রং মেখে সং সেজে বিআরটিএ অফিসে

রংচং মেখে বিআরটিএ অফিসে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি

  • মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা: রাজধানীর রাস্তায় যেসব লক্কড়ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন গাড়ির দেখা মিলতো তার অধিকাংশতেই রংচং মাখিয়ে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। মূলত গাড়ির ফিটনেস সনদ নিতেই মালিকরা এই পথ বেছে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ফলে এখন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অফিসের সামনে রংচং করা গাড়ির উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এসব গাড়ির অবস্থা কি আদৌ উন্নত করা হয়েছে, নাকি শুধুমাত্র ফিটনেস সনদ নেওয়ার জন্যই এ ব্যবস্থা- এমন প্রশ্ন সবার।

রাজধানীর মিরপুরে বিআরটিএ অফিসের সামনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে প্রাইভেট কার, সিএনজি, মোটরসাইকেল ও রংচং করা বাসের হিড়িক লেগে আছে। এসব পরিবহন সামলাতে গিয়ে রীতিমত নাস্তানাবুদ অবস্থা সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/11/1533985077390.jpg

লাইসেন্স বা ফিটনেস নবায়ন করতে আসা রাজধানীতে ছুটে চলা লক্কড়-ঝক্কর পরিবহনগুলোর বাহারি বেশ দেখে যেকারোরই অবাকই হওয়ার কথা। রাতারাতি কিভাবে গাড়িগুলোর চেহারা পাল্টানো হয়েছে? কিছুদিন আগেও এসব গাড়ির বডিতে হাজারটা টোপ খাওয়া, টিন উঠে যাওয়া, রং উঠে গিয়ে মরিচা ধরার চিহ্ন ছিল। কিন্তু এখন এসব লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িগুলোতে রংচং মাখিয়ে ঝকঝকে রূপ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র ফিটনেস সনদ পাওয়ার জন্য।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এরপর পুলিশের বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হয়। আর তখনেই দেশজুড়ে ফিটনেস, লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। ফলে যানবহনের ফিটনেস সনদ ও লাইসেন্স পেতে উঠেপড়ে লাগে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। তারা এখন নিয়মিত বিআরটিএ অফিসে যাতায়ত করছেন।

এদিকে ঈদ এলেই রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির দৌরাত্ম বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এর ওপর শুরু হয়েছে পুলিশের ধারপাকড়। সবমিলিয়ে বহু বছরের পুরানো গাড়ির গায়ে রংচং লাগিয়ে নতুন রূপে সাজানোর চেষ্টা করেন পরিবহন মালিকরা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/11/1533985095380.jpg

মিরপুর-নতুনবাজার রুটে চলাচল করে আকিক পরিবহন। ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় আকিক পরিবহনের কয়েকটি গাড়ি দেখা গেল মিরপুর বিআরটিএ অফিসের সামনে। গাড়িগুলো বাইরে থেকে দেখতে বেশ ঝকঝকে তকতকে মনে হচ্ছে। আগের তামাটে রঙ পরিবর্তন করে এখন গাড়ির গায়ে সবুজ লাল-সাদা রঙ করা হয়েছে। এছাড়াও সেখানে মিরপুর-উত্তরা রুটের বসুমতি, প্রজাপতি পরিবহনের কয়েকটি গাড়ি রঙিন সাজে দেখা গেল। ফিটনেস পরীক্ষা উন্নীত হতে অন্যান্য রুটের রাজধানী, পূরবী, ইতিহাস, বিকাশ পরিবহনের বাসগুলোতেও রঙের প্রলেপ দেখা যায়।

তবে রং মেখে ঝকঝকে ততকতে সাজলেও একটু খেয়াল করলে গাড়িগুলোর ভেতরের প্রকৃত অবস্থার দেখা মিলবে। ভাঙাচোড়া স্থানে বেশি করে পুডিং লাগানো হয়েছে, পরে সেটার ওপরেই রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। যথাযথ ফিটনেস না থাকার পরও বাইরের রূপ দেখিয়ে বিআরটিএ’র অনুমোদন পাচ্ছে পরিবহনগুলো।

মিরপুর বিআরটিএ অফিসে ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে আসা বসুমতি পরিবহনের  চালক তহিদুল বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। তবে গাড়িটি ভালো করে মেরামত করেই বিআরটিএ’তে ফিটনেস সনদ নিতে এসেছি। গাড়ির ভেতরের কন্ডিশনও আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো।’

জানা গেছে, দুর্ঘটনার অন্যতম কারণই হচ্ছে লক্কড় ঝক্কড় এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এই গাড়িগুলো রাস্তায় চলে। ফিটনেস না থাকলে রাস্তায় পুলিশ ঝামেলা করছে। তাই ফিটনেস সনদ নিতেই এমন প্রতারণা করছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এদিকে তেমন কোনো মনিটরিং না করেই বাইরের রংচং দেখে গাড়িগুলোকে ফিটনেস সনদ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক (লাইসেন্স) মোহাম্মদ আলী আহমেদ মিলন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বর্তমানে রাস্তায় লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালাতে নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। ট্রাফিক আইন পরিবর্তন হচ্ছে, কড়াকড়ি হয়েছে আইনও। তাই নতুন লাইসেন্স নেওয়া ও নবায়ণকরীদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। বিআরটিএ’র অফিসগুলোতে পরিবহন মালিকরা ফিটনেস সনদ পেতে ভিড় করছেন। হঠাৎ চাপ পড়ায় আমাদের কাজে সামান্য সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই সনদপত্র প্রদান করছি, এখানে কোনো ধরনের ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে না।’