ইভিএম কিনতে উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে ১১০ কোটি টাকা নিচ্ছে ইসি
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে পরিকল্পনা কমিশনের ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাত থেকে ১১০ কোটি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটে (আরএডিপি) চার কিস্তিতে অর্থ ছাড়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অর্থ বিভাগকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে শর্ত জুড়ে দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, বরাদ্দ করা অর্থ প্রকল্পের অনুমোদিত বিস্তারিত প্রকল্প পরিকল্পনার (ডিপিপি) অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজন অনুসারে সব বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক ব্যয় করতে হবে এবং উক্ত বরাদ্দ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের আরএডিপিতে প্রতিফলন করতে হবে।
গত ২৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন এক লটারির দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসন নির্ধারণ করে। এই ছয়টি আসনে সোয়া ২১ লাখ ভোটার ইভিএম ব্যবহার করে ভোট দেবেন। ইভিএম ব্যবহার করা আসনগুলো হলো, ঢাকা-৬, ১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২।
এদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের দাবি, আসন্ন নির্বাচনে ইভিএম কোনোভাবেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ সিস্টেমটাই ত্রুটিপূর্ণ। এই পদ্ধতি দিয়ে কখনও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। তারা (নির্বাচন কমিশন) পুরোপুরি সরকারের তল্পিবাহক হয়ে গেছে। সরকার যা চাইছে তারা সেটাই করছে।
তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, তিন ধাপে মোট দেড় লাখ ইভিএম কেনা হবে এবং চলতি অর্থবছরে ৫০ হাজার মেশিন কেনা হতে পারে। এসব মেশিনের ওয়ারেন্টি ১০ বছর। এগুলো আগামী নির্বাচনে সীমিত আকারে ব্যবহারের জন্যই কেনা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের সচিবালয় এক চিঠিতে পরিকল্পনা কমিশনকে জানিয়েছে, বরাদ্দের ১১০ কোটি টাকার মধ্যে ১০৫ কোটি টাকা মূলধন খাতের অর্থ। বাকি ৫ কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে নেওয়া হচ্ছে। বরাদ্দ অর্থ উন্নয়ন বাজেটের বিভাজন হচ্ছে ইভিএম ব্যবহার শীর্ষক প্রকল্পের অফিসারদের বেতন বাবদ ১০ লাখ টাকা, ভাতা ৩০ লাখ টাকা এবং রাজস্ব খাতে ব্যয় হবে ৫ কোটি টাকা। এছাড়া প্রকল্পের জন্য মোটরযান, ইভিএম এবং যন্ত্রপাতি আমদানি ও সরাঞ্জমাদি কম্পিউটার সফটওয়্যার, আসবাবপত্র কিনতে খরচ হবে ১০৫ কোটি টাকা। যা মূলধন ব্যয় হিসেবে দেখাতে হবে।
শর্ত অনুসারে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের উন্নয়ন বাজেটের অধীনে ব্যয় করতে হবে। চলতি অর্থ বছরে ইভিএম কেনার জন্য প্রকল্পের ডিপিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে এক হাজার ৯৯৮ কোটি ৯ লাখ টাকা।
এর আগে ইভিএম কিনতে জটিলতা নিরসনে এবং নিয়মনীতি মেনে অর্থবিভাগকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুদল মুহিত। কিন্তু নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও এখনো ইভিএম ক্রয় সম্পন্ন করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। কেননা অর্থের সংস্থান হয়নি। এমনকি ক্রয় কমিটিতেও এ ধরনের কোনো প্রস্তাব পাস হয়নি। এ নিয়ে ইসি ও পরিকল্পনা কমিশনের মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। যার কিছু নথিপত্র অর্থবিভাগেও পাঠানো হয়েছে। ফলে এ নিয়ে অর্থবিভাগকে দ্রুত অর্থের সংস্থান ও নিয়মনীতি মেনেই প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়ের নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন গত অক্টোবরে ইভিএম কিনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চেয়েছিল। হঠাৎ এই চাহিদা আসায় অর্থ মন্ত্রণালয় সে সময় কোনো জবাব দেয়নি। কেননা বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। সে সময় অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা নেই বললেও এখন অর্থের ব্যবস্থা করছে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাজেট থেকেই অর্থ নিতে হবে। প্রয়োজনে সংশোধিত বাজেটে ইভিএম প্রকল্পকে যুক্ত করা যায় কি-না সে ব্যাপারেও আলোচনা হচ্ছে। এ জন্য নীতিমালা ও আইনগত ভিত্তিগুলো বিশ্লেষণ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনু বিভাগ।
এদিকে এ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ইভিএম কেনার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য টাকা বরাদ্দ ছাড়াই চীন ও হংকং থেকে ইভিএমের মূল যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানির কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এই ইভিএম আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুমোদনও দিয়েছে ইতোমধ্যে। এর আগে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এতে দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয় গত ১ জুলাই ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। ওই প্রকল্পে পুরো অর্থায়নের উৎস ধরা হয় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।
অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ খাতে বরাদ্দ থাকা ৫৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইভিএম মেশিন পরিচালনার জন্য দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ৩ হাজার ১১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। শুধু তাই নয়, এ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য ইভিএম মেলারও আয়োজন করা হয়েছে।