আয় বেড়েছে মেননের, স্ত্রী লাখপতি থেকে কোটিপতি
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। বিগত ১০ বছর সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে তার আয় বেড়েছে। অন্যদিকে তার স্ত্রীও অনেকটা শূন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন।
রাশেদ খান মেননের হলফনামার তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১০ বছরে মেননের বাৎসরিক আয় বেড়েছে ৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকার বেশি। অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৫১ লাখ ৮৮ হাজার টাকার বেশি। স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে তার বাৎসরিক আয় প্রায় চারগুণ ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে তিনগুণের বেশি।
অপরদিকে স্থাবর সম্পত্তির দিক থেকে গত ১০ বছরে তার স্ত্রী হয়েছেন কোটিপতি। নবম ও দশম নির্বাচনী হলফনামায় তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ২৪০ টাকা।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী মেননের স্ত্রীর নামে একটি বাড়ি রয়েছে। এটির মূল্যই ১ কোটি ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ২৪০ টাকা দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে রাশেদ খান মেননের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ২২ গুণ। অর্থাৎ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তা ৫৬ লাখ ৬২ হাজার ৪৩০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৩০ টাকা।
নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেখা গেছে একটি টয়োটা জীপ প্রাডো গাড়ি রয়েছে রাশেদ খান মেননের। গত দশ বছরে তার যানবাহনের সংখ্যা কমেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী তার ব্যবহৃত গাড়িটির দাম ৬১ লাখ ৮৫ হাজার।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার টয়োটা জীপ প্রাডো এবং টয়োটা স্টেশন ওয়াগন মডেলের দুইটি গাড়ি ছিল। এগুলোর মূল্য যথাক্রমে ৬০ লাখ ও ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী তার গাড়ি ছিল দুইটি। এর মধ্যে ৫ লাখ মূল্যের টয়োটা করোলা গাড়ি ছিল একটি এবং ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের অপর একটি গাড়ি ছিল।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় রাশেদ খান মেনন মোট আয় দেখিয়েছিলেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৭২৪ টাকা। তার স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও অস্থাবর সম্পত্তি ছিল টাকার পরিমাণে ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং তাদের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ১০ বছর পর রাশেদ খান মেননের ওপর নির্ভরশীলদের আয় ও অস্থাবর সম্পত্তি চলে এসেছে শূন্যের কোটায়।
নবম-দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় পার্থক্যে দেখা যায়, মেননের নিজ নামে অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৩ গুণ। তবে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী এই বাম নেতার অস্থাবর সম্পত্তি কমেছে ১১ লাখ ১২ হাজার টাকার কিছু বেশি।
একইসঙ্গে নবম জাতীয় সংসদের হলফনামা অনুযায়ী তার স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও তার পাঁচ বছর পরে তার নিজ নামে স্থাবর সম্পত্তি হয়েছিল ৩০ লাখ টাকার। একাদশ সংসদের নির্বাচনের সময় আরও ৭ লাখ ২০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে তার।
নবম ও দশম নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার ব্যবসা থেকে আয় বেড়েছিল দ্বিগুণ এবং পত্রিকায় কলাম লেখা বাবদ আয় বেড়ে হয়েছিল প্রায় সাতগুণ। এর মধ্যে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তিনি ব্যবসা থেকে আয় করতেন ৩ লাখ টাকা এবং পত্রিকায় কলাম লিখে আয় করতেন ২৫ হাজার ৭২৪ টাকা। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী ব্যবসা থেকে তার আয় ৬ লাখ টাকা এবং পত্রিকায় কলাম লিখে তার আয় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী তিনি ব্যবসা থেকে আর আয় করেন না।
হাতে নগদ টাকার পরিমাণও বেড়েছে রাশেদ খান মেনন ও তার স্ত্রীর। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী মেননের কাছে নগদ অর্থ ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার এবং তার স্ত্রীর কাছে ছিল ৩০ হাজার টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তাদের হাতে নগদ টাকা রয়েছে যথাক্রমে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ১৪ টাকা ও ৭ লাখ ৯৬ হাজার ২২০ টাকা।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনি ম্যানুয়েল অনুযায়ী, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে হলফনামায় কোন প্রার্থী তথ্য প্রদান না করলে অথবা কোন অসত্য তথ্য প্রদান করলে বা হলফনামায় উল্লিখিত কোন তথ্যের সমর্থনে যথাযথ সার্টিফিকেট, দলিল ইত্যাদি দাখিল না করা অপরাধ। এ ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে অথবা আদেশের ১৪ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত কোন ব্যক্তির আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্ত তদন্ত করে মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারবেন।