বটগাছটি আমাদের গরিবের এসি
ঠাকুরগাঁও : ‘যে গরম পড়েছে তাতে বেঁচে থাকাই দায়। একটু বৃষ্টি হলে অনেক ভালো লাগত। তবে ঠাডা পড়া রোদে গরিবের এসি এই বটগাছটি। গাছটির নিচে বসলে শরীরটা একেবারে ঠান্ডা হয়ে যায়। আসলে বটগাছটি আমাদের গরিবের এসি।’
ঠিক এমনি ভাবে ঠাকুরগাঁও আদালত চত্বরে বটগাছের নিচে বসে থাকতে থাকতে কথাগুলো বলছিলেন ফাড়াবাড়ি থেকে আসা মংলু বর্মণ নামের একজন ব্যক্তি।
প্রায় ২শ বছরের বেশি সময় ধরেই দাঁড়িয়ে আছে ঠাকুরগাঁও জর্জ কোট চত্বরের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী এই বটগাছটি। গরিব মানুষের কাছে এসি বলে পরিচিত এই গাছটি। প্রতিদিন সকাল হলেই স্থানীয় জনগণসহ দূর-দূরান্ত থেকে প্রায় হাজারো মানুষ আসে জর্জ কোট চত্বরে। কেউ আসে তার মামলার হাজিরা দিতে, কেউবা আসে তাদের শহরের বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্য নিয়ে। এই হাজারো মানুষের ক্লান্ত শরীরের বিশ্রামের আশ্রয় স্থল বটগাছটি। বটগাছটির শীতল বাতাসের পরশে মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।
আদালত চলাকালীন নয়, বিকেল, রাতে সব সময় দেখা যায় এই গাছের নিচে বসে আছেন অনেকেই। শুধু মানুষই নয় সন্ধ্যা হলে বটগাছের উপড়ে এসে বসে অনেক পাখি।
জানা যায়, গাছটি পুরাতন হয়ে যাওয়ায় এবং ডালপালাগুলো পোকায় খেয়ে ফেলায় বড় একটি ডাল ভেঙে পরে একজন পথচারী মারা যায়। এরপর ২০১৪ সালে এই ঐতিহ্যবাহী গাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ওই সালের এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখে বাংলাদেশ প্রেস নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে জর্জ কোট চত্বরে এই গাছটি না কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে জেলার বিভিন্ন পেশার মানুষ।
এরপর গাছটি কাটার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। আস্তে আস্তে চলে যায় দিন। এভাবেই ২ বছর দাঁড়িয়ে থাকার পরে অবশেষে বয়সের ভারে গরিবের এসি বলে পরিচিত আদালত চত্বরে অবস্থিত শত বছরের বটগাছটির একাংশ ভেঙে পড়ে ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই সকালে।
কথা হয় বালিয়াডাঙ্গি থেকে কোর্টে হাজিরা দিতে আসা আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই কোর্ট চত্বরে আসছি আদালতের কাজে। এই কোর্টের অনেক জায়গা থাকলেও শরীরটাকে শীতল করার মতো একটাই জায়গা আছে। আর সেটা হচ্ছে এই শতবর্ষী বটগাছটি। ক্লান্ত হলে এই বটগাছের নিচেই বিশ্রাম করি। তাই এখানে বসে আছি।’
বটগাছের নিচে কাজের বিষয়ে মক্কেলদের সঙ্গে কথা বলছেন অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আগে আমি কাজের জন্য অন্য স্থানে বসতাম। সেখানে প্রচণ্ড গরম ছিল। মক্কেলদের সেখানে থাকতে কষ্ট হতো। আমার সঙ্গে যারা কাজ করে তারাও গরমে কষ্ট পেত। অবশেষে চলে এলাম এই বটগাছের নিচে। এই গাছের নিচে এখন অনেক শান্তিতে আছি। আমি এখানে প্রায় ৭-৮ বছর ধরে কাজ করছি।’
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আখতারুজ্জামান বলেন,‘ঐতিহ্যবাহী এই বটগাছটি জনগণের কাছে অনেক প্রিয়। এই বটগাছের নিচে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান করা হয়। আমরা এই গাছটির ঐতিহ্য বজায় রাখতে যা করার দরকার তাই করে যাব।’