চুয়াডাঙ্গা-১: গ্রুপিং রাজনীতিতে জড়িত আ.লীগ-বিএনপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মাঠে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। অনেকটা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তারা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম একেবারে নেই বললেই চলে। মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে বেশিরভাগ নেতাই রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। বাকিদের মধ্যে কেউ আছেন শীর্ষ ব্যবসায়ী, কেউবা জনপ্রতিনিধি, কেউবা আবার নারীনেত্রী।
তবে সবাই দলীয় প্রতীক নিয়ে সরাসরি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে চান।
ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী তাদের নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি নানাভাবে শুরু করেছেন প্রচার প্রচারণা। তারা ছুটছেন নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি। অংশ নিচ্ছেন এলাকার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। এলাকায় বিভিন্ন সড়কের পাশে গাছে শোভা পাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রং-বেরংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন।
চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-১ সংসদীয় আসন। ভোটার ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৮ জন। পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৮৮ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৮০ জন। আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আঘাত হানে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। পরবর্তীতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ছেলুন জোয়ার্দ্দার এ আসন থেকে নির্বাচিত হলে বিএনপির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রুপিং রাজনীতির কারণেই চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে হেরে যায় বিএনপি। এবার গ্রুপিং রাজনীতির একই অবস্থার দেখা মেলে জেলা আওয়ামী লীগেও। আগে এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার যতবারই চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তার বিপরীতে কেউই মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি। তবে এবার তার ব্যত্যয় ঘটবে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিগত ৫ বছরে জেলা আওয়মী লীগে কোন্দল বাধে বড় পরিসরে। এরই মধ্যে একাধিক ব্যক্তি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনী প্রচারণাও চালানো শুরু করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার জানান, আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। দলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনেকেই মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করবেন। তবে মনোনয়নের ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে মেনে নেবেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ৮ জন প্রার্থী ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করেছেন আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ও চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআই এর পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, বাংলাদেশ আওয়ামী মহিলা লীগের সহ-সভানেত্রী শিরিন নাঈম পুনম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশাদুল হক বিশ্বাস, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন খোকন, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবার বিষয়ক সম্পাদক ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদী ও বাংলাদেশ কৃষকলীগের দফতর সম্পাদক নাজমুল ইসলাম পানু।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির অবস্থা খারাপ। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুর ভাই ওয়াহেদুজ্জামান বুলা ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরিফুজ্জামান শরীফ তিনটি পৃথক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বিএনপি দলে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা তেমন চোখে না পড়লেও এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন ৮ জন প্রার্থী। এরা হলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি শামসুজ্জামান দুদু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরিফুজ্জামান শরীফ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল জব্বার সোনা, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. এমএ সবুর, আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মীর মহিউদ্দিন ও বিএনপি নেতা শহিদুল কাউনাইন টিলু।
এদিকে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন একজন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন তিনি। এছাড়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রুহুল আমিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জিনারুল মাওলানা জহুরুল ইসলাম ও জেলা জাসদের সভাপতি এম সবেদ আলী চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে নিজ নিজ দলের কাছে মনোনয়নের জন্য লবিং করছে।