আমেরিকা মহাদেশের মারাত্মক ক্ষতিকারক পোকা ‘ফল আর্মিওয়ার্ম’। ফসলের জন্য দুনিয়াজুড়ে একটি বিধ্বংসী পোকা হিসাবে পরিচিত এটি। আমেরিকা, আফ্রিকাসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে এ পোকাটি প্রবেশ করে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছে। পর্যায়ক্রমে ভারত হয়ে এই পোকাটি প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে।
সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গায় এ পোকার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, এটি শনাক্ত হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন ফসলি জমিতে এর উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোকাটির কারণে প্রথমেই ধ্বংসের মুখে পরবে দেশের ভুট্টা চাষ। এরপর ছড়িয়ে পড়বে ধান-গমসহ বিভিন্ন ফসলে। অল্প সময়ে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে এই পোকা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. খন্দকার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ফল আর্মিওয়ার্ম পোকাটি নিশাচর প্রাণী, দিনের বেলায় দেখা যাবে না। রাতের বেলায় এরা ডিম পাড়ে। হাজারখানেক ডিম পাড়তে পারে একেকটা পোকা। প্রথমে এটি কিড়া থাকা অবস্থায়ই ফসলের পাতা ও কান্ড খেয়ে দফারফা করে দেয় গাছ।
কিড়ার প্রাথমিক অবস্থায় এদের খাদ্য চাহিদা কম থাকে তবে শেষ ধাপগুলোতে এদের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায় ৫০ গুন। সে কারণে কিড়া পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগে রাক্ষুসে হয়ে উঠে এমনকি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। এমনকি এক রাতের মধ্যেই এরা সব ফসল নষ্ট করে ফেলতে পারে। পূর্ণাঙ্গ পোকা অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে। সেইসঙ্গে দিনে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি পাড়ি দিতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পোকাটি ভুট্টা, ধান, গমসহ প্রায় ৮০ টি ফসলে আক্রমণ করে থাকে। তবে ভুট্টা ফসলে এর আক্রমণের হার সর্বাধিক। এর ফলে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকির মুখে পড়বে। যেসব ইন্ডাস্ট্রিগুলোর ফিডওইসব ফসল থেকে আসে এগুলোও হুমকির মুখে পড়বে। সাথে সাথে ওই ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে সেক্ষেত্রে আমাদেরকে আবার হোঁচট খাওয়ার একটি সম্ভাবনা থেকে যাবে।’
তবে আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে দ্রুত সনাক্ত করার পর ফল আর্মিওয়ার্ম প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।