ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানিয়েছিলেন

  • ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

খুলনা: যথাযোগ্য মর্যাদা এবং ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে।

ওই অনুষ্ঠানে দীর্ঘ কূটনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্যের বিভিন্ন স্মৃতি ও ঘটনা এবং অবসরকালীন দীর্ঘ ৭৭ বছর বয়সের নানা অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, মুক্তিযোদ্ধা ও কলাম লেখক মহিউদ্দিন আহমদ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেছেন, “পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের অনেকগুলো দেশে দায়িত্ব পালন করেছি। এসময় অনেক রাজা-বাদশা-প্রেসিডেন্ট প্রাইম-মিনিস্টারকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় বা বহুপাক্ষিক আলোচনায়, কথা-বার্তায়, সৌজন্য প্রকাশে তাদের ঘনিষ্ঠভাবেও দেখেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো এমন সাহসী, প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, মাটি ও মানুষের প্রতি এমন মমত্ববোধ, দেশপ্রেম আমি কোথাও কারও মধ্যে দেখিনি।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে রাওয়ালপিন্ডি থেকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি লন্ডনে যান। ওইদিন ভোরে লন্ডনের হীথ্রো বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে যে তিনজন বাঙালি কূটনীতিকের অভ্যর্থনা জানানোর সুযোগ ও সৌভাগ্য হয়েছিল তার মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। সেদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ যে সম্মান বঙ্গবন্ধুকে দেখিয়েছিলেন তা আর কোথাও তিনি দেখেনি।’

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে ব্রিটিশ সরকার এবং জনগণকে ৭১-এ আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সমর্থন জানানোর জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে বঙ্গবন্ধু গিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রীটে। আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু যখন তাঁর হোটেলে ফিরে আসছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে প্রথা ভেঙ্গে ডাউনিং স্ট্রীটের বাইরে এসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রোলস রয়েস গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকেন যাতে বঙ্গবন্ধু গাড়িতে উঠতে পারেন।”

তিনি আরও বলেন, লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর তাঁর সফল পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে খুব অল্পদিনের মধ্যেই পৃথিবীর প্রায় সব দেশই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

সারাবিশ্ব বঙ্গবন্ধুকে মহান নেতা হিসেবে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। হাজার বছরের মধ্যে বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে যিনি আমাদের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন।

১৫ আগস্ট জাতির জনককে কিছু বিশ্বাস ঘাতক নৃশংসভাবে স্বপরিবারে হত্যা করে। দেশ ও জাতির জন্য এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? বাঙালি জাতির এ ক্ষতি আর কোনোদিন পুরণ হওয়ার নয়।

১৫ আগস্ট দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ওপর এক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শোক দিবস পালন কমিটির সভাপতি ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ। সভায় শিক্ষকদের মধ্যে আইন ডিসিপ্লিনের প্রভাষক পুণম চক্রবর্তী, কর্মকর্তাদের মধ্যে উপ-রেজিস্ট্রার দীপক চন্দ্র মন্ডল এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাস্কর্য ডিসিপ্লিনের রূপক কুমার সাহা ও বাংলা ডিসিপ্লিনের মিতা দাস বক্তৃতা করেন। সূচনা বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর শরীফ হাসান লিমন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলা ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ দুলাল হোসেন এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক নিশাত তারান্নুম। পরে বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জাতির জনক ও তাঁর পরিবাবেরর সদস্য যারা ১৫ আগস্টে শাহাদাৎ বরণ করেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস।