নির্বাচনের পথে আ.লীগ, মুক্তির দিকে বিএনপি
গুলশান বারিধারার কালাচাঁদপুর এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচারণা চালাচ্ছেন ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা ওয়াকিল উদ্দিন। নিজের ছবিসহ লিফলেট বিলাচ্ছেন তিনি। তার আশা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া। ঢাকার বাইরে সিলেটের জকিগঞ্জে ড. আহমদ আল কবিরকে প্রচারণায় বেশ সরব দেখা গেছে। রাজনীতিবীদ ও অর্থনীতিবিদ কবির এই জনপদে নৌকার প্রার্থী হতে চান। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের এই দুই আসনের মতো সারাদেশে একই চিত্র। তবে আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপির কোনো প্রার্থীর খবর নেই। বিএনপিতে কারা প্রার্থী হবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে দলটি বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ এখন পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। তফসিল ঘোষণার অপেক্ষায় দলটি। নির্বাচন পরিচালনার জন্য ১৪টি উপকমিটির খসড়া নিয়ে দলের প্রধান শেখ হাসিনা শুক্রবার বৈঠক করেছেন। ঢাকা থেকে সারাদেশের সব আসনে প্রস্তুতি কমবেশি নিচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু বিরোধী দল বিএনপি এখন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যজোট করেছে। জোটের প্রধান দাবি নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি।
সেখানে দল বা ঐক্যের মধ্য থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতির কোনো নির্দেশনা এখনও দেওয়া হয়নি। ফলে বিএনপি থেকে যারা নির্বাচন করতে চান তাদের পোস্টার বা বিলবোর্ড কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
তবে সিলেটের সমাবেশ করার পর জাতীয় ঐক্যজোট এখন চট্টগ্রামে সমাবেশ করতে চায়। সিলেটে জাতীয় ঐক্যজোটের সমাবেশের পর স্থানীয়রা মনে করেন, মাসখানেক আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একই জায়গায় সমাবেশ করেন। কিন্তু তাদের সমাবেশ মাঠের ভেতরেই সীমবদ্ধ ছিল। আর দু’দিন আগে জাতীয় ঐক্যজোট যে সমাবেশ করেছে তা মাঠ পেরিয়ে আশেপাশের সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।
সিলেট বিএনপির নেতা মাহবুবুল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘ওই সমাবেশের আগে ও পরে তাদের ১০০ জনকে এবং সমাবেশের আগে আরও ২০০ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়। তারপরও এমন জনসমাগমে আমরা আশান্বিত।‘
বিএনপিপন্থী রাজনৈতিক বিশ্লেষক শাহেদ আলম বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘ঐক্যগঠন বিএনপির ঐতিহাসিক অর্জন। বিএনপি এতে অনেকখানি এগিয়ে যাবে। আর সময়ের প্রয়োজনে ড. কামাল হোসেনকে এখন সামনে রাখা উচিত। একটা পরিবর্তন হবে সেটা এই নির্বাচনে হোক বা একবছর পরে হোক।’
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনে করেন নির্বাচনকে ঘিরে এখনও অনেক মেরুকরণ বাকি। তিনি বলেন, ‘ড. কামালের ঘাড়ে চেপে বিএনপি বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। তবে তাদের দাবিগুলো কোনোভাবে মানা হবে না। দেশ এখন ইলেকশন মুডে আছে। আমাদের প্রস্তুতি শেষের দিকে। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার সেসব কাজ চলছে। নির্বাচনী ইশতেহারেরও কাজ চলছে।
আর জাতীয় ঐক্যের প্রধান নেতা ড. কামাল জানিয়েছেন, বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য তারা তফসিল ঘোষণার আগেই সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি চান।
এক্ষেত্রে তাদরে ৭ দফা দাবির প্রথমটি হলো- খালেদা জিয়ার মুক্তি। অন্য দাবিগুলোর মধ্যে- নিবাচন কমিশন পুনর্গঠন, সব মামলায় গ্রেফতার স্থগিত, সেনাবাহিনী মোতায়ন ইত্যাদি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের দাবি অত্যন্ত স্পষ্ট। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, ইভিএম ব্যাবহার করা যাবে না এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে৷'
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, তিনি নিজে নির্বাচন না করলেও আগামী নিবাচনে আওয়ামী লীগের পলিসিগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তবে বিএনপি যেহেতু সঙ্গে আছে তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে পারে। কিন্তু ভোটে জিততে পারবে না। কারণ আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী।
তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। আর বিএনপি তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে আসবে।