চামড়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ব্যবসায়ী ও মালিকরা

  • ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

লালবাগের পোস্তা। ছবি: সৈয়দ মেহেদী হাসান

লালবাগের পোস্তা। ছবি: সৈয়দ মেহেদী হাসান

ঢাকা: ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে এ বছর চামড়ার দাম কমেছে বলে দাবি করেছে ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে চামড়ার দাম নিয়ে পাড়া-মহল্লায় রাজনৈতিক কর্মী বা ক্লাবগুলো সিন্ডিকেট করেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। ফলে চামড়ার নিয়ে সিন্ডিকেট নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রয়েছে দু'পক্ষ।

২০১৩ সাল থেকে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত পাঁচ বছরে চামড়ার দাম কমেছে গড়ে ৪০ টাকা বা ৫৫ শতাংশ। ২০১৩ সালে যেখানে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার সর্বোচ্চ দাম ছিল ৯০ টাকা এবারে তা ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে অভিযোগ আছে চামড়া বিক্রির সময় নির্ধারিত দামও পাওয়া যায় না।

বিজ্ঞাপন

মৌসুমী ব্যবসায়ী ও মজুদকারী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ট্যানারি মালিকরা একজোট হয়ে চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বাজার যাচাই না করে সরকারকে তারা বাধ্য করছে নিজেদের পছন্দমত দাম নির্ধারণে।

মেসার্স এস.ডি. এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার দিদার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, চামড়া দাম কমার জন্য সিন্ডিকেট দায়ী। এ ক্ষেত্রে বড় সিন্ডিকেট ট্যানারি মালিকরা। তারা একত্রিত হয়ে এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে আমাদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এবারের মতো আমরা কোনবারই ক্ষতির সম্মুখীন হইনি।

লালবাগের পোস্তার বেশ কয়েকটি চামড়ার গুদামের মালিক এমন অভিযোগ করে বলেন, ট্যানারির মালিকদের এই সিন্ডিকেট দাম কমার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তারাই সরকারকে দাম নির্ধারণ করতে বাধ্য করেন। আবার সেই দামে চামড়া কিনতে চান না। এবারের মতো ক্ষতি কোনোবারেই হয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি হাজী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত কয়েক বছরে চামড়ার দাম এত কম দেখিনি। নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামে বেচাকেনা হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ পশু বেশি জবাই হয়েছে। তাই চামড়ার দাম কিছুটা কম বলে মনে হচ্ছে।

তবে চামড়ার দাম নিয়ে ট্যানারি মালিকরা কোনো সিন্ডিকেট করেন নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির দাবি, পাড়া-মহল্লায় রাজনৈতিককর্মী বা ক্লাবগুলো সিন্ডিকেট করেছে। পরবর্তী সময়ে ট্যানারিগুলো বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া কিনবে বলেও জানিয়েছে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনের নেতারা বলছেন, এ বছর কাঁচা চামড়ার দরপতনে, কোরবানির পশুর চামড়ার কম দাম পেয়েছে সাধারণ মানুষ। আবার অনেক ফড়িয়া এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীও বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া কিনে এনে লোকসানে তা বিক্রি করেছে আড়ৎগুলোতে। দামের অস্থিরতার জন্য দায়ী পাড়া-মহল্লার সিন্ডিকেট।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, ‘এখানে পাড়া-মহল্লাভিত্তিক সিন্ডিকেট হয়। এখানে দেখা যায়, রাজনৈতিক কর্মীবাহিনী, সামাজিক ক্লাবভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন- এলাকাভিত্তিক চামড়ার দাম তারা কন্ট্রোল করে। এখানে তারা যদি ২০০-৩০০ টাকা করে ক্রয় করে, ট্যানারি মালিকদের এখানে কী করার আছে?’ তবে পরবর্তী সময়ে যখন ট্যানারিগুলো কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করবে, তখন বেঁধে দেওয়া দাম মাথায় রেখেই চামড়া কেনা হবে।

জানা গেছে, চলতি বছরের জন্য ট্যারিফ কমিশন লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে ১০ টাকা কমিয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করে। গেল বছর আন্তর্জাতিক বাজারে ‘এ’ গ্রেডের প্রতি বর্গফুট ফিনিশড চামড়ার দাম ছিল দুই থেকে তিন ডলার বা ১৬০ থেকে ২৪০ টাকা। চামড়া কেনা থেকে ফিনিসড বা ক্রাস্ট পর্যায় পর্যন্ত প্রতি বর্গফুটে সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ১০০ টাকা।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে সারাদেশ থেকে কম বেশি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।