পঞ্চগড়ে বিদ্রোহী প্রার্থীতে বেকায়দায় বিএনপি
জেলার সীমান্ত তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয়ের চূড়া আবছা দৃশ্যমান। হিমালয়ের সন্নিকটে হওয়ায় এই জেলায় শীতের দাপটটা থাকে সবচেয়ে বেশি। উত্তরের বাতাস থাকলেতো কথাই নেই।
বাংলাদেশের সংসদীয় আসনের গণনা শুরু হয় এখান থেকে। অর্থাৎ জাতীয় সংসদের ১ ও ২ যথাক্রমে পঞ্চগড়-১ ও ২ নামেও পরিচিত। ভোটের সমীকরণে আসন দু’টি কোনো নির্দিষ্ট দলের ঘাটি বলতে সায় দেয় না। অর্থাৎ অনেকটা জোয়ার ও প্রার্থীর উপর নির্ভর করেছে এই আসনের জয় পরাজয়। এবারও তেমনটাই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
জোটের সমীকরণে অনেকটা ব্যাকফুটে রয়েছে বিএনপি। পঞ্চগড়-২ আসনতো বিএনপি হাতছাড়া হচ্ছে এটা নিশ্চিত করে ধরে নিচ্ছেন অনেকে। এই আসনে এবার বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছে ফরহাদ হোসেন আজাদকে। আসনটিতে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম রূপকার প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে তাসমিয়া প্রধান এখানে জোটের অন্যতম দাবীদার ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী পরিবার হিসেবে তার রয়েছে একটি বিশাল ভোট ব্যাংক।
তাকে প্রার্থী না করায় স্থানীয়রা অনেকটা আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। তারা আশা করেছিলেন প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানকে সম্মান দেখিয়ে এতিম তাসমিয়া প্রধানকে অথবা রাশেদ প্রধানকে যেকোনো একটি আসনে জোটের প্রার্থী করবে বিএনপি। কিন্তু তাদের ভাইবোন কাউকেই মনোনয়ন না দেওয়া বিএনপির উপর অনেকেই নাখোশ।
এতে ভীষণভাবে চটেছেন প্রয়াত প্রধানের ছেলে মেয়ে দু’জনেই। তারা ভাইবোন দু’টি আসনে জাগপার দলীয় প্রতীক হুক্কা নিয়ে লড়ছেন। তারা যে ভোট টানবেন বেশিরভাগ বিএনপি ঘরানার। যে কারণে হুক্কা মার্কা বিএনপির প্রার্থীদের জন্য পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ ও আটোয়ারী নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে শক্তিশালী প্রার্থী ধরা হলেও ছেলে ঠিক কতটা সফল হতে পারবেন সে নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা।
তার বিপরীতে রয়েছে আওয়ামী লীগের মাজাহারুল হক প্রধান। যিনি ২০০৮ সালে জমির উদ্দিন সরকারকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। জেলার এই আসনে মোটামুটি উভয় প্রার্থীর পোস্টার ব্যানার শোভা পাচ্ছে। আবার বিএনপির অফিসও বেশ সরগরম। যদিও বিএনপির অনেকে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
জেলা যুবদলের নেতা মাহবুব উল আলম মন্টু বার্তা২৪কে বলেন, ডিসি এসপিসহ প্রশাসনও আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছে। এভাবে ভোট করার কোনো মানে হয় না। জেলা শহরের পোস্টার ব্যানার থাকলেও গ্রামের দিকে কোনো পোস্টার রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। ঝুলালেই ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে রাতের আঁধারে। আমাদের প্রার্থীর বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এই আসনে বিএনপির কাঁটা যেমন হুক্কা মার্কার প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের ছেলে রাশেদ প্রধান। তেমনি আওয়ামী লীগের কাঁটা হচ্ছে জাতীয় পার্টি। উন্মুক্ত এই আসনে দলটির নেতা আবু সালেক লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে যিনি অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। তিনিও সম্মানজনক ভোট পেতে পারেন।
আবু সালেক বার্তা২৪কে বলেন, আমিতো মনে করি এখানে ত্রিমুখী লড়াই হবে। যেই জিতুক অল্প ভোটের ব্যবধানে জিতবে। তবে মানুষ আওয়ামী লীগ-বিএনপির সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি দেখতে চায় না। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে অনেক গ্রুপিং রয়েছে। তারা অনেকে লাঙ্গল মার্কায় সিল মারবে।
অন্যদিকে বোদা ও দেবীগঞ্জ নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-২ আসনে প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে মাঠে থাকায় আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন ভোটাররা। এখানে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন নুরুল ইসলাম সুজন।
২০০১ সালে এই আসনে মাত্র ২ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হারলেও ২০০৮ সালে প্রায় অর্ধ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন বিএনপির মোজাহার হোসেনকে। উন্নয়ন ও জনগণের সঙ্গে সদ্ভাবের কারণে এবারও তাকেই এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা।