈশাখ উদযাপন কমিটির সাংস্কৃতিক আয়োজনের দায়িত্বে থাকা সঙ্গীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশিক সরকার বার্তা২৪.কমকে জানান, এবার একেবারেই ভিন্নভাবে বৈশাখের আয়োজন রাখা হয়েছে সাংস্কৃতিক পর্বে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পরিবেশনা রাখা হয়েছে বৈশাখী আয়োজনে নতুনত্ব দেওয়ার জন্য। সেজন্য চলছে নিয়মিত পরিচর্যা ও অনুশীলন।
এছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল্ জাবিরের নির্দেশনায় যাত্রাপালা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’।