পহেলা বৈশাখ : আমাদের কৃষি ও সংস্কৃতি

  ‘এসো হে বৈশাখ’


অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা প্রায়শই বলে থাকি কৃষিই কৃষ্টি। কৃষ্টি শব্দের অর্থ - কর্ষন, লাঙ্গল চালনা, কৃষি কর্ম বা সংস্কৃতি। এথেকেই বুঝা যায়, এ অঞ্চলের সংস্কৃতি মূলতঃ কৃষি নির্ভর। পহেলা বৈশাখ, যার আদ্যোপান্ত পুরোটাই আমাদের এই কৃষি, প্রকৃতি এবং অর্থনীতির অংশ। প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য রেখেই কৃষক তার ফসলকে খাদ্যে রূপান্তরিত করে। মুঘল আমলে এটিকে অনুসরণ করেই শস্য উৎপাদন এবং খাজনা আদায়ের মধ্যে একটা সমন্বয় সাধনের জন্য স¤্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। আর তাই বাংলা নববর্ষ হলো নতুন এক ফসল চক্রের শুরু।

অনেক আগে থেকেই এ অঞ্চলের মানুষ ফসলের খাতিরে বছরকে মাস ও ঋতুতে বিভক্ত করে এসেছে। পূর্ণিমার চাঁদ রাশিচক্রের যে নক্ষত্রে (যেমন - বৈশাখা, জ্যৈষ্ঠা, আষাঢ়া, শ্রাবণা প্রভৃতি) দাঁড়িয়ে পূর্ণরূপে দেখা দিত, সে নক্ষত্রের নামানুসারে সে মাসের নাম হয়ে যায় বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ প্রভৃতি। ঠিক কবে থেকে সাল ও ঋতুর এরূপ ধারণা আমাদের হয়েছে তা সুচারুরূপে নির্ণীত নয়। তবে জানা যায়, রাজা শশাঙ্কের আমলে বাঙলা সনের ব্যবহার ছিল এবং সে সময় অগ্রহায়ণ মাসকে বছরের প্রথম মাস ধরা হত। কারন ‘হায়ণ’ আর্থ বছর, ‘অগ্র’ অর্থ প্রথম। হেমন্তের গোলা ভরা ধান আর নবান্নের উৎসবে মুখরিত মানুষ সে সময় অগ্রহায়ণে বাংলা নববর্ষের উৎসব করত।

চাঁদ, সূর্য ও নক্ষত্রের গতিবিধি, ঝড়-বৃষ্টি, শীত ও উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই লক্ষ্য করে এসেছে। আর তারা বহু দিনের এই পর্যবেক্ষণকে প্রয়োগ করেছে কৃষি কাজে। ফসল ফলার প্রকৃতিগত পদ্ধতিকে মানুষ জেনেছে তা এক নির্দিষ্ট সময়ের প্রক্রিয়া। আমাদের দেশের বর্ণময় বিচিত্র প্রকৃতির সাথে এই বাংলা সন প্রবর্তনের সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রকৃতি অনুযায়ী এ দেশের ফসল ফলে।

আর অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক হওয়ায় ফসল রোপণ ও সংগ্রহের মৌসুম অনুযায়ী বাংলা সনের প্রবর্তন হয়। এ জন্য বাংলা সনের আর এক নাম ‘ফসলী সাল’। এই ফসলী সাল খৃষ্টীয় সাল দিয়ে মাপা বেশ অসুবিধার ছিল কারণ ফসল রোপন ও সংগ্রহ করতে হত প্রকৃতির নিয়মে। প্রকৃতি ও ফসলের সাথে সঙ্গতি রেখে মোগল স¤্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। স¤্রাট আকবরের নির্দেশে সে সময়ের দিল্লী রাজদরবারের বিখ্যাত পন্ডিত আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী বাংলা সন উদ্ভাবন করেন।

স¤্রাট আকবর প্রবর্তিত এ বাংলা সন তখনকার বৃহৎ বঙ্গ অর্থাৎ সুবে বাংলায় গৃহীত হয় এ দেশের আর্থ-সমাজ ব্যবস্থার চালিকা শক্তি রূপে। গ্রাম ও কৃষি-অর্থনীতি নির্ভর দেশের রাজস্ব আদায় হত তখন ফসল থেকে। সুতরাং কর আদায়ের এমন একটা সময় নির্বাচন প্রয়োজন ছিল যখন সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়। অনেকের মতে রাজস্ব আদায়ের জন্য বৈশাখ ছিল অগ্রহায়ণের চেয়ে নানা দিক থেকে সুবিধাজনক।

কার্তিক- অগ্রহায়ণ মাসে বাংলার নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকা জলমগ্ন অথবা কর্দমাক্ত থাকার কারণে জমিদারের নায়েব গোমস্তাদের চলাচলের অসুবিধা হয় এবং সে সময় দিন ছোট থাকার কারণে দিনের মধ্যেই দূর অঞ্চলের কর আদায় করে তারা সেরেস্তায় ফিরে আসতে পারে না। সে কারণে চৈত্র- বৈশাখের বড় দিন এবং শুষ্ক পথ-ঘাট কর আদায়ের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক ছিল।

অতীতে সংস্কৃতির সঙ্গে অর্থনীতির দৃঢ় যোগাযোগ ছিল। কারণ এই অঞ্চলের জাতীয় অর্থনীতি তথা কৃষিজাতদ্রব্য উৎপাদন ও বাণিজ্যের লেনদেন পহেলা বৈশাখের সঙ্গেই জড়িত। কৃষি এবং ফসলের মঙ্গলকে কেন্দ্র করে এখানে বেশকিছু আচার বা উৎসব চালু ছিল। কৃষিজীবী সমাজের পারিবারিক পর্যায়ে এধরনেরই একটি মাঙ্গলিক উৎসবের নাম 'আমানী'।

চৈত্রসংক্রান্তির দিবাগত রাতে একটি নতুন পাত্রে পানি ঢেলে সেটিতে আতপ চাল এবং একটি কচি পাতাওয়ালা চারা আমগাছের চিকন ডাল ভিজিয়ে রাখা হতো। সকালে বাড়ির সবাইকে সেই ভেজানো চাল খেতে দেওয়া হতো। লোকবিশ্বাস ছিল, এতে সারা বছর বাড়ির সবার মঙ্গল হবে, কৃষির ফলন বাড়বে এবং এর কোনো অনিষ্ট হবে না। একই উৎপাদনব্যবস্থায় সংস্কৃতিকে বিচ্ছিন্ন করা কঠিন। তাই এই উৎসব হয়ে উঠেছিল সর্বজনীন এক উৎসব।

ধান-পাটের মৌসুমে ফসল বিক্রির টাকায় কৃষকরা পরিবারের সদস্যদের কাপড়-চোপড় এবং বছরের প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতেন। তাই বাকিতে কেনাবেচা এবং নতুন ফসলি সনে প্রথম দিনে তা শোধ করা ছিল এক স্বাভাবিক রীতি। বছরের প্রথমদিন ব্যবসায়ীরা তাঁদের ক্রেতা-বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে মিষ্টিমুখ করানোর মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ লেনদেনের জন্য নতুন হিসাবের হালখাতা খোলেন।

আর তাই এই দিনটি হয়ে ওঠে পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের একটা উৎস। আজ পহেলা বৈশাখে লাল-সাদার রঙের খেলায় বাঙালিরা নিজেদেরকে রাঙিয়ে তোলেন। এই রঙের সম্মিলন মূলত হালখাতার বৈশিষ্ট্যকেই প্রতিনিধিত্ব করে। কারন, লাল কাপড়ের মলাটে বাঁধাই করা শাদা কাগজের হিসাবের খাতাই ছিল 'হালখাতা'।

পহেলা বৈশাখের সময় কৃষি, কৃষক, অর্থনীতি এবং ব্যবসাকে কেন্দ্র করে উৎসবের এখানেই শেষ নয়। নতুন বছরের নতুন ধান ঘরে তোলার পর শস্য সম্পদে সমৃদ্ধ কৃষকরা নানারকম পণ্যসামগ্রী আদান-প্রদানের উদ্দেশ্যে নদীতীরে, বৃক্ষছায়ায় অথবা পাহাড়ের পাদদেশে মিলিত হতেন। এভাবেই একসময় গ্রামীণ অর্থনীতিতে যুক্ত হয় মেলা। পুরো বছরের উপকরণ, দৈনন্দিন জীবনের রসদ যাবতীয় জিনিসপত্র এখান থেকেই সংগৃহীত হতো।

ঐতিহ্যগতভাবেই বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে সবাই তাদের নিজ নিজ জমিতে চাষ দিতো। সব জমিতে একদিনে চাষ দেওয়া সম্ভব নয় বিধায় বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে প্রত্যেকটি জমিতেই এক পাক কিংবা দুই পাক করে লাঙ্গল দিয়ে রাখতো। এই রীতির নাম ছিল “হাল বৈশাখ”। বর্তমানেও অনেক জায়গায় এই রীতি প্রচলিত রয়েছে। হাল বৈশাখের অংশ হিসেবে বৈশাখের প্রথম দিনে গৃহপালিত গরুকে স্নান করিয়ে কপালে সিদুরের ফোটা দেয়া হয়।

এছাড়া কৃষিতে ব্যবহার হয় এমন উপকরণ (যেমন লাঙ্গল, জোয়াল, মই ইত্যাদি) পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে সবগুলোর গায়ে তিনটি সিঁদুরের ফোটা দেয়া হতো। হাল বৈশাখ সম্পন্ন করার পর চাল, ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়া হয়। এছাড়া হাল বৈশাখের দিন আরেকটি কাজ করা হয়। সোলা দিয়ে গোল ফুলের আকৃতি তৈরি করা হয়। এই ফুলটি বিভিন্ন রঙের কাপড় দিয়ে সাজানো হয়। এরপর ওই ফুলটি ক্ষেতের মাঝখানে পুঁতে দেওয়া হয়। এরপর ফসলের শুভকামনায় জমির মালিক ফুলটি ক্ষেতের মাঝখানে পুঁতে দিতেন।

বৈশাখপূর্ব বাঙ্গালীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ন আচার হলো চৈত্রসংক্রান্তি। সংক্রান্তি মানে এক ক্রান্তি তথা এক কিনারা থেকে আরেক কিনারায় যাওয়া। চৈত্র মাসে চৈতালী ফসল উঠে গিয়ে পুরা মাঠই শুকনা খর খরে হয়ে যেতে পারে। এই সময় প্রকৃতিতে কি কি খাদ্য মানুষের এবং অন্য প্রাণীর জন্য থাকে তা জানা দরকার। তাই চৈত্র সংক্রান্তিতে প্রকৃতির খোঁজ খবর নেয়া হয়। চৈত্রসংক্রান্তির খাদ্য তালিকায় কোন মাছ-মাংস থাকবে না, থাকবে চৌদ্দ প্রকারের কুড়িয়ে পাওয়া শাক। চৌদ্দ রকম শাকের মধ্যে থাকে হেলেঞ্চা, ঢেকি, সেঞ্চি, কচু, থানকুনি, তেলাকুচা, নটে শাক, গিমা, খারকোন, বতুয়া, দন্ডকলস, নুনিয়া, শুশ্নি, হাগড়া, পাট, সাজনা ইত্যাদী। এই সব শাক কুড়াতে মেয়েরা ১-২ কিমি পথ পথ পাড়ি দেন। যদি এই দুরত্বের মধ্যে অন্তত চৌদ্দ রকমের শাক পাওয়া যায় তাহলে ধরে নেয়া হয় প্রকৃতি ও পরিবেশ ভাল আছে।

পরিবেশ-প্রকৃতির সাথে মানুষের আন্তঃসর্ম্পকের বিষয়টি প্রাগৈতিহাসিক। পূর্বে মানুষ বিশ্বাস করত প্রকৃতির মধ্যে অতি-ভৌতিক, জীবনধাত্রী এবং জীবনধারণ করার মত সকল শর্ত বিদ্যমান রয়েছে। এ জন্য প্রাগৈতিহাসিক সময়ের মানুষ প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখাত, প্রার্থনা করত। প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা মিশ্রিত চেতনা ছিল বলেই মানুষের সাথে প্রকৃতির সহমর্মিতার সম্পর্ক দৃঢ় ছিল।

কৃষির উৎপাদন পদ্ধতি এবং মানুষের জীবিকার উৎসকে কেন্দ্র করে যে সকল আচার অনুষ্ঠান সমাজে গড়ে উঠেছিল সেই সব উৎসবগুলো নানাকারনে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। যদি আমরা আবার স্থায়িত্বশীল কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে পারি, তাহলে কৃষির মাধ্যমে মানুষ ও প্রকৃতি-পরিবেশের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পূনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। যে কৃষি ও প্রকৃতি মানুষের প্রাণ বাঁচায়, সেই কৃষি ও প্রকৃতি যদি বাঁচে তবে তার সাথে জীবনের উৎসবসমূহ বাঁচবে অনন্তকাল। বাঙ্গালীর চিরন্তন উৎসবগুলো বেঁচে থাকুক আপন মহিমায়, এই প্রত্যাশায় সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।

লেখকঃ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষক

কচু চাষে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় লক্ষ্মীপুরের সিরাজুল ইসলাম



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম । ছবি- বার্তা২৪.কম

কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম । ছবি- বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লক্ষ্মীপুরের উত্তর জয়পুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম। থাইল্যান্ড থেকে আনা ‘থাই গোল্ড’ জাতের পানি কচু চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। চলতি বছরের কচু চাষ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এই সফল কৃষি উদ্যোক্তার।

প্রথমে প্রবাসী বন্ধুর মাধ্যমে থাইল্যান্ড থেকে ২৮০ টি থাই গোল্ড জাতের কচুর চারা গাছ এনেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। চারাগুলো বড়ির পাশের ৫ শতাংশ জমিতে লাগানো হয়। বছর না ঘুরতেই সেই চারা থেকে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২ হাজার কচুর ফলন হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম জানান, এ জাতের প্রতিটি কচুর উচ্চতা ১২ ফুট পর্যন্ত এবং কাঠের ওজন ( ডাল ছাড়া মূল কচু) ৪০ কেজি পর্যন্ত  হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি লতির দৈর্ঘ ৪ ফুট ও বেড় ১২ মিলি মিটার হয়ে থাকে। বর্তমানে তার চাষকৃত একটি কচুর ওজন  ৪ মাসে ২০ থেকে ২৫ কেজি ও উচ্চতা প্রায় ৮ ফুট পর্যন্ত হয়েছে এবং ৮ থেকে ১০ পিস লতির ওজন ১ কেজি হয়েছে। তিনি আশা করছেন আগামী চার মাসের মধ্যে তার চাষ করা প্রতিটি কচু ৪০ কেজি ওজন হবে।

সিরাজুল ইসরামের কচু চাষের সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা  থেকে সাধারণ মানুষ কচু ক্ষেত দেখতে ছুটে আসছেন।  তিনি  জানান ইতিমধ্যে ১০ জন চাষীকে এ কচুর চাষ করার জন্য চারা দিয়েছেন। তার কচু ক্ষেতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক ঢুকে হাত উঁচু কররেও বাহির থেকে দেখা সম্ভব হয়না।

লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের  উত্তর জয়পুর দৌলত বাড়ির স্কুল শিক্ষক মরহুম আজহারুল ইসলাম মাষ্টারের তৃতীয় পুত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর চাকরি ছেড়ে এলাকায় ফিরে শখের বসে নার্সারী দিয়ে বিভিন্ন জাতের ফলজ, বনজ, ফুল ও সবজির চারা উৎপাদন শুরু করেন। পশাপাশি তিনি এলাকার যুবকদের হাতে কলমে চারা উৎপাদন করা শিখাতে থাকেন। তার কাছে চারা উৎপাদন শিখে ইতিমধ্যে ৫০ জন বেকার যুবককে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তিনি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।  সিরাজুল ইসলাম বর্তমানে লাউ, কলা, লেবু চাষ করে যাচ্ছেন। কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী সিরাজুল ইসলাম ইউটিউবে থাইগোল্ড জাতের কচুর চাষ দেখেন। পরে তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে  থাইল্যান্ড থেকে এ কচুর চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজারে তার উৎপাদিত কচুর লতি নিয়ে গেলে মানুষ এক নজর তার উৎপাদিত কচুর লতি দেখার জন্য ভীড় জমিয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি তার ক্ষেতে উৎপাদিত কচু বিক্রি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ২০টি কচু চার হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি জানান সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর কচু চাষ থেকে তার ৬ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

এলাকার আরেক সবজি চাষী মো. শরীফ বলেন, সিরাজুল ইসলাম থেকে তিনি ইতি মধ্যে থাই গোল্ড জাতের কচুর চারা নিয়ে লাগিয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম একজন সফল উদ্যোক্তা। তার কাছে কৃষি চাষাবাদ বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ জাহান বলেন, সিরাজুল ইসলামের কচুর ক্ষেত আমি সরেজমিনে দেখে এসেছি। এ কচুর চাষ সম্প্রসারণে সহযোগিতা করবো।

  ‘এসো হে বৈশাখ’

;

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ২২ ব্যক্তি পাচ্ছেন এআইপি সম্মাননা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
কৃষি মন্ত্রণালয়ের লগো, ছবি: সংগৃহীত

কৃষি মন্ত্রণালয়ের লগো, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা-২০২১ পাচ্ছেন ২২ জন। এআইপি নীতিমালা-২০১৯ এর আলোকে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫টি ক্যাটাগরিতে তারা নির্বাচিত হয়েছেন।

স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কৃষি সংগঠন শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচিত করা হয়েছে। তারা হলেন- কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ, পরিবেশ বিষয়ক সংগঠক হিসেবে চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন তিলোত্তমার প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন ও সমবায় উদ্যোক্তা হিসেবে সাতক্ষীরার ধানদিয়া সিআইজি মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি শিখা রানী চক্রবর্তী।

জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন শ্রেণিতে নির্বাচিত ব্যক্তিরা হলেন- এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট এ কে এম ফারায়েজুল হক আনসারী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির কৃষি উদ্যোক্তা এমএ মতিন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ।

কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প শ্রেণিতে ১০ জন এআইপি হয়েছেন। তারা হলেন উন্নতজাতের ফলচাষের জন্য টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. ছানোয়ার হোসেন, পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য ফরিদপুরের খান বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহীদা বেগম, সাথী ফসল উৎপাদন করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা সুরেশ্বর মল্লিক, ফলচাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গ্রিন প্ল্যানেট অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন, জলাবদ্ধতা নিরসণে কাজ করায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অ্যাগ্রো বেইজড সোশিও ইকোনমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন, দুগ্ধ উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদীর তন্ময় ডেইরি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. আমিরুল ইসলাম।

মাছ চাষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আল বারাকা মৎস্য খামার অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মাছুদুল হক চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মৌচাষী কৃষি উদ্যোক্তা মো. রফিকুল ইসলাম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফলচাষী সিরাজ বহুমুখী খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম ও শেরপুর সদর উপজেলার ফলচাষী মা-বাবার দোয়া ফ্রুট গার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হযরত আলী।

রফতানি যোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন শ্রেণিতে দুজন এআইপির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বৃক্ষরোপণ ও বনসাই নার্সারীর জন্য গাজীপুর সদর উপজেলার লিভিং আর্ট গার্ডেনের পরিচালক কেএম সবুজ ও বারোমাসি আম চাষি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচন করা হয়েছে। জৈবসার ও কেঁচোসার উৎপাদক নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অন্নপূর্ণা অ্যাগ্রো সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী রাম নিবাস আগরওয়ালা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারি হিসেবে ঢাকার নবাবগঞ্জের অমিত ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মায়া রানী বাউল ও সফল বীজ উৎপাদকারী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক।

এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর মোট ৫টি বিভাগে এআইপি সম্মাননা প্রদান করা হয়ে থাকে। এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল হচ্ছে ১ বৎসর। এআইপিগণ সিআইপিদের (CIP) মতো সুযোগসুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় হতে একটি প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাশ, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ; বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার; নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং বিমান বন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা। কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে এ সম্মাননা। ২০২০ সালে এআইপি সম্মাননা পেয়েছিলেন ১৩জন।

৭ জুলাই ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২১ সালের এআইপি পুরস্কার প্রদান করা হবে। এতে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুস শহীদ প্রধান অতিথি এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। ২০২২ ও ২০২৩ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

  ‘এসো হে বৈশাখ’

;

কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,সাতক্ষীরা
কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার

কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার

  • Font increase
  • Font Decrease

উপকূল ঘেঁষা ধুমঘাট গ্রামের বাসিন্দা অল্পনা রাণী মিস্ত্রি। গ্রামের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ, কর্দমাক্ত রাস্তা সবকিছু পেরিয়ে যেতে হয় তার বাড়ি। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট গ্রামের এই বাসিন্দা নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন বিলুপ্ত অচাষকৃত শাক-সবজি, ওষুধি ও ফলমূলের বীজ ভান্ডার। পেয়েছেন শেখ হাসিনার থেকে পাওয়া পুরষ্কারও।

প্রত্নতত্ত্ব এলাকায় থেকে ও বিলুপ্ত অচাষকৃত শাক-সবজি, ওষুধি ও ফলমূলের বীজ সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৫৫০ জাতের। তার বীজ ভান্ডারে রয়েছে অচাষকৃত কিন্তু পুষ্টিগুণ সম্পন্ন নানা উদ্ভিদ বৈচিত্রের বীজও। ২২ প্রকার শিম, আট প্রকার ডাটাশাক, ১০ প্রকার মরিচ, শতাধিক ওষুধি, ৫০-৬০ প্রকার সবজি, ২২ প্রকার অচাষকৃত উদ্ভিদসমূহ।

ছায়া সবুজময় গ্রামের মাঠে ঘাঠে দেখা যায় গরু ছাগলের বিচারণ। মাটির রাস্তার ঘ্রাণ নিয়ে অল্পনা রানীর বাড়িতে ঢুকতেই চোখে মেলে বীজ রাখার ঘর, যেখানে বোয়ামে, প্যাকেটে বা বস্তায় রাখা হয়েছে বীজ। এই বীজ দিয়েই চাষাবাদ করেন অল্পনা রানী, বিতরণ করেন গ্রামের অন্যান্য কৃষকদের মাঝেও।

অল্পনা রানীর মতে, স্থানীয় জাতের বীজ চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। এই বীজ থেকে উৎপাদিত ফসলের বীজ সংরক্ষণ করা যায়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা যায় বলে মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। আমরা রাসায়ানিক সার ও কীটনাশক দেওয়া শাক সবজি খেয়ে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ছি। যার কারণে আমাদের জৈব পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।

তিনি স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ না করলে কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা যদি বীজ সংরক্ষণ না করি তো এক সময় আমাদের কৃষকদের কাছে কোনো প্রকার বীজ থাকবে না। ফলে আমাদের বীজ প্রয়োজন হলে তাদের কাছে হাত পাততে হবে। তাই সেখান থেকে ২০১০ সাল থেকে আমি বীজ সংরক্ষণ শুরু করি।

এজন্য স্থানীয় কৃষকদের সাথে বীজ বিনিময়ের মাধ্যমে দেশীয় বীজ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সাধারণ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন বিষমুক্ত সবজির খামার এবং সংরক্ষণ করে রেখেছেন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক শাকসবজি। যা সচারচর বাড়ির আনাচে কানাচে জন্মাতো কিন্তু এখন আর সেগুলো চোখে মেলে না। তবে তার বাড়ির আঙিনায় গেলে দেখা মিলবে সেইসব বিলুপ্ত প্রায় শাকসবজির সাথে।

স্থানীয় বীজ সংরক্ষণে তিনি নিজে কিভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন জানতে চাইলে বার্তা২৪.কম’কে অল্পনা রানী বলেন, ২০১০ সাল থেকে আগে দু’একটি বীজ রাখতাম। ২০১২ সালে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) আমাকে বীজ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করে এর গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝায়। প্রশিক্ষণও দেয়। নানাভাবে সহায়তাও করে। বারসিকের উৎসাহ পেয়েই আমি বীজ সংরক্ষণ শুরু করি। যা এক যুগের ব্যবধানে বীজ ভান্ডারে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, হাইব্রিড বীজ কিনে কৃষকরা প্রতিনিয়ত ঠকছে। হাইব্রিড বীজ চাষ করতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে, হাইব্রিড বীজের ফসল থেকে বীজ রাখাও যায় না। এখন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষের নানা রকম রোগ বালাই হচ্ছে। আর বীজ রাখতে না পারায় কৃষক কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে।

বিপরীতে স্থানীয় জাতের বীজ চাষ করতে কোনো রকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেই ফসল উৎপাদন করা যায়, এর বীজও রাখা যায়, মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে- যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণের মাধ্যমেই কৃষক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদাও নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য কোনো বীজই আমি হারিয়ে যেতে দেই না।

অল্পনা রানীর মতে, উপকূলীয় দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় বীজ সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, প্রতিবছর শ্যামনগর উপকূলে অন্তত দুটি করে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। এতে অনেক সময় রোপণকৃত বীজ নষ্ট হয়ে যায়। অনেক বীজ হারিয়ে যায়। এমন সময় কৃষকের হাতে বীজ থাকলে তিনি আরও রোপণ করতে পারেন। কিন্তু বীজ না থাকলে আবার কেনা ছাড়া উপায় থাকে না।

কীটনাশকের বদলে ফসলের ক্ষেতে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, আমি নিমপাতা ও মেহগুনির ফল দিয়ে বালাইনাশক তৈরি করি। এছাড়া সহনীয় মাত্রায় ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি স্প্রে বা ঘুটের ছাই কিংবা তুতে ও চুন দিয়ে মিকচার তৈরি করে ক্ষেতে ব্যবহার করি। বালাইনাশক হিসেবে এগুলো খুবই উপকারী।

বীজ সংরক্ষণ ও স্থায়িতশীল কৃষি চর্চার জন্য তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও। এজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ভোলেননি স্বশিক্ষিত কৃষাণী ও খাদ্য যোদ্ধা অল্পনা রানী মিস্ত্রী।

তিনি বলেন, নদী পার হতে গেলে যেমন সাঁকো লাগে, বারসিক আমার জীবনে সেই সাঁকো হিসেবে কাজ করেছে। আমার জীবনে আলো দিয়েছে। জ্ঞানের আলো। যদি তারা আমাকে কোনো অনুদান দিতো, হয়তো তা খেয়ে ফেলতাম। কিন্তু তারা তা না দিয়ে আমাকে দিয়েছে জ্ঞানের আলো। এই জ্ঞানের আলোয় আমার জীবন ভরে উঠেছে। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। এছাড়াও আমি ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক, ২০২০ সালে অন্যান্য পুরস্কার, উপজেলা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছি। দেশ বিদেশের টেলিভিশন চ্যানেল আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করতে আসে। আমার জীবনে আর কী চাওয়া আছে?

  ‘এসো হে বৈশাখ’

;

হাওরে বৃষ্টির পানিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে গত দুইদিনের বৃষ্টিতে কিছু জমিতে পানি জমেছে। ফলে কাটা ধানগুলি জমিতে স্তূপ করে রাখছে। এমনকি ধান মাড়াই করার জায়গায় পানি জমে থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। ধান শুকানোর পরিবর্তে সবাই এখন ধান কাটাতে বেশি মনোযোগী। কারণ বৃষ্টির পানি জমে আছে বিস্তীর্ণ মাঠে। এতে ম্লান হতে বসেছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন।

সোমবার (৬ মে) সরজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন হাওরে কৃষকরা আগেভাগেই ভোর থেকেই ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন। 

কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আর একসপ্তাহ দিনটা ভালো থাকলে ফসল নিয়ে আসতে পারতাম। একদিন ধান কাটছি আরেকদিকে মাড়াই করছি৷ শুকিয়ে ঘরে তোলার চেষ্টা করছি। গতকালের শিলাবৃষ্টি ভয় তৈরি করেছে। কারণ শিলাবৃষ্টিতে ধানের অনেক ক্ষতি হয়। 


কিশোরগঞ্জে রোববার (৬ মে) রাতে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। প্রায় পাঁচ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। বৃষ্টির সঙ্গে ছিল তীব্র বাতাস। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে কখনো থেমে, কখনো অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে রাত তিনটা পর্যন্ত। বৃষ্টিতে স্বস্তি এলেও দুশ্চিন্তা বেড়েছে কৃষকদের। শিলাবৃষ্টিতে শেষ মুহূর্তে ধানের ক্ষতি হলে বড় বিপর্যয় ঘটবে কৃষকদের।

এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বৃষ্টি পড়েছে। স্বস্তির বৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে প্রশান্তি নেমে এসেছে। জেলা সদর ও আশপাশের উপজেলায় শুরু হয় ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। থেমে থেমে কয়েকদফা বৃষ্টিতে নেমে আসে স্বস্তি।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে হাওরে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৫ টন ধান। যা বিক্রি হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই বাকি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।


কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘উঁচু-নিচু জমি হাওরের একটা বড় সমস্যা। অতি বৃষ্টি হলে ধান ডুবে যায়। এর ফলে কৃষকরা নিচের দিকে ধান কেটে ওপরের দিকে আসছে। আমরা আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। তাদেরকে দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷

 

  ‘এসো হে বৈশাখ’

;