চেঙ্গিস খান : রহস্যময় এক বিশ্ববিজেতা



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
যার আগমন বদলে দিয়েছে গোটা পৃথিবীর ইতিহাস

যার আগমন বদলে দিয়েছে গোটা পৃথিবীর ইতিহাস

  • Font increase
  • Font Decrease

তিনি নিজেকে যতটা উচ্চতায় নিতে পেরেছিলেন; প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের কোনো একক ব্যক্তির পক্ষেই তা সম্ভব হয়নি। নিজের গোত্রের প্রতি উদারতা, অনুসারীদের জন্য ভালোবাসা কিংবা শত্রুর প্রতি নৃশংসতা; সমস্তই কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। হয়েছেন নিন্দিত এবং নন্দিত। কিন্তু তারপরেও এক অনির্বচনীয় রহস্য তাকে কেন্দ্র করে। চেঙ্গিস খান—অনুসারীদের কাছে ঈশ্বরের দূত হিসাবে বিবেচিত ইতিহাসের এক প্রলয়ঙ্কর চরিত্র।

তার আগমনের আগে এবং পরে পৃথিবীর ফারাক ছিল আকাশ পাতাল। চেঙ্গিস খান বিখ্যাত মোঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। জন্ম ১১৬২ সালে এবং মৃত্যু ১২২৭ সালে। তিনি ও তার বাহিনী সাম্রাজ্যের পরিধি এতটাই বৃদ্ধি করেন, রোমান শাসনকর্তারা চারশত বছরেও যা করতে পারেনি। হিন্দুধর্মে দেবতাদের অবতারবাদের ধারণা আছে। সেদিক থেকে দেখলে চেঙ্গিসকে অপদেবতার অবতার বলা যায়। ঐতিহাসিকরা তাকে “ঈশ্বরের অভিশাপ” বলে অভিহিত করেন। মঙ্গোলিয়ার ক্ষুদ্র এক গোত্রে জন্ম নিয়ে তিনি তৎকালীন পৃথিবীর নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছিলনে।

কিছু শৈশব

চেঙ্গিস খানের বাল্য নাম তেমুচিন। নামের অর্থ ইস্পাত। বাস্তবিক অর্থেই তার প্রমাণ দেখিয়েছেন। পিতা ইসুকাই ছিলেন বোরিজিন নামের এক মোঙ্গল যাযাবর গোত্রের প্রধান। অন্যান্য স্থায়ী কিংবা কৃষিনির্ভর গোত্রের মতো যাদের থিতু হবার খায়েশ ছিল না। তারচেয়ে ঢের পছন্দ ছিল শিকার এবং লুটপাট করা। তৎকালে একে অসভ্যতা বলে দেখার কোনো যুক্তি নেই। বরং বিশুদ্ধ বৈধ এবং পুরুষোচিত কাজ বলেই গণ্য হতো।

চেঙ্গিস খানের আগে যাযাবর তাতাররা ছিল বিক্ষিপ্ত


তারও আগের ঘটনা। হেলুন নামের এক কুমারী কন্যাকে বিয়ে দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। যাযাবরদের বিয়ে, এক গাদা ঘোড়সওয়ার আর বেশ মালসামান সাথেই। বিপত্তি ঘটল পথে। বরযাত্রীর সুখযাত্রাকে পণ্ড করে দিয়ে নববধূকে উঠিয়ে আনলেন এক যাযাবর নেতা। তাকে দিলেন নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীর সম্মান। সেই সংসারের দ্বিতীয় সন্তানই তিমুচিন। জন্মের সময় হাতে রক্ততিল থাকার কারণে মনে করা হয় ছেলে বয়সকালে বড় যোদ্ধা হবে। সেই বিশ্বাস পূরণ হতে দেরি হয়নি।

দুর্দিন ও গোত্রীয় দ্বন্দ্ব

তেমুচিনের বয়স তখন নয় বছর। পিতার বন্ধু ও প্রতিবেশি গোত্রের কোনো উৎসবে যোগ দেওয়া হয় সবাই মিলে। তার আগে কাজের জন্যই সেখানে তেমুচিনকে থাকতে হয়েছে বেশকিছু বছর। সেখানেই বোরতাই নামের এক বালিকা—পার্শ্ববর্তী গোত্রনেতার কন্যার সাথে বিয়ে হয় তার। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় ঘটে বিপত্তি। বিদ্রোহীদের হাতে বিষপানে মৃত্যু হয় তেমুচিনের পিতা ইসুকাইয়ের। উঠিয়ে নেওয়া হলো স্ত্রী বোরতাইকে। বিদ্রোহীরা বালক তেমুচিনকে অপসারণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছিল।

ওয়াং খানের দরবারে বালক তেমুচিন


তেমুচিনের পরিবারে তখন দুরবস্থা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে শিকড়, ফল কিংবা মাছ খেয়ে কোনোমতে দিন গুজরান করছে। কিন্তু শিকারি বিড়াল শৈশবেই চেনা যায় বলে একটা কথা আছে। তেমুচিন তার পিতার বন্ধু কেরাইট গোত্রের অধিপতি ওয়াং খানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। ওয়াং খান সম্মত হলে সৈন্য সাজিয়ে রওনা দিলেন বিদ্রোহী মেরকাইট গোত্রের মোকাবেলায়।

সাফল্য এবং উত্থান

প্রশ্ন বোরতাইয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং নিজ বংশের সম্মান রক্ষা—দুটোই। তেমুচিন ওয়াং খানের সাহায্য নিয়ে মেরকাইটদের সফলভাবে পদানত করেন। এই বিজয় তার পরবর্তী সাফল্যের পথ অনেকটাই সুগম করে দেয়। বংশের প্রায় হতাশ মানুষগুলো তাকে কেন্দ্র করে আবার একত্রিত হতে থাকে। তারপর তেমুচিন মনোযোগ দিলেন পিতৃশত্রু তাতার গোত্রের দিকে। এবং পরাজিত করলেন শোচনীয়ভাবে।

জামুকার বিরুদ্ধে বিজয় তাকে গোত্রের ভরসায় পরিণত করে


জামুকা নামের প্রভাবশালী এক গোত্রপতি তেমুচিনের উত্থানকে মেনে নিতে পারেনি। তাই, মেরকাইট, নাইমান এবং আরো কয়েকটি বিদ্রোহী গোত্রকে একত্রিত করে জোট গঠন করেন তেমুচিনের বিরুদ্ধে। দুই বাহিনী মুখোমুখি হলো ১২০৪ সালে। জামুকা পরাজিত এবং বন্দী হলো, পরে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে মোঙ্গল জাতির ওপর তেমুচিনের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। ১২০৬ সালে কারাকোরামে কুরিলতাই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে তিনি চেঙ্গিস খান উপাধি গ্রহণ করেন। রাজধানীর মর্যাদা পায় কারাকোরাম।

চীনের বিরুদ্ধে জয়যাত্রা

একসময়ের গৌরবে ভরা চীন তখন স্তিমিয়ে পড়েছে অনেকাংশেই। উত্তরে চীন এবং দক্ষিণে সাঙ বংশ রাজত্ব করত। চেঙ্গিস খান সবার আগে সাঙ বংশকেই লক্ষ্যবস্তু করে আক্রমণ করলেন। ১২১১ সালের এই অভিযানে বিশাল অংশ তার অধিকৃত হয়। ১২১৪ সালে চীন বংশের রাজধানী পিকিং অবরোধ করলে রাজা ভীত হয়ে পাঠায় সন্ধিপ্রস্তাব। সেই সাথে দেওয়া হয় অঢেল অর্থ, মণিমুক্তা এবং উপঢৌকন। উপহার এবং নবপরিণীতা চীনা রাজকুমারিকে নিয়ে সেই দফায় ফিরে এলেও মন ঘুরতে দেরি হয়নি। ১২১৫ সালে চেঙ্গিস খান আবার পিকিং অবরোধ করে এ পর্যায়ে দখল করে নেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি শত্রু পক্ষের ওপর একক আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়


এদিকে দেখা দেয় অন্য সমস্যা। তাতার নেতা গুরখান বিদ্রোহ করে বসে চেঙ্গিস খানের বিরুদ্ধে। কারাকিতাইয়ের এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য তিনি সেনাপতি জেবিকে প্রেরণ করেন। গুরখান পরাজিত ও নিহত হলে গোটা অঞ্চলে চেঙ্গিসের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

খাওয়ারিজম শাহের সাথে দ্বন্দ্ব

খাওয়ারিজমের শাসক তখন মুহম্মদ শাহ। বাগদাদ কেন্দ্রিক মুসলিম খিলাফতের পতনের সুযোগে মুহম্মদ শাহ মধ্য এশিয়ায় সুবিশাল এক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। চেঙ্গিস খানের সাথে তার দ্বন্দ্বের কারণ মূলত উভয়ের উচ্চাভিলাস এবং আত্মাভিমান। মোঙ্গল দূত হত্যা করার কারণেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধ ঘোষণা করেন চেঙ্গিস খান। ১২১৯ সালে চালানো এই সুবিশাল অভিযানে হতাহতের সংখ্যা ছিল প্রচুর। ছয় মাসের অবরোধের পর নিয়ন্ত্রণে আসে উস। ধীরে ধীরে দখল প্রতিষ্ঠিত হয় বোখারা, হিরাত, বলখ, খোজান্দ, তাসখন্দ, সমরখন্দ প্রভৃতি স্থানগুলো। ঐতিহাসিক গীবনের মতে, এই চার বছরে যে পরিমাণ ধ্বংস হয়েছে, তা পাঁচশত বছরেও পুনর্গঠন করা যায়নি।

প্রত্যেকটা নগরী তছনছ হয়ে যায় তাদের তাণ্ডবে


মুহম্মদ শাহ পালিয়ে জীবন যাপনের এক পর্যায়ে ১২২০ সালে মারা যান। মৃত্যুর পর তার স্থান দখল করেন পুত্র জালালউদ্দীন। দক্ষ এবং চৌকস যোদ্ধা ছিলেন তিনি। বেশ কয়েকবার মোঙ্গল বাহিনীকে পরাজিতও করেছিলেন। কিন্তু দিনশেষে ১২২১ সালের দিকে পিতার ভাগ্য বরণ করতে হয়। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে ১২৩১ সালে আততায়ীর হাতে তার মৃত্যু হয়।

শেষের দিনগুলো

ততদিনে চেঙ্গিস এশিয়ার প্রায় পুরো অংশ দখল করে ফেলেছে। দুই সেনাপতি জেবি এবং সেবুতি গিয়ে দখল করেন উত্তর-পশ্চিম পারস্য। তারপর সেনাপতিরা রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয় এবং খিবা অধিকার করে। ১২২৫ সালে চেঙ্গিস খান ফিরে আসেন দেশে। কিছুদিন পরেই চীনের সাঙ সাম্রাজ্যের অংশে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সারাজীবন ঘোড়ার পিঠে বসে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তারপরেও বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এই রওনাই তার পরবারের উদ্দেশ্যে রওনায় পরিণত হয়। ১২২৭ সালে চীন পৌঁছানোর পূর্বেই প্রাণত্যাগ করেন এই প্রতাপশালী পুরুষ।

শাসন ও আইনব্যবস্থাতেও তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য


চেঙ্গিস খান কেবল তার সময়ের না; বরং গোটা ইতিহাসের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শাসক। তার সামরিক দক্ষতার কারণেই মোঙ্গল বাহিনী এক অপরাজেয় শক্তিতে পরিণত হয়। পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম ধরে মোঙ্গল বাহিনী এশিয়া এবং ইউরোপের রাজাদের জন্য ত্রাস হিসাবে গণ্য হতে থাকে। প্রশাসক হিসাবেও তার খ্যাতি ব্যাপক। চীনা প্রশাসক ইয়েলু চুৎসাইয়ের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনকে ঢেলে সাজান, সৃষ্টি করেন গোয়েন্দা এবং বিচার বিভাগ। ধর্মের দিক থেকে তাকে সহনশীল বলেই গণ্য করা হয়। পূর্বতন চীনা শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে প্রভাবিত হয়ে নিজের রাজ্যকেও চালিত করেন সেই পথে। তার প্রবর্তিত আইনবিধান পরিচিত ‘উলাঙ্গ ইয়াছা’ নামে। 

মৃত্যুর পূর্বে তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল কাস্পিয়ান থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অব্দি


চেঙ্গিস খানের চারপুত্র—চাগতাই, ওগোতাই, জুসি এবং টুলি। পিতার মৃত্যুর পর তারা পূর্ববর্তী বেগেই জয় করতে থাকে একের পর এক রাজ্য। মুসলিম বিশ্বের ভিত্তিভূমি বাগদাদের পতন ঘটে ১২৫৮ সালে হালাকু খানের হাতে। তিনি ছিলেন চেঙ্গিসের নাতি। ছোট্ট একটা গোত্রের অধিপতির পুত্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করে চেঙ্গিস খান নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর সাম্রাজ্যের অধিপতিতে। তার রাজ্য বিস্তৃত হয়েছিল পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে পশ্চিমে কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত।

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;