‘সিংহ দেখিয়ে দেবে, মার্কা বড় বিষয় না, ব্যক্তিই ফ্যাক্টর’
বগুড়া থেকে: উত্তরবঙ্গে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে বেশ আগেই, বেড়েছে তীব্রতাও। তবে আজকের দিনটা ব্যতিক্রম। শীতের তীব্রতার ছিটেফোঁটাও নেই। বগুড়ার কাহালু উপজেলার গ্রামগুলো শীতের সোনালী রোদে চিকচিক করছে। হালকা গরম কাপড়ে রোদটাও বেশ উপভোগ্য।
এমন একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ধুমছে প্রচারণা চালাচ্ছেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম। পুরো দেশজুড়ে যিনি পরিচিত হিরো আলম নামে।
‘আমি জিরো থেকে হিরো আলম- কেউ ঠেকবার পারবে না’-একাদশ সংসদ নির্বাচন যেন হিরো আলমের ‘যুদ্ধ জয়ের গল্প’। ভোটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু থেকে আলোচিত নাম হিরো আলম। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন সংগ্রহ, একটি গণমাধ্যমের টকশোতে বিতর্কিত প্রশ্নের সাহসী জবাব- সব মিলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘টক অব কান্ট্রি’- হিরো আলম।
এরপর জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা। রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়ন বাতিল। প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল-সব মিলে এমপি নির্বাচন করতে যুদ্ধ নেমেছেন হিরো আলম। হাইকোর্টে রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায়, সেই যুদ্ধে আপাতত তাকে জয়ী বলা চলে।
মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) হিরো আলমের নিজ সংসদীয় আসনে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়েছেন। সেই প্রচারণায় সাধারণ ভোটারদের ভালোবাসায় সিক্ত হতে দেখা গেছে তাকে।
মঙ্গলবার কাহালুর রাজধানী মোড়ইল মোড় এলাকা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন হিরো আলম। সেখানে মুহূর্তের মধ্যে শত শত জনতা তাকে ঘিরে ধরে। এ সময় প্রতিটি দোকানে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করেন। করমর্দন করে ‘চাচা, সিংগো মার্কায় একটা ভোট দিবেন, আর হামার জন্য একটু দোয়া করবেন’- এভাবে ভোট চাইতে দেখা যায় তাকে।
এলাকার ভোটাররা হিরো আলমের প্রতি ভালোবাসা দেখান এবং তার সাহসিকতার প্রশংসা করেন।
প্রচারণা চলাকালে ভোটারদের কাছে নিজ প্রতীক সিংহ মার্কায় ভোট চেয়ে হিরো আলম বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র লড়াই পার করে, আপনিকেরে কাছে আসিছি। আমি আপনাকেরে এলাকার হিরো, আপনাকেরে সন্তান। হামাক সিংগো মার্কায় ভোট দিয়ে, আপনিকেরে সেবা করার সুযোগ দেন।
প্রচারণা চলাকালে ভোটাররা অনেকেই মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দেন। হিরো আলমের সাহসের জন্য বাহাবা দেন। এমনকি কেউ কেউ আশ্বাসও দেন ভোট দেওয়ার। বগুড়া-৪ আসনে হিরো আলমের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মহাজোট মনোনীত এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন (নৌকা), বিএনপির মনোনীত মোশারফ হোসেন (ধানের শীষ)। দেশের দুই প্রধান দলের প্রার্থীর বিপক্ষে লড়বেন তিনি।
বড় দলের প্রার্থীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জেতার ব্যাপারে দৃঢ়চিত্ত হিরো আলম জানান, নির্বাচনে বড় বড় দলের লোক হেরে যায়, তবে আমার ক্ষেত্রে এমনটা হবে না। কেননা, মার্কা বা দল কোন বিষয় না, এখানে ব্যক্তিই আসল। ব্যক্তি জনপ্রিয় হলে জনগণ পছন্দ করে। আমি জনপ্রিয়, আমার হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
প্রচারণার সময় বার্তা২৪. কমের করা একাধিক প্রশ্নের উত্তরে হিরো আলম জানান, আমি সবাইকে বলেছি, আমি গরীব ঘরের মানুষ। আমি জিরো থেকে হিরো হয়েছি, তাই গরীবের ভালোবাসা নিয়ে থাকতে চাই।
নির্বাচনী হলফনামার তথ্যের বিষয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি হলফনামায় স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদের হিসাবে ১০ লাখ টাকা উল্লেখ করেছি। আমি এখানে কোন তথ্য গোপন করিনি।
গণসংযোগের সময় আরেক প্রশ্নের উত্তরে আলম জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি সেফুদা আমাকে নিজ সন্তানের মত দেখে। উনি আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য মানুষকে অনুরোধ করছেন। আমি ওনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
হিরো আলমের কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন, হিরো আলম দেখিয়ে .দেবে। সব মানুষ তাকে ভোট দিবে।
প্রসঙ্গত, বগুড়া ৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে হিরো আলমের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন মহাজোট মনোনীত এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন (নৌকা), বিএনপির মনোনীত মোশারফ হোসেন (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী (হাতপাখা), তরিকত ফেডারেশনের কাজী এম এ কাশেম (ফুলের মালা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আয়ুব আলী (আম) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের জীবন রহমান (টেলিভিশন)।