প্রশাসন নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে: গউছ
প্রশাসন তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলেছে, তাই তারা নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জিকে গউছ।
তিনি বলেছেন, ‘সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিবেশ নেই। প্রশাসন তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলেছে। তারা নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করছে। ধানের শীষের কর্মী সমর্থকদের বাসা বাড়িতে গিয়ে হয়রানী করছে। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।’
মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব অভিযোগ করেন।
জেলা বিএনপির এ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৩৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে যতই হামলা মামলা করা হোক জনগণ আমার সঙ্গে আছে, আমি ভোটের মাঠ থেকে সরে যাব না।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত দিয়েছিলেন, কোনো রাজনৈতিক মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় বিশ্বাস করে বিএনপি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু হবিগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা উপেক্ষা করে নির্বিচারে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এতে প্রমাণ হচ্ছে, হয় প্রধানমন্ত্রীর কথা সঠিক নয়, না হয় হবিগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন প্রধামন্ত্রীর কথা শোনছেন না। এতে মানুষ হতাশ হয়েছে, রাষ্ট্রের একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতি এ রকম প্রতিশ্রুতি প্রত্যাশা করে না।’
জিকে গউছ বলেন, ‘আমি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু সোমবার রাতে পাইকপাড়ায় পুলিশের বর্বর হামলা দেখেছি। আমার ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমন ঘটনার মুখোমুখি হইনি। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সেই দিন নুরপুর ইউনিয়নে গণসংযোগ শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম। বাইপাস রাস্তার পাইকপাড়ায় আসা মাত্রই অন্ধকারের মধ্যে কয়েকশ পুলিশ আমাদের গাড়ি বহরে হামলা করে। তারা আমার দলীয় নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর করে। আমার গাড়ি থেকে টানা হেসড়া করে জেলা যুবদলের সভাপতি মিয়া মো. ইলিয়াছ, সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল চৌধুরী ও যুবদল নেতা নজরুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যায়। অনান্য গাড়ি থেকে ১৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এ সময় অনেকগুলো মোটরসাইকেল ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে তারা।’
তিনি আরও বলেন, কেনো আমার কর্মী সমর্থকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘চুপ থাকেন, কোনো কথা বলবেন না, মোবাইল বাজাবেন না, চিৎকার করলে গুলি করে দেব। জীবন বাঁচাতে চাইলে নির্বাচন থেকে সড়ে যান, কে বলেছে আপনাকে নির্বাচন করতে, আপনি নির্বাচন করার কারণে আমরা রাতের বেলায় ঘুমাতে পারি না। উপরের নির্দেশে আমরা রাত দিন আপনার কর্মীদের ধরতে ব্যস্ত থাকতে হয়’। একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি। আমি সাথে সাথে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে একাধিকবার ফোন করেছি। কিন্তু তিরি আমার ফোন রিসিভ করেননি।
জি কে গউছ বলেন, ‘শনিবার (২২ ডিসেম্বর) শায়েস্তাগঞ্জে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার নির্বাচনী প্রচারণায় শায়েস্তাগঞ্জের মেয়র ছালেকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লোকজন আমার উপর হামলা করেছে। আমার অনেক কর্মী আহত হয়েছে। আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাকে দুইঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে আমাকে উদ্ধার করেছেন। অথচ এ ঘটনায় আমাদের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এমন কঠিন অবস্থায় আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও মহিলাদলসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।