নির্বাচন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠার শেষ নেই। কেউ বলছেন, আগামী নির্বাচন হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্বাচন। আবার কেউ বলছেন, এই নির্বাচন গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচন।
সরকার বিরোধীরা মনে করছেন, গত ১০ বছরে এই অন্যায় অবিচারের মূল উৎপাটনসহ সাংবিধানিক জটিলতা নিরসন করে সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে পরিবর্তন দরকার। আর সরকার সমর্থকরা মনে করছেন, গত ১০ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন দেশের তরুণ প্রজন্ম? সেটাই জানার চেষ্টা করেছিলেন বার্তা২৪.কম’র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রতিনিধি রুদ্র আজাদ।
আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে জাবি’র মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘এবার তরুণ ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। যাদের বড় অংশ প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। তাই আমিও প্রথমবারের মতো সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই। যিনি জনগণের কথা শুনবেন, তাদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করবেন এবং জনগণের পক্ষে কথা বলবেন। আমরা চাই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, সবাই যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন।’
প্রার্থী পছন্দে তরুণদের কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘তরুণদের প্রার্থী পছন্দ করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেমন: প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রার্থীর বুদ্ধিমত্তা এবং সমস্যা সমাধানে তার পরিজ্ঞান, সাধারণ জনগণের সাথে যোগাযোগ স্পৃহা, দলীয় কর্মীদের মন জয় করার ক্ষমতা ইত্যাদি।’
জাবি’র দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ মোজ্জাম্মেল বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘এবারের নির্বাচন খুব বেশি ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করছি না। কেননা নির্বাচনের জন্য যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন সেটা নেই। এখনও রাজনৈতিকভাবে ধড়পাকড় চলছে। বিরোধী দলের প্রার্থীদের সাথে নির্বাচন কমিশনের আচরণ প্রহসনের জন্ম দিয়েছে। বর্তমান সরকারের অধীনে আমরা ২০১৪ সালে একটি ভোট বিহীন নির্বাচন দেখেছি। সে সময়ের সাথে বর্তমানের খুব বেশি পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে আশার ব্যপার হলো বিরোধী দলগুলোর সাথে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা। তিনি তার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হলে ভালো কিছু হবে।’
এবার কেমন সরকার চান- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জনগণের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে ও সকল নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারবে এমন সরকার চাই আমরা।’
দলীয় ইশতেহারে তারুণরা আস্থা রাখতে পারছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাবিয়া ইসলাম বলেন, ‘ইশতেহারের প্রতি আস্থা খুব কম, কারণ নির্বাচন হলো একটা খেলা আর সাধারণ জনগণ হলো এই খেলার নির্বাচনের খেলায় জিততে রাজনৈতিক দল ‘ইশতেহার’ ঘোষণা করে। ফলে আস্থার জায়গা খুব কম। রাজনৈতিক দল একবার নির্বাচিত হলেই সব ভুলে গিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে মেতে ওঠে।’
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, জাবি শাখার সভাপতি শাকিল উজ্জামান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জনগণের সুষ্ঠু প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকার চাই। যে সরকার জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে জনগণের জন্য কাজ করবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অনেক ত্যাগ তিতীক্ষার বিনিময়ে এই সোনার বাংলার পেয়েছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। যেই সরকার আসুক না কেন তাদেরকে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ফিরিয়ে দিতে হবে, তাদের আত্মত্যাগের গল্প প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিতে হবে, বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে এবং বৈষম্য দূর করতে হবে।
এছাড়াও দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।