বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি: ‘জহুর দুবেলাই পান্তা ভাত খাওয়াবি’



মুক্তিযোদ্ধা অমলেন্দু সরকার

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতা থেকে: ১৯৭৫ সালের ১৭ আগস্ট একটা মিটিং হওয়ার কথা ছিল। সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ও সক্রিয় নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। কিন্তু ১৫ আগস্ট ভোরের সেই বিয়োগান্ত ঘটনায় সব ওলটপালট হয়ে গেল।

আমরা তখন চট্টগ্রামের নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে তোপখানা রোডে সম্রাট হোটেলে অবস্থান করছিলাম। হোটেলের নাইট গার্ড ভোর ৪টার দিকে আমাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললো- রাস্তায় সেনাবাহিনী ও ট্যাঙ্ক নেমে গেছে। তখন আমরা রাস্তায় গিয়ে দেখলাম ৪টি ট্যাঙ্ক, ৫টি সেনাবাহিনী ভর্তি জিপ প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে শাপলা চত্বরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আমরা জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে ও তাঁর ভাগ্নে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির পরিবারবে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা কর হয়েছে। ধানমন্ডির নিজের বাসায় এ হত্যকান্ডের নেতৃত্ব দেয় সেনাবাহিনীর কিছু উচ্ছৃঙ্খল অফিসার।

এ খবর শোনার পর আমরা হতবাক ও হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। বিশ্বাসও করতে পারছিলাম না। কি করবো বুঝতেও পারছিলাম না। হোটেলে ফিরে এলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে বের হলাম । প্রথম শাহবাগের পিজি হাসপাতালে। সকাল ১১টায় একটি ভ্যানে করে শেখ ফজলুল হক মনির ও তার স্ত্রীর লাশ আনা হয়। তিনি ছিলেন অন্তসত্ত্বা। ওইখান থেকে আমরা মিন্টু রোডে তোফায়েল আহমদ, কে এম ওবায়দুর রহমান (পরে বিএনপিতে যোগ দেন), ফনিভূষণ মজুমদারের বাসায় ঢোকার চেষ্টা করি। বাসা ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনীর টহল জিপ। আমরা দ্রুত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। একমাত্র তৎকালীন মন্ত্রী ফনিভুষণ মজুমদারের সাথে কিছুটা কথা হয়। তিনি নির্দেশ দিলেন চট্টগ্রাম ফিরে যাও। বিকেলে ট্রেনে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা। পথে অনেক বাধা। একদিন পর এসে পৌঁছালাম চট্টগ্রাম।

১৮ আগস্ট মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করি। আমাদের এ তৎপরতা দেখে পরদিন থেকেই  পুলিশ ও সেনাবাহিনী রাস্তায় নেমে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।  এরপর শুরু হয় তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেফতার। ৪৩ বছর পরও এসব স্মৃতি অম্লান। জাতির জনককে এভাবে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে- এটি ভাবলে এখনো মন কেঁদে উঠে।

তিনি শুধু একটা জাতিকে স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দেননি, তিনি বাংলাদেশকে বাঙালি জাতিকে বড় করে কিছু ভাবার ও স্বপ্ন দেখার পথও দেখিয়ে গেছেন। কতোটা দূরদর্শী হলে এরকম করে একজন নেতা ভাবতে পারেন। সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছেন, আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। গরিব মেহনতি মানুষের কষ্ট ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর গড়া বাংলাদেশ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের অনেক অর্জন এখন। বাংলা ভাষাকে বিশ্ব মাতৃভাষা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু আর মাথাপিছু আয় এখন অনেক উপরের দিকে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার আরো অপার সম্ভাবনা।

প্রতিবছর ১৫ আগস্ট এলে অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করে। আমাদের চারপাশে আত্মীয় পরিজন সবই আছে। সুখে-দুখের জীবন চলছে স্বাভাবিক গতিতে। কিন্তু  কেউ যেন এক আপনজন নেই। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- হয়তো এতদিন বেঁচে থাকতেন কিংবা থাকতেন না। এটি বিতের্কর বিষয়। তাঁর অসাধারণ নেতৃত্ব গুণ আমাদের অনুপ্রাণিত করছে প্রতি মুহূর্তে। তিনি একজন সাধারণ মানুষ হয়েও অসাধারণ সব ক্ষমতা ও গুণের অধিকারী ছিলেন। খেতে বসে নিজের পাতে তোলার আগে আশপাশের সবাইকে তুলে দিতেন আগে। খেতে যেমন ভালোবাসতেন, তেমনি খাওয়াতেও পছন্দ করতেন। আপাদমস্তক একজন বাঙালি তিনি। সাদা ভাতের সঙ্গে শুটকি ভর্তা, ইলিশ ভাজা সঙ্গে পোড়ামরিচ খেতে ভালোবাসতেন। তিনি চট্টগ্রামে এলে থাকতেন হোটেল শাহজাহানে। প্রয়াত মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসা থেকে খাবার আসতো। তিনি পান্তা ভাত ও শুটকি ভর্তা খেতে পছন্দ করতেন। চায়ের সঙ্গে অবশ্যই চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বেলা বিস্কুট খেতে ভালোবাসতেন। একবার জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসা থেকে দুপুরে ইলিশ ভাজা, শুটকি ভর্তা ও পান্তা ভাত নিয়ে আসা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু তখন জহুর আহমদ চৌধুরীকে রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘তুমি কি সকাল-বিকাল দুবেলাই পান্তা খাওয়াবে?’

অমলেন্দু সরকার : মুক্তিযোদ্ধা ও স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাসকারী

[email protected]

 

   

টাঙ্গাইল শাড়িসহ জিআই সনদ পেলো আরও ১৪ পণ্য



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

টাঙ্গাইল শাড়িসহ দেশের মোট ১৪টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতার।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সংশ্লিষ্টদের হাতে এ সনদ তুলে দেন।

জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া পণ্যগুলো হলো- গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা। এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।

এসময় শিল্পমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দু'হাত ভরে তাঁর বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনি এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব-দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে। মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন কোনো খালি বাস্কেট নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ভরা বাস্কেট। আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই, প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহারের। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।

সিনিয়র শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে 'ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি। বিশেষ অতিথি বলেন, আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একইসঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি, ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবস্থা প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

ডিপিডিটি'র মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।

;

জামালপুরে চুরি ও হারিয়ে যাওয়া ১৭ মোবাইল ফোন উদ্ধার করল পুলিশ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, জামালপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরে চুরি ও হারিয়ে যাওয়া ১৭টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত দিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে জামালপুর সদর থানায় সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহরাব হোসেন।

পরে উদ্ধারকৃত এসব মোবাইল ফোন সেট প্রকৃত মালিকদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহরাব হোসেন জানান, 'তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় চুরি- হারিয়ে যাওয়া ১৫ জনের ১৭টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়েছে। কারো মোবাইল হারিয়ে গেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দিয়ে মোবাইল সেট ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, যাদের কাছ থেকে মোবাইল সেটগুলো উদ্ধার করা হয়েছে তারা না বুঝেই এসব মোবাইল সেট ক্রয় করে ব্যবহার করছিলো। তবে এসব মোবাইল সেট বিক্রির সাথে জড়িতদের আটক করা না হলেও তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। পরে আনিসুর রহমান নামে এক ব্যক্তির ৬ মাস আগে হারিয়ে যাওয়া ২টি ও ফয়সাল হাসান নামে এক ব্যক্তির দুই দিন আগে হারিয়ে যাওয়া ২টি মোবাইল সেটসহ উদ্ধারকৃত মোট ১৭টি মোবাইল সেট ভূক্তভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়।

এ সময় পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

;

চবির হলে মাদক কারবারি, সূর্য ডুবতেই শুরু হয় কেনাবেচা



মুহাম্মাদ মুনতাজ আলী, চবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
চবির হলে মাদক কারবারি, সূর্য ডুবতেই শুরু হয় কেনাবেচা

চবির হলে মাদক কারবারি, সূর্য ডুবতেই শুরু হয় কেনাবেচা

  • Font increase
  • Font Decrease

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। যেখানে প্রতি বছর আকাশসম স্বপ্ন  বাস্তবে রূপদান করতে হাজারো শিক্ষার্থী প্রবেশ করে। কিন্তু মুক্ত ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণ ও অসৎসঙ্গ পেয়ে কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই যুক্ত হয় মাদক সাম্রাজ্যের গহীন অন্ধকারে। যেখান থেকে বের হতে না পেরে ঝরে যায় সহস্র মেধাবী শিক্ষার্থী, ভেস্তে যায় হাজারো পিতা-মাতার আশা-আকাঙ্ক্ষা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাদক সাম্রাজ্যের গহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে। এদের মধ্যে অধিকাংশই অছাত্র ও বহিষ্কৃত। সন্ধ্যা নামতেই মদ, গাঁজা ও ইয়াবার আসর বসে তাদের। শুরু হয় মাদকাসক্তদের আনাগোনা। যে করিডরে পাওয়ার কথা ছিল শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার চাপা গুঞ্জন, সেখানে মেলে গাঁজার উৎকট গন্ধ। এদের মধ্যে কেউ আবার নিয়মিত বিভিন্ন স্থান থেকে মাদকের চালান নিয়ে এসে করেন ব্যবসাও। সাপ্লাই দেন পুরো ক্যাম্পাসে।

সম্প্রতি পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান জয়ের মাদক কারবারির সাথে যুক্ত থাকার একাধিক প্রমাণ মেলে। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, তার মাদক কেনাবেচা ও সরবরাহের জন্য রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। এজন্য সে রাজনৈতিক প্রভাবকে পুঁজি করে চালায় মাদক ব্যাবসা। তার দাবি- সে শাখা ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের একাংশের অনুসারী, থাকেন এ এফ রহমান হলের ৪৪০ নং কক্ষে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই হলে সম্প্রতি মাদক সেবনকারীদের সংখ্যা বেড়েছে। মদ, গাঁজা ও ইয়াবা তাদের নিত্য সঙ্গী। এর ফলে প্রকাশ্যে মাতলামি করতেও দেখা যায় অনেককে।

ঘটনার অনুসন্ধানে এ এফ রহমান হলের ৪৪০ নং কক্ষে প্রকাশ্যে কয়েকটি মদের বোতল পাওয়ায় কক্ষটি গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) সিলগালা করে দেয় হল কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ১১টায় এ. এফ রহমান হলে মদপান, মাতলামি ও মাদক সরবরাহের অভিযোগে আশিকুজ্জামান জয় নামের ওই শিক্ষার্থীকে হল থেকে পিটিয়ে বের করে দেয় শাখা ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের বেশ কয়েকজন কর্মী।

এ ব্যাপারে এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শাকিল আহমেদ জানান, চবির এ এফ রহমান হলে সাম্প্রতিক সময়ে মাদক সেবনকারীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিলে দেখা যাবে সবচেয়ে বেশি মদ, গাজা ও ইয়াবা খায় এই হলের ছেলেরা। আমাদের ব্যাচেরই এক শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান জয় ঈদের পরপরই হলে ৭ থেকে ৮ কেজি মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে এবং খেয়ে মাতলামি করে। এজন্য তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হলেও সে শুনেনি। ফলে তার সাথে আমাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার কাছে জয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ এফ রহমান হলের সকলেই জানে জয় সম্পূর্ণ মাদকাসক্ত। সে দীর্ঘদিন থেকে মদ ইয়াবা সেবনের সাথে জড়িত থাকার পাশাপাশি হলে মাদক বিক্রিও করতো। আমরা তাকে নিষেধ করা সত্বেও সে এগুলো না ছাড়াই তার সাথে আমাদের একটু ধাক্কা-ধাক্কি হয়েছে।

আশিকুজ্জামান জয়কে মারধরের পর সরেজমিনে এ এফ রহমান হলের ৪৪০ নং কক্ষ পর্যবেক্ষণ করলে কয়েকটি মদের বোতল পাওয়া যায়। সেগুলোতে মদ না থাকলেও মদের টাটকা গন্ধ মেলে।

তবে, আশিকুজ্জামান জয় নিজ গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের সাথে সম্পর্ক খারাপ কেন- এই জের ধরে মারধরের কথা স্বীকার করলেও মদ পানের বিষয়টি অস্বীকার করেন। যদিও আশিকুজ্জামান জয়ের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা যায়, একটি দেশি মদের বোতল নিয়ে বসে আছেন। পাশে রাখা আছে আরও দুইটি মদের বোতল।

এসব ব্যাপারে এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আলী আরশাদ চৌধুরী জানান, আমরা গতকাল (বুধবার) হাউজ টিউটরাসহ কক্ষটিতে গিয়েছিলাম। আমরা আপাতত কক্ষটি সিলগালা করে দিয়েছি। রুমে যে থাকতো তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। আমরা পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিব।

মাদক কারবারির ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ অহিদুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টের সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলব। তার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে হল প্রভোস্টসহ আমরা তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যাবস্থা নিব।

;

কোরবানি ঈদে ব্রা‌জিল‌ থেকে গরু আনা সম্ভব: রাষ্ট্রদূত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আসন্ন কোরবানি ঈদে ব্রা‌জিল‌ থেকে জীবন্ত গরু আনা কঠিন ও জটিল হলেও অসম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশ‌টির রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস।

বুধবার (৬ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত অনুষ্ঠা‌নে এসব কথা জানান ব্রা‌জি‌লের রাষ্ট্রদূত।

ব্রা‌জি‌লের রাষ্ট্রদূত ব‌লেন, বাংলাদেশে মাংস খাতের বিশাল সম্ভাবনা আছে ব্রাজিলের। ব্রাজিল গরুর মাংস রপ্তানি করে থাকে। এটা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ভালো বাণিজ্য হতে পারে। এর মধ্যে দিয়ে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশের ভৌগলিক দূরত্ব অনেক বেশি। সেখান থেকে জীবন্ত গরু আনা কঠিন ও জটিল হলেও অসম্ভব নয়।

গত ৭-৮ এপ্রিল ঢাকা সফর ক‌রেন ব্রা‌জি‌লের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউ‌রো ভি‌য়েরা। সে সময় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ব্রা‌জি‌লের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স‌ঙ্গে বৈঠক ক‌রে আগামী কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরু পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায় কি না সে বিষয়টি বি‌বেচনার জন্য অনুরোধ করেন।

চলতি বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল সফ‌রের আমন্ত্রণ জা‌নি‌য়ে‌ছেন দেশ‌টির প্রেসিডেন্ট লুলা।

প্রধানমন্ত্রীর ব্রাজিল সফর প্রস‌ঙ্গে রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো ব‌লেন, জুলাই‌য়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিল যা‌বেন। তি‌নি জি-২০ সম্মেলনের আগে ব্রাজিল সফর কর‌বেন। যদি তিনি ব্রাজিল যান তাহলে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে যে চুক্তিগুলো সম্ভব হয়নি তা হয়ত স্বাক্ষর হতে পারে।

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে পাওলো ফার্নান্দো ব‌লেন, দুই দেশের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য বিদ্যমান। আমরা বাণিজ্য ভারসাম্য ও বৈচিত্র্য আনতে চাই।

ব্রাজিলের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ব‌লেন, ব্রাজিল বাংলাদেশি আরএমজি পণ্যের একটি বড় বাজার হতে পারে। ব্রাজিলের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক পণ্য শুল্ক বেশি দিতে হয়। এই শুল্ক কীভাবে কমানো যায়, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে এই কাজটি খুব সহজ নয়। এটা ধাপে ধাপে হবে বলে আশা করি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ব্রাজিল বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। তবে এটা শুধু বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে কারিগরি সহযোগিতা থাকবে। এটা হলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও বাড়বে। দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে, বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার বিশাল সুযোগ রয়েছে।

রো‌হিঙ্গা ইস্যুতে ব্রা‌জি‌লের রাষ্ট্রদূত ব‌লেন, রো‌হিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাস‌ন। এটাই সবচেয়ে উত্তম সমাধান।

ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জানান, ব্রাজিল ভ্রমণে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে ২৫০-৩০০ ভিসার আবেদন হয়। তবে আমরা প্রতি মাসে ১০০টি ভিসা ইস্যু করতে পারি। সেজন্য ঢাকায় একটি ভিসা সেন্টার খোলার উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা একটি ভিসা সেন্টার খুলতে পারব।

অনুষ্ঠা‌নে ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু বক্তব্য রাখেন।

;