৩০ বছর পর নৌকায় ভোট দেবে গাংনীর আ.লীগ!



মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪.কম
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা। ছবি: বার্তা২৪.কম

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে (এমএনএ) নির্বাচিত হয়েছিলেন মেহেরপুরের গাংনীর নুরুল হক। ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের জন্ম হলে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয় এবং পরবর্তী নির্বাচনে ১৯৮৬ সালেও এমপি নির্বাচিত হন। এরপর দু’বার নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। ১৯৮৬ সালের পর থেকে দীর্ঘ এই ৩০ বছরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানা কারণে নেতাকর্মীরা বিনা বাধায় সকলে মিলে এক সঙ্গে নৌকায় ভোট দিতে পারেননি।

তবে দীর্ঘ পথপরিক্রমায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সেই চিত্র পাল্টে গেছে। দুই গ্রুপের স্থানীয় হেভিওয়েট প্রার্থীকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকনকে। তাকে ঘিরেই দলের উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ। মনোনয়ন বঞ্চিত কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না।

ফলে এবারের নির্বাচনে প্রাণ খুলে নৌকায় ভোট দিতে প্রস্তুত গাংনীর আওয়ামী লীগ। এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা। জয়ের ব্যাপারেও তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এবারের প্রার্থী সাহিদুজ্জামান খোকন দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। এক সময়ের তুখোড় ছাত্র নেতা। তিনি এমএ খালেক গ্রুপে থাকলেও গ্রুপিং রাজনীতিতে খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না। সব পক্ষের লোকজনের সঙ্গেই তার ভালো সম্পর্ক ছিল। তাই এবারে তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় উভয় গ্রুপের লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ মকবুল হোসেন মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নৌকার পক্ষেই কাজ করছেন। এমএ খালেক ও মকবুল হোসেন ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় মাঠ পর্যায়েও পড়েছে ইতিবাচক প্রভাব। তৃণমূলের গ্রুপিংও নিরসন হয়েছে। কোনো গ্রুপ কিংবা পক্ষ নয়, সবাই এখন নৌকার পক্ষেই প্রচারণা ও ভোট চাইছেন। এছাড়াও ক্ষমতায় না আসলে অস্তিত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে আশঙ্কায় নৌকার প্রতীককে বিজয়ী করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে সাংসদ মকবুল হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার জন্য যা যা করণীয় তাই করছি। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তারপরেও আমি নৌকা প্রতীক বিজয়ী করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক বলেন, ‘শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরার পর এখানে নৌকা জেতেনি। তাই এবারে আমরা বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনাকে এ আসনটি উপহার দেব।’

জানা গেছে, দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জিল্লুর রহমান ১৭ হাজার ৯৬৫ ভোট পেয়ে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ (মিজান) প্রার্থী জালাল উদ্দিন ৭ হাজার ৪৪০ ভোট পেয়ে তৃতীয় আর আওয়ামী লীগ (মালেক) প্রার্থী ইনামুল হক ৫ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন। এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ দুই প্রার্থীকে ভোট দেয়।

১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ফ্রিডম পার্টি এবং আ.স.ম রবের নেতৃত্বে ৭৬ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়। ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে ফ্রিডম পার্টির বজদুল হুদা (বঙ্গবন্ধু হত্যায় ফাঁসি কার্যকর) এ আসনটিতে জয়লাভ করে। এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালের ২৭ জানুয়ারি। এ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আব্দুল গনি ২৯ হাজার ৬৪৯ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের হিসাব উদ্দিন ২৮ হাজার ৪৭৪ ভোট পান। এ নির্বাচনেও জয়ের মুখ দেখেনি আওয়ামী লীগ।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মকবুল হোসেন ৪৫ হাজার ৮২০ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আব্দুল গনির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৩ হাজার ৮৬১টি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসাব উদ্দিন মাত্র ১ হাজার ৭৭১ ভোট পান। অবশ্য এ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর টেলিভিশন মার্কাকেই নৌকা প্রতীক মনে করে ভোট দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

ওই সময়ের ভোটের মাঠের অন্যতম নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম জানান, ১৯৯৬ সালে ঐক্যবদ্ধভাবে থানা আওয়ামী লীগের ৫১ জনের মধ্যে ৪৮ জন মকবুলের পক্ষে ছিলেন। মকবুলের টেলিভিশন মার্কাকে নৌকা প্রতীক মনে করেছিলেন। পোস্টারে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু লেখা এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল। প্রার্থী হিসাব উদ্দিনও মকবুলকে সমর্থন দিয়েছিলেন।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আব্দুল গনি ৮৬ হাজার ৭৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মকবুল হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬৩ হাজার ৩৩২টি। এ নির্বাচনের সময় দলীয় কিছু কোন্দল এবং প্রতিপক্ষের হামলা ও বাধা দেয়ার কারণে নির্বিঘ্নে নৌকায় ভোট দেয়া যায়নি বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ওই সময়ের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী নেতৃত্ব প্রদানকারী কয়েকজন নেতা।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি প্রার্থী আমজাদ হোসেন ৮৬ হাজার ৭৬৮ ভোট পেয়ে জয়ী হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মকবুল হোসেন পেয়েছিলেন ৮৪ হাজার ২৭৯টি ভোট। ব্যবধান ছিল মাত্র ২ হাজার ৪৮৯ ভোট। এ নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে অনেকেই নৌকায় নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি বিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মকবুল হোসেন। ফুটবল প্রতীকে তার প্রাপ্ত ভোট ৪৬ হাজার ৭৭০টি। অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমএ খালেক নৌকা প্রতীকে পান ৩৬ হাজার ৪৮৯ ভোট। এ নির্বাচনেও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র ও নৌকায় ভোট দেয়।

   

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন, প্রথম ধাপ

উপজেলায় কম ভোটের রেকর্ড, চিন্তা বাড়াচ্ছে ক্ষমতাসীনদের!



রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে চলছে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন। এই নির্বাচনের প্রথম ধাপে মোট ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বনিম্ন গড়ে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছে।

লিফলেট বিতরণ, প্রতীক বাতিল ও স্বজন নিষেধাজ্ঞাসহ নির্বাচনে প্রতিযোগিতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে না পারায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের।

গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় সবধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। রাজনৈতিক মাঠের প্রধানবিরোধী দল নির্বাচনে না থাকায় নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কমেছে জনগণেরও। সেটা বুঝতে পেরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে প্রতীক তুলে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। পরে নির্বাচনকে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, স্বজনদের ওপর। তবে তাতেও কাজ হয়নি। নির্দেশনা মানেননি প্রার্থীরা।

এর আগে, বুধবার (৮ মে) প্রথম ধাপের ১টি ৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি উপজেলায় ইভিএম ও বাকিগুলোয় ভোট নেওয়া হয় ব্যালট পেপারে।

এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫শ ৭০, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬শ ২৫ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪শ ৪০ জনসহ মোট ১ হাজার ৬শ ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। উদ্বেগের বিষয়, কেন্দ্রের কড়া নির্দেশনার পরও কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই বিজয়ী হয়েছেন চেয়ারম্যান পদে ৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন করে মোট ২৮ জন প্রার্থী।

জানা যায়, এর আগে হওয়া পাঁচটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্যে গত ২০১৯ সালের নির্বাচনে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছিল ৪১ শতাংশের কিছু বেশি। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১ শতাংশ। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। সে সময়েও ভোট পড়েছিল ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, উপজেলা নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তক সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ে ১৯৮৫ ও ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত হয় দুটি নির্বাচন। তবে সে সময়ের সঠিক তথ্য জানা না গেলেও সংশ্লিষ্টরা জানান, তখনও এর চেয়ে বেশি ভোট পড়েছিল।

জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও উপজেলা নির্বাচনে ভোটার কম হওয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বার্তা২৪.কমের এই প্রতিবেদক।

নাম প্রকাশ না-করার শর্তে তারা বলেন, আমাদের দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনটিকে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার জন্য এত চেষ্টা করার পরেও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়াটা সত্যিই উদ্বেগজনক! তবে বিএনপির মতো বড় একটি দল যদি নির্বাচনে না আসে, সে ক্ষেত্রে জনগণের আগ্রহও অনেকটা কমে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, সামনের তিন ধাপের নির্বাচনে যেন ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো যায়।

তবে নির্বাচনে এমন ভোটার উপস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলতে নারাজ দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির অফিসে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়াটা উদ্বেগজনক কি না, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচন কমিশনও এব্যাপারে হিসাবটা এখনো দিতে পারেনি। আনুমানিক ৩০-৪০ শতাংশ বলছে, (নির্বাচন কমিশন)। ৩০-৪০ শতাংশ হলে আমরা বলছি, এটা সন্তোষজনক’।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমতে থাকা বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য এক অশনি সংকেত। এ থেকে উত্তরণের পথ এখনই খুঁজে বের করার তাগিদ দেন তারা।

তারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যেখানে নির্বাচনকে সবসময় একটি উৎসবে পরিণত করেন, সেখানে জনগণের এমন ভোটবিমুখতা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। প্রয়োজনে ভোটার উপস্থিতির হার নির্দিষ্ট করে দিয়ে তার কম ভোট পড়লে ফের নির্বাচনের পক্ষেও মত দেন তারা।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আপনি যখন জানবেন, ভোট দিলেও যা হবে, না-দিলেও তাই হবে, তখন আপনি ভোট দিতে যাবেন কেন! প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে উপাদান, তা কৃত্রিমভাবে তৈরি করে তো বেশি দূর আগানো যায় না। যেখানে দেশ দুটি ভাগে বিভক্ত, একটি পক্ষ নির্বাচন বর্জন করছে; আরেকটি পক্ষ চিন্তা করছে, যেহেতু নির্বাচনে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, তাই তারা তাদের প্রাত্যহিক কাজে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ, এটা তাদের নিজের ও পরিবারের জন্য বেশি ভালো’।

নির্বাচন নিয়ে চলমান সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতে হবে। যে পদ্ধতিতে আমরা ভোট নিচ্ছি, সেখানে ১ ভোট পড়লেও আইনে তো সমস্যা হবে না। সেখানে যদি আমরা একটা পার্সেন্টেজ বেঁধে দিই যে, ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে তাহলে ফের দ্বিতীয়বার ভোটের আয়োজন করতে হবে; এমন কোনো শর্ত আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না দিচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত এমনভাবে নির্বাচন চলতেই থাকবে’।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, বিএনপি’র ভোট বর্জন, অতীতের আগুন সন্ত্রাস এগুলোও একটা কারণ ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার। এছাড়াও এখন যেহেতু ধান কাটার মৌসুম চলছে আবার অন্যদিকে ভোটের দিন বিভিন্ন জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি ছিল, তাই অনেক মানুষ ভোট দিতে আসতে পারেননি।

আবার বিএনপিকে ভোটের মাঠে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী স্বীকার করে নিয়ে সেই নেতারাই বলছেন, বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তাই জনগণের বড় একটা অংশ নির্বাচনের বাইরেই থেকে গেছেন। বিএনপির এমন নির্বাচনবিমুখতাও ভোট কম পড়ার কারণ।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এই ভোটে নির্বাচনের কোনো অঙ্গহানি হয়নি। মানুষ ভোট কেন্দ্রে গেছে। এই নির্বাচনের ভালোদিক- কোনো খুন-খারাবি হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। কেউ প্রভাব বিস্তার করেনি। বিএনপি নির্বাচনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যে প্রচারণা চালাচ্ছে, মানুষকে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে, এসবের কিছু প্রভাব তো অবশ্যই আছে। তবে এগুলো করে বিএনপির কোনো লাভ নেই। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা অক্ষুণ্ণ থাকবে। জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচন যে যথাসময়ে হচ্ছে, এটাই তো মনে করি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটা ধাপ’।

‘আগামী তিন ধাপে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে’ এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি ছিল। তারপরে ধান কাটার মৌসুম। আবার সিজনও (ঋতু) একটা ব্যাপার। শীতের সময় যেমন মানুষ সবাই নেমে যায়, একটা উৎসব হয়, চা খায়; একটা উৎসব-উৎসব ভাব থাকে, এটা কিন্তু সব সিজনে থাকে না। আবহাওয়া, প্রকৃতি সব কিছুই কিন্তু ভোটার উপস্থিতির ক্ষেত্রে নির্ভর করে’।

‘সবসময় জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, ভোট কেন্দ্রে আসার জন্য’ উল্লেখ করে দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, জনমতামত যাচাই হোক বা সরকার পরিবর্তন, সেটা ভোটের মাধ্যমেই হতে হবে। অন্যদিকে, বিএনপি রাজনীতি করবে কিন্তু নির্বাচনে আসবে না, সেটা কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

স্থানীয় নির্বাচন তো সবসময় ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই হয়। ভোট দিতে গেলে বিএনপি ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন-পেট্রোল বোমা হামলাও করতে পারে। এটাও একটা কারণ, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার। তবে এর সঙ্গে আরো অনেক কারণই আছে, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার’।

;

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন, প্রথম ধাপ

মসজিদের ইমাম, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট জাল ভোট দিয়েছেন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

৮ মে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, শিক্ষক এবং মসজিদের ইমামকে দিয়ে জাল ভোট দেওয়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস করে নির্বাচন কর্মকর্তাসহ পুরো প্রশাসন নির্লজ্জভাবে বিজয়ী এলিম চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছেন।

এ সব অভিযোগ করে পরাজিত দুই চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে এ উপজেলায় পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

শনিবার (১১ মে) দুপুরে সিলেট নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ করেন ও পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান।

পরাজিত তিন প্রার্থী হলেন- ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ, আনারস প্রতীকের প্রার্থী আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী লবিবুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ৮ মে গোলাপগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের নামে প্রহসন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এই প্রহসনের নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আহসান ইকবাল। এদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র দখল করে মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিমের কর্মী-সমর্থকেরা।

শাহিদুর রহমান অভিযোগ করেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বরায়া, হিলালপুর, হাজিপুর, মোল্লাগ্রাম ও কালিদাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আনারস ও ঘোড়া প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে দোয়াত-কলম মার্কায় ব্যাপক জাল ভোট দেওয়া হয়।

এমনকী এসব কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্টরাও জাল ভোট দিয়েছেন। মসজিদের ইমামকে দিয়েও দোয়াত-কলমের পক্ষে জাল ভোট দেওয়ানো হয়েছে। এলিমের ‘গুণ্ডা বাহিনী’ ভাদেশ্বর ইউনিয়নের শেখপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করতে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছোরা, চাকু, দা নিয়ে আনারস প্রতীকের তিনজন কর্মীর ওপর হামলা করলে মারাত্মক আহত অবস্থায় এখনো মৃত্যু শয্যায় লড়ছেন তারা।

তিনি বলেন, কেন্দ্র পরিদর্শন করার সময় কায়স্তগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গেলে এলিম চৌধুরীর ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ দেশিয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিকেল ৩টার দিকে আনারস ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীকে অবরোধ করে রাখে।

এসময় তারা ওই কেন্দ্রসহ আশেপাশের কেন্দ্রগুলোতে ‘টেবিল কাস্ট’ করে। সকাল থেকে বারবার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও গোলাপগঞ্জ থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেও আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি।

তাছাড়া মীরগঞ্জ, শেখপুর, নিয়াগুলসহ আরো কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ফুরিয়ে গেছে বা আসতে দেরি হচ্ছে, এমন হাস্যকর কারণ দেখিয়ে ভোটগ্রহণের গতি একেবারেই স্লো করে দেওয়া হয়। এতে আমাদের অনেক ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি।

পুলিশ আমাদের সহযোগিতা ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের পরিবর্তে শেখপুরে মানুষের বাড়িবাড়ি গিয়ে হামলা করেছে। এতে ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে আর কেন্দ্রমুখী হননি। এমন কী ভোট গণনাতেও ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে। ঘোড়া ও আনারস প্রতীকের অনেক ভোট ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা কারণে বাতিল করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই এলিম চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছেন। তারা তাকে নির্বাচিত করার নীলনকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছেন।

স্কুলের শিক্ষক, মসিজদের ইমামকে দিয়েও জাল ভোট দিয়ে আমার জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমন প্রহসনে গোলাপগঞ্জবাসী হতাশ! তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা গোলাপগঞ্জ থানার ওসি, এসআই লুৎফুর এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার শাস্তির দাবি জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী লবিবুর রহমান বলেন, নির্বাচনের নামে এমন প্রহসনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে তিন প্রার্থীই গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ৮ মে নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তারা এ ব্যাপারে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।

;

চতুর্থ ধাপে ৫৬ উপজেলায় ৭৩৭ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের শেষধাপে অর্থাৎ চতুর্থ ধাপের ৫৬ উপজেলা নির্বাচনে ৭৩৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, শেষ ধাপের এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৭২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

এদিকে, চারটি উপজেলায় চারটি পদে চারজন একক প্রার্থী রয়েছে৷ চেয়ারম্যান পদে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে টাঙ্গাইলের গোপালপুর, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় একজন করে প্রার্থী রয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের প্রার্থিতা যাচাই-বাচাই শেষে সব ঠিক থাকলে এই চার উপজেলার প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন।

চতুর্থ ধাপে ৫৬টি উপজেলার মনোনয়নপত্র বাছাই ১২ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩-১৫ মে, আপিল নিষ্পত্তি ১৬-১৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৯ মে, প্রতীক বরাদ্দ ২০ মে। আর নির্বাচন ৫ জুন।

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় বুধবার (৮ মে) ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৬ উপজেলায় ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ২২ টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১ ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।

;

উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৬ শতাংশ: ইসি আলমগীর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৬ শতাংশ: ইসি আলমগীর

উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৬ শতাংশ: ইসি আলমগীর

  • Font increase
  • Font Decrease

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলার ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে গণমাধ্যমের সাথে তিনি এই কথা বলেন।

ইসি আলমগীর বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। সেখানে ভোট পড়েছে ১৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলায়। সেখানে ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক এক শতাংশ।

 

;