বার্তা২৪.কম-কে কৃষিবিদ ড. সুরজিত সাহা রায়

‘কৃষি কাজ থেকে কৃষকরা সরে এলে মুশকিল হবে’



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা অটুট রয়েছে। গত দুই বছর কোন ধান আমদানির প্রয়োজন পড়েনি। খাদ্যনিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে কারণ কৃষকরা সব চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে চাষাবাদটা এখনও করে যাচ্ছেন। কিন্তু উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ অন্যান্য কারণে কৃষকরা যদি কৃষি কাজ থেকে সরে আসেন তাহলে মুশকিল হবে।

বার্তা২৪.কম-কে এসব কথা বলেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক কৃষিবিদ ড. সুরজিত সাহা রায়

এই কৃষিবিদ মনে করেন, বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণে ব্যাপক প্রচেষ্টা নেওয়ায় উল্লেখযোগ্য অর্জনে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে এখন যথেষ্ট আশাবাদী হওয়ার জায়গা তৈরি হয়েছে। কিন্তু কৃষি পণ্যের বিপণনে কাঙ্খিত সাফল্য এখনও আসেনি। যার ফলে কৃষি খাতের প্রধান অংশীজন কৃষকরা তাঁর কষ্টার্জিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে গবেষণার মাধ্যমে এই অচলায়তন থেকে বের হওয়ার উপায় বের করা গেলে সংকট নিরসন সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে কৃষি উৎপাদনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ের কৃষিকর্মীদের সক্রিয় রাখার সঙ্গে স্যোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও এ সংক্রান্ত ভিডিও বার্তা ও লিফলেট প্রচার করা হচ্ছে, জানান এই কৃষিবিদ।

ড. সুরজিত সাহা রায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন বার্তা২৪.কম’র পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম

বার্তা২৪.কম: বোরোর ফলন কতটা ঘরে উঠেছে কৃষকের?

ড. সুরজিত সাহা রায়: নীচু অঞ্চল, যেমন ধরুন-হাওরাঞ্চল, সেখানে মোটামুটি কাটা শেষ। এ সপ্তাহে পুরোপুারই শেষ হয়ে যাবে। এমনকি, বাংলাদেশের চলনবিল বা অন্য নীচু এলাকা যেগুলো আছে-সেখানে কাটা হয়ে যাবে এরই মধ্যে। শুধু উত্তরবঙ্গে কিছুটা থাকবে। সেখানে ধান একটু পরে লাগায়, আলু তোলার পর। আর খুলনা ও বরিশাল অঞ্চল, যেখানে ঘেরের মধ্যে চাষ করে, তারা আগাম ধান লাগায় আবার আগামই কেটে ফেলে। আমরা নির্দেশ দিয়েছি, আগামী ২ তারিখের মধ্যে নীচু এলাকার (২ মে ২০২৪) সব ধান কেটে ফেলতে। কাটা প্রায় শেষ। কারণ ইতিমধ্যেই আমরা বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়েছি। সেই বৃষ্টিতে বন্যারও আশঙ্কা করছি।

বার্তা২৪.কম: এবারের তাপদাহ নিয়ে কথা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশ বা এই অঞ্চলের দেশসমূহের জন্য এটি নতুন নয়। কৃষিতে এর প্রভাব কতটা?

ড. সুরজিত সাহা রায়: দীর্ঘ ৭৬ বছর পরে এত লম্বা সময় ধরে তীব্র তাপদাহ যাচ্ছে। পূর্বে যেটা হয়েছে-দুই দিন বা তিন দিন থেকেছে। আবার একটি বৃষ্টি হয়ে গেছে। আবার তাপ বেড়েছে। এতে করে গাছের ক্ষতিটা হয়নি। যেমন-আম ও লিচুর মুকুল আছে। এই তাপদাহে এর ক্ষতি হচ্ছে। আউস ধানের সমস্যা, পাটের সমস্যা-কিছুটা তো হচ্ছেই। তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে তখন গাছেরও ফিজিওলজিক্যাল এক্টিভিটি স্টপ হয়ে যায়।

বার্তা২৪.কম: আমরা তো এখন আম রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছি। আমের ফলনে এই তাপদাহ কতটা প্রভাব পড়বে?

ড. সুরজিত সাহা রায়: এখন পর্যন্ত যা জানতে পারছি, খুব বেশি একটা প্রভাব পড়বে না। তবে আপনি জানেন যে, হাই টেম্পারেচার হলে পানি বার বার গাছের গোড়ায় দিতে হয়। পানি দিয়ে গাছের গোড়ায় ধরে রাখাটা খুব কঠিন। কৃষকরা মালচিং (আবর্জনা দিয়ে) দিয়ে চেষ্টা করছে যেন পানিটা থাকে। আর মাটির গোড়ায় পানি না থাকলে খাবার তুলতে পারবে না। তা না হলে আমও পুষ্ট হবে না। অন্যদিকে হাই টেম্পারেচার ফল পাকার জন্য খুব ভালো।

বার্তা২৪.কম: উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষকদের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিশেষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা?

ড. সুরজিত সাহা রায়: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদেক্ষপ নিয়েছে। মাননীয় মহাপরিচালকের দিকনির্দেশনায় প্রতিদিনই এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। কৃষকদের জরুরি পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মীরা এবিষয়ে সচেষ্ট আছেন। আপনি জানেন, এখন তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগ। কৃষকরা যাতে সচেতন হতে পারেন এবং করণীয় ঠিক করতে পারেন, সেজন্য আমরা নিয়মিত প্রত্যক্ষ পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি স্যোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পরামর্শ সম্বলিত ছোট ভিডিওবার্তা, লিফলেট প্রচার করছি। এতে কৃষকরা দ্রুত মেসেজটা পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠে যাচ্ছেন নিয়মিত। কে যে কোন মাধ্যমে দেখবে বা শুনবে তা বলা কঠিন, সেজন্য আমরা সবগুলো মাধ্যমেই তথ্য ও কৃষি পরামর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছি।

বার্তা২৪.কম: এবারের বৈরি আবহাওয়া সত্ত্বেও কৃষি উৎপাদনের সামগ্রিক অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে?

ড. সুরজিত সাহা রায়: এখানে দু’ধরণের বাস্তবতা আছে। যেমন-আমরা গরমে পুড়ছি কিন্তু যাঁরা ধান চাষী তারা খুবই সন্তুষ্ট। কারণ হচ্ছে-তারা নিরাপদে ধানটা ঘরে তুলতে পারছেন। তারাও (কৃষকরা) আশা করছে, আরও ক’দিন পর যেন বৃষ্টিটা হয়। হাওরাঞ্চলে এখন তারা সুন্দর করে ধানগুলো কেটে ঘরে তুলছে। দামও পাচ্ছে ভালো। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে অতিরিক্ত খরার কারণে সেচ দিয়ে কুলাতে পারছে না। সরকারও বোরো আবাদকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুত সরবরাহ করছে। জেনে থাকবেন, গত দু’বছর এক ছটাক ধানও আমরা বাইরে থেকে কিনি নাই। এত খারাপ পরিস্থিতির মধ্যেও ধান কিনি নাই। আগামীতেও যাতে কিনতে না হয়, পারি যদি কিছু রপ্তানিও যাতে করা যায় আমরা সেই চেষ্টা করছি। এটা একটা ভালো অর্জন।


বার্ত২৪.কম: তার মানে বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা অটুট আছে?

ড. সুরজিত সাহা রায়: নিশ্চিতভাবেই বলা যাবে। তবে আপনি বলতে পারেন, দামটা বেড়ে গেছে। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কর্পোরেটগুলো বেশি ঝামেলা করছে বলেই মনে হচ্ছে। আমি আজ ৬৮ টাকা কেজিতে উস্তে কিনলাম। অথচ কৃষক ১৫ টাকায়ও বিক্রি করতে পারেন না। ধানের মূল্যের ক্ষেত্রেও যে ডেভিয়েশনটা হয়-কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে-আমি মনে করি মার্কেটিং বিভাগের এ নিয়ে প্রচুর কাজ করা প্রয়োজন। সিন্ডিকেটটাও ভাঙা প্রায়োজন।

বার্ত২৪.কম: মূল্যবৃদ্ধির এই যে শুভঙ্করের ফাঁকি, বিশেষ করে কৃষক তাঁর ন্যায্য দাম পান না কিন্তু ভোক্তা ঠিকই উচ্চমূল্যে কিনছেন। এই অচলায়তন কি কোন দিন ভাঙবে না?

ড. সুরজিত সাহা রায়: চেষ্টা চলছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও এটা বড় অগ্রাধিকার-দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিছু মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফায়দা লুটে, কোনভাবেই এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা খুব জোর দিতে বলেন অনেক সময়, কিছু কাজ হচ্ছে। আমি মনে করি, এনিয়ে গবেষণারও প্রয়োজন আছে। এই অচলায়তন ভাঙতে শক্ত হাতেরও প্রয়োজন। কৃষক সমিতিগুলো, সমবায়গুলো-একটা ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উৎপাদনের ভূমিকা উৎপাদন পর্যন্তই সীমিত। মার্কেটিংয়ের বিষয়গুলো দেখে অন্য বিভাগ। আমরা জড়িত না থাকলেও যেহেতু কৃষকরা আমাদের প্রধান অংশীদার, তাই চেষ্টা করি দায়িত্বের বাইরে গিয়েও কিছু ভূমিকা রাখার। জেনে থাকবেন, করোনাকালে-আমরা ম্যাঙ্গু ট্রেন চালু করেছিলাম, ক্যাটল ট্রেন চালু করা হয়েছিল। দিনাজপুর থেকে হাওরে কৃষি শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থাও আমরা করেছি, তখন সব যান চলাচল বন্ধ ছিল। যদিও অন্য বিভাগের দায়িত্ব ছিল, কিন্তু আমরা আওতার বাইরে গিয়েও তা করেছিলাম কৃষকের স্বার্থে। বিশে^র উন্নত দেশগুলো সতর্ক করে বলেছিল, খাদ্যাভাব তৈরি হতে পারে। মানুষ না খেয়ে মারা যেতে পারে। সেটাও আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করেছি। খাদ্যনিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে কারণ কৃষকরা সব চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে চাষাবাদটা করেছেন। কৃষকরা যাতে তাদের কাজ থেকে সরে না আসে সেটাই আমরা চেষ্টা করছি। তাঁরা সরে এলে মুশকিল হবে।


বার্তা২৪.কম: বাণিজ্যিক কৃষি কি কোনো হুমকি তৈরি করছে?

ড. সুরজিত সাহা রায়: বাণিজ্যিক কৃষি, ইমপোর্ট সাবস্টিটিউট কৃষি বা এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড কৃষিও এখন সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে সাধারণ কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় মার্কেটিংয়েই আমাদের এখন নজর দিতে হবে। যেমন ধরুন-এবার সরিষার দাম পড়ে গেছে। দাম না পেলে কৃষকরা আর করতে চান না। সরিষার তেলটা ভোক্তারা এখনও এডিবল ওয়েল হিসবে নিতে পারিনি। এখনও আমরা এই তেলটা বিভিন্ন ভর্তা খাওয়ার মধ্যেই ব্যবহার সীমিত রেখেছি। যদিও এই তেলটা পরিমাণে কম লাগে। এর উপহার হলো, এই তেল পরিমাণে কম লাগে আবার ট্রান্সফ্যাট নেই-এতে ফ্যাটি লিভার, লিভার পাথর বা মুটিয়ে যাওয়া থেকে আমরা বাঁচতে পারি।

বার্তা২৪.কম: এই সময়ের কৃষির আর কি চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

ড. সুরজিত সাহা রায়: বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যা এক্ষেত্রে বড় সংকট। জমির পরিমাণ কম এবং ক্রমাগত কমছে। এই পরিস্থিতি কৃষি উৎপাদনে বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকটা ‘মাথা ঢাকলে পা বেরিয়ে যায় আর পা ঢাকলে মাথা’ এ রকম ব্যাপার। আমরা যদি কাছাকাছি দেশের পতিত জমি দীর্ঘ মেয়াদে লিজ নিয়ে চাষাবাদ করতে পারি সেটাও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন সমাধান হতে পারে। প্রতিবেশী ভারতের আসামে প্রচুর পতিত জমি আছে। আমাদের পাহাড়ে যদিও অনেক অনাবাদী জমি আছে, কিন্তু সেখানে চাষাবাদে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আপনি জানেন, কৃষিটা প্রকৃতিনির্ভর। তারপরও আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যেভাবে নতুন জাত উন্নয়ন করছে, আমরা তা সম্প্রসারণ করছি, কৃষকের মাঠে নিয়ে যাচ্ছি-তাতে একটি ভালো অর্জন আসছে। বিশেষ করে ধান উৎপাদনে লবনাক্ততা একটি বড় সংকট ছিল দক্ষিণাঞ্চলে।

কিন্তু আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকগুলো জাত, যেমন ব্রি ধান৯৭, ব্রি ধান৯৮ ও ব্রি ধান৬৭-এই তিনটি জাত বিরাট বিপ্লব নিয়ে এসেছে। কৃষকরা ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯ চাষ করতো; আমরা এগুলো চাষে নিরুৎসাহিত করেছি। এবার সুবিধা হয়েছে-এগুলোর ফলনও ভালো, আগাম কাটাও সম্ভব। তারপরও এবার কিন্তু ব্রি ধান২৮ এ ব্লাস্টের আক্রমণটা হয়নি, কারণ বৃষ্টিটা একটু আগে হয়ে গেছে-ধানের থোর বেরুনোর আগে হয়েছে। ফুল বেরুনোর পর যদি বৃষ্টি হতো তাহলে ফলন বিপর্যয় হতো। যার ফলে ব্লাস্টের জীবাণুটা প্রথম বৃষ্টিতে মাটিতে পড়ে যায়, মাটিতে পড়ার সময় যদি সে ধানের শীষ পায় তাহলে শীষটা নষ্ট হয়ে যাবে। এবার শীষ বেরুনোর আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে। সব পড়েছে মাটিতে বা পাতায়, তাই তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। এজন্য ধানের ফলন বেশ ভালো। একটু লস হচ্ছে, টেম্পারেচার যদি হাই হয় একে আমরা বলি রেসপারেশন লস, এতে ক্ষতি যেটা হয়েছে তা উল্লেখযোগ্য নয়। আবার তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ধান আগে পেকেছে।


আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস তাতে আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে ধানটা উঠে যাবে। অন্যান্য ফসলের বিশেষ কোনো ক্ষতি হবে না। প্রযুক্তি এখন অনেক আছে। কৃষকরা যদি প্রযুক্তিগুলো অনুসরণ করেন তাহলে আম ও লিচুর ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবে। হয়তো দামটা একটু বেড়ে যাবে। যদিও এখনকার কৃষকরা খরচে খুব একটা কার্পণ্য করেন না। কারণ মার্কেট এখন খারাপ না। আমরা চাই কৃষক যাতে ন্যায্য দাম পায় এবং ভোক্তাও যাতে ন্যায্য দামে কিনতে পারেন। মাঝের মধ্যসত্ত্বভোগীর দৌরাত্ম যেন কমানো যায়।

কচু চাষে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় লক্ষ্মীপুরের সিরাজুল ইসলাম



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম । ছবি- বার্তা২৪.কম

কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম । ছবি- বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লক্ষ্মীপুরের উত্তর জয়পুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম। থাইল্যান্ড থেকে আনা ‘থাই গোল্ড’ জাতের পানি কচু চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। চলতি বছরের কচু চাষ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এই সফল কৃষি উদ্যোক্তার।

প্রথমে প্রবাসী বন্ধুর মাধ্যমে থাইল্যান্ড থেকে ২৮০ টি থাই গোল্ড জাতের কচুর চারা গাছ এনেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। চারাগুলো বড়ির পাশের ৫ শতাংশ জমিতে লাগানো হয়। বছর না ঘুরতেই সেই চারা থেকে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২ হাজার কচুর ফলন হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম জানান, এ জাতের প্রতিটি কচুর উচ্চতা ১২ ফুট পর্যন্ত এবং কাঠের ওজন ( ডাল ছাড়া মূল কচু) ৪০ কেজি পর্যন্ত  হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি লতির দৈর্ঘ ৪ ফুট ও বেড় ১২ মিলি মিটার হয়ে থাকে। বর্তমানে তার চাষকৃত একটি কচুর ওজন  ৪ মাসে ২০ থেকে ২৫ কেজি ও উচ্চতা প্রায় ৮ ফুট পর্যন্ত হয়েছে এবং ৮ থেকে ১০ পিস লতির ওজন ১ কেজি হয়েছে। তিনি আশা করছেন আগামী চার মাসের মধ্যে তার চাষ করা প্রতিটি কচু ৪০ কেজি ওজন হবে।

সিরাজুল ইসরামের কচু চাষের সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা  থেকে সাধারণ মানুষ কচু ক্ষেত দেখতে ছুটে আসছেন।  তিনি  জানান ইতিমধ্যে ১০ জন চাষীকে এ কচুর চাষ করার জন্য চারা দিয়েছেন। তার কচু ক্ষেতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক ঢুকে হাত উঁচু কররেও বাহির থেকে দেখা সম্ভব হয়না।

লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের  উত্তর জয়পুর দৌলত বাড়ির স্কুল শিক্ষক মরহুম আজহারুল ইসলাম মাষ্টারের তৃতীয় পুত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর চাকরি ছেড়ে এলাকায় ফিরে শখের বসে নার্সারী দিয়ে বিভিন্ন জাতের ফলজ, বনজ, ফুল ও সবজির চারা উৎপাদন শুরু করেন। পশাপাশি তিনি এলাকার যুবকদের হাতে কলমে চারা উৎপাদন করা শিখাতে থাকেন। তার কাছে চারা উৎপাদন শিখে ইতিমধ্যে ৫০ জন বেকার যুবককে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তিনি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।  সিরাজুল ইসলাম বর্তমানে লাউ, কলা, লেবু চাষ করে যাচ্ছেন। কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী সিরাজুল ইসলাম ইউটিউবে থাইগোল্ড জাতের কচুর চাষ দেখেন। পরে তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে  থাইল্যান্ড থেকে এ কচুর চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজারে তার উৎপাদিত কচুর লতি নিয়ে গেলে মানুষ এক নজর তার উৎপাদিত কচুর লতি দেখার জন্য ভীড় জমিয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি তার ক্ষেতে উৎপাদিত কচু বিক্রি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ২০টি কচু চার হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি জানান সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর কচু চাষ থেকে তার ৬ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

এলাকার আরেক সবজি চাষী মো. শরীফ বলেন, সিরাজুল ইসলাম থেকে তিনি ইতি মধ্যে থাই গোল্ড জাতের কচুর চারা নিয়ে লাগিয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম একজন সফল উদ্যোক্তা। তার কাছে কৃষি চাষাবাদ বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ জাহান বলেন, সিরাজুল ইসলামের কচুর ক্ষেত আমি সরেজমিনে দেখে এসেছি। এ কচুর চাষ সম্প্রসারণে সহযোগিতা করবো।

;

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ২২ ব্যক্তি পাচ্ছেন এআইপি সম্মাননা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
কৃষি মন্ত্রণালয়ের লগো, ছবি: সংগৃহীত

কৃষি মন্ত্রণালয়ের লগো, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা-২০২১ পাচ্ছেন ২২ জন। এআইপি নীতিমালা-২০১৯ এর আলোকে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫টি ক্যাটাগরিতে তারা নির্বাচিত হয়েছেন।

স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কৃষি সংগঠন শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচিত করা হয়েছে। তারা হলেন- কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ, পরিবেশ বিষয়ক সংগঠক হিসেবে চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন তিলোত্তমার প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন ও সমবায় উদ্যোক্তা হিসেবে সাতক্ষীরার ধানদিয়া সিআইজি মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি শিখা রানী চক্রবর্তী।

জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন শ্রেণিতে নির্বাচিত ব্যক্তিরা হলেন- এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট এ কে এম ফারায়েজুল হক আনসারী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির কৃষি উদ্যোক্তা এমএ মতিন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ।

কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প শ্রেণিতে ১০ জন এআইপি হয়েছেন। তারা হলেন উন্নতজাতের ফলচাষের জন্য টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. ছানোয়ার হোসেন, পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য ফরিদপুরের খান বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহীদা বেগম, সাথী ফসল উৎপাদন করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা সুরেশ্বর মল্লিক, ফলচাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গ্রিন প্ল্যানেট অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন, জলাবদ্ধতা নিরসণে কাজ করায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অ্যাগ্রো বেইজড সোশিও ইকোনমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন, দুগ্ধ উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদীর তন্ময় ডেইরি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. আমিরুল ইসলাম।

মাছ চাষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আল বারাকা মৎস্য খামার অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মাছুদুল হক চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মৌচাষী কৃষি উদ্যোক্তা মো. রফিকুল ইসলাম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফলচাষী সিরাজ বহুমুখী খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম ও শেরপুর সদর উপজেলার ফলচাষী মা-বাবার দোয়া ফ্রুট গার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হযরত আলী।

রফতানি যোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন শ্রেণিতে দুজন এআইপির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বৃক্ষরোপণ ও বনসাই নার্সারীর জন্য গাজীপুর সদর উপজেলার লিভিং আর্ট গার্ডেনের পরিচালক কেএম সবুজ ও বারোমাসি আম চাষি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচন করা হয়েছে। জৈবসার ও কেঁচোসার উৎপাদক নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অন্নপূর্ণা অ্যাগ্রো সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী রাম নিবাস আগরওয়ালা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারি হিসেবে ঢাকার নবাবগঞ্জের অমিত ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মায়া রানী বাউল ও সফল বীজ উৎপাদকারী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক।

এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর মোট ৫টি বিভাগে এআইপি সম্মাননা প্রদান করা হয়ে থাকে। এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল হচ্ছে ১ বৎসর। এআইপিগণ সিআইপিদের (CIP) মতো সুযোগসুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় হতে একটি প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাশ, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ; বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার; নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং বিমান বন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা। কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে এ সম্মাননা। ২০২০ সালে এআইপি সম্মাননা পেয়েছিলেন ১৩জন।

৭ জুলাই ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২১ সালের এআইপি পুরস্কার প্রদান করা হবে। এতে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুস শহীদ প্রধান অতিথি এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। ২০২২ ও ২০২৩ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

;

কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,সাতক্ষীরা
কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার

কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার

  • Font increase
  • Font Decrease

উপকূল ঘেঁষা ধুমঘাট গ্রামের বাসিন্দা অল্পনা রাণী মিস্ত্রি। গ্রামের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ, কর্দমাক্ত রাস্তা সবকিছু পেরিয়ে যেতে হয় তার বাড়ি। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট গ্রামের এই বাসিন্দা নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন বিলুপ্ত অচাষকৃত শাক-সবজি, ওষুধি ও ফলমূলের বীজ ভান্ডার। পেয়েছেন শেখ হাসিনার থেকে পাওয়া পুরষ্কারও।

প্রত্নতত্ত্ব এলাকায় থেকে ও বিলুপ্ত অচাষকৃত শাক-সবজি, ওষুধি ও ফলমূলের বীজ সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৫৫০ জাতের। তার বীজ ভান্ডারে রয়েছে অচাষকৃত কিন্তু পুষ্টিগুণ সম্পন্ন নানা উদ্ভিদ বৈচিত্রের বীজও। ২২ প্রকার শিম, আট প্রকার ডাটাশাক, ১০ প্রকার মরিচ, শতাধিক ওষুধি, ৫০-৬০ প্রকার সবজি, ২২ প্রকার অচাষকৃত উদ্ভিদসমূহ।

ছায়া সবুজময় গ্রামের মাঠে ঘাঠে দেখা যায় গরু ছাগলের বিচারণ। মাটির রাস্তার ঘ্রাণ নিয়ে অল্পনা রানীর বাড়িতে ঢুকতেই চোখে মেলে বীজ রাখার ঘর, যেখানে বোয়ামে, প্যাকেটে বা বস্তায় রাখা হয়েছে বীজ। এই বীজ দিয়েই চাষাবাদ করেন অল্পনা রানী, বিতরণ করেন গ্রামের অন্যান্য কৃষকদের মাঝেও।

অল্পনা রানীর মতে, স্থানীয় জাতের বীজ চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। এই বীজ থেকে উৎপাদিত ফসলের বীজ সংরক্ষণ করা যায়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা যায় বলে মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। আমরা রাসায়ানিক সার ও কীটনাশক দেওয়া শাক সবজি খেয়ে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ছি। যার কারণে আমাদের জৈব পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।

তিনি স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ না করলে কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা যদি বীজ সংরক্ষণ না করি তো এক সময় আমাদের কৃষকদের কাছে কোনো প্রকার বীজ থাকবে না। ফলে আমাদের বীজ প্রয়োজন হলে তাদের কাছে হাত পাততে হবে। তাই সেখান থেকে ২০১০ সাল থেকে আমি বীজ সংরক্ষণ শুরু করি।

এজন্য স্থানীয় কৃষকদের সাথে বীজ বিনিময়ের মাধ্যমে দেশীয় বীজ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সাধারণ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন বিষমুক্ত সবজির খামার এবং সংরক্ষণ করে রেখেছেন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক শাকসবজি। যা সচারচর বাড়ির আনাচে কানাচে জন্মাতো কিন্তু এখন আর সেগুলো চোখে মেলে না। তবে তার বাড়ির আঙিনায় গেলে দেখা মিলবে সেইসব বিলুপ্ত প্রায় শাকসবজির সাথে।

স্থানীয় বীজ সংরক্ষণে তিনি নিজে কিভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন জানতে চাইলে বার্তা২৪.কম’কে অল্পনা রানী বলেন, ২০১০ সাল থেকে আগে দু’একটি বীজ রাখতাম। ২০১২ সালে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) আমাকে বীজ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করে এর গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝায়। প্রশিক্ষণও দেয়। নানাভাবে সহায়তাও করে। বারসিকের উৎসাহ পেয়েই আমি বীজ সংরক্ষণ শুরু করি। যা এক যুগের ব্যবধানে বীজ ভান্ডারে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, হাইব্রিড বীজ কিনে কৃষকরা প্রতিনিয়ত ঠকছে। হাইব্রিড বীজ চাষ করতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে, হাইব্রিড বীজের ফসল থেকে বীজ রাখাও যায় না। এখন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষের নানা রকম রোগ বালাই হচ্ছে। আর বীজ রাখতে না পারায় কৃষক কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে।

বিপরীতে স্থানীয় জাতের বীজ চাষ করতে কোনো রকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেই ফসল উৎপাদন করা যায়, এর বীজও রাখা যায়, মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে- যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণের মাধ্যমেই কৃষক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদাও নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য কোনো বীজই আমি হারিয়ে যেতে দেই না।

অল্পনা রানীর মতে, উপকূলীয় দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় বীজ সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, প্রতিবছর শ্যামনগর উপকূলে অন্তত দুটি করে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। এতে অনেক সময় রোপণকৃত বীজ নষ্ট হয়ে যায়। অনেক বীজ হারিয়ে যায়। এমন সময় কৃষকের হাতে বীজ থাকলে তিনি আরও রোপণ করতে পারেন। কিন্তু বীজ না থাকলে আবার কেনা ছাড়া উপায় থাকে না।

কীটনাশকের বদলে ফসলের ক্ষেতে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, আমি নিমপাতা ও মেহগুনির ফল দিয়ে বালাইনাশক তৈরি করি। এছাড়া সহনীয় মাত্রায় ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি স্প্রে বা ঘুটের ছাই কিংবা তুতে ও চুন দিয়ে মিকচার তৈরি করে ক্ষেতে ব্যবহার করি। বালাইনাশক হিসেবে এগুলো খুবই উপকারী।

বীজ সংরক্ষণ ও স্থায়িতশীল কৃষি চর্চার জন্য তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও। এজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ভোলেননি স্বশিক্ষিত কৃষাণী ও খাদ্য যোদ্ধা অল্পনা রানী মিস্ত্রী।

তিনি বলেন, নদী পার হতে গেলে যেমন সাঁকো লাগে, বারসিক আমার জীবনে সেই সাঁকো হিসেবে কাজ করেছে। আমার জীবনে আলো দিয়েছে। জ্ঞানের আলো। যদি তারা আমাকে কোনো অনুদান দিতো, হয়তো তা খেয়ে ফেলতাম। কিন্তু তারা তা না দিয়ে আমাকে দিয়েছে জ্ঞানের আলো। এই জ্ঞানের আলোয় আমার জীবন ভরে উঠেছে। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। এছাড়াও আমি ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক, ২০২০ সালে অন্যান্য পুরস্কার, উপজেলা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছি। দেশ বিদেশের টেলিভিশন চ্যানেল আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করতে আসে। আমার জীবনে আর কী চাওয়া আছে?

;

হাওরে বৃষ্টির পানিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে গত দুইদিনের বৃষ্টিতে কিছু জমিতে পানি জমেছে। ফলে কাটা ধানগুলি জমিতে স্তূপ করে রাখছে। এমনকি ধান মাড়াই করার জায়গায় পানি জমে থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। ধান শুকানোর পরিবর্তে সবাই এখন ধান কাটাতে বেশি মনোযোগী। কারণ বৃষ্টির পানি জমে আছে বিস্তীর্ণ মাঠে। এতে ম্লান হতে বসেছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন।

সোমবার (৬ মে) সরজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন হাওরে কৃষকরা আগেভাগেই ভোর থেকেই ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন। 

কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আর একসপ্তাহ দিনটা ভালো থাকলে ফসল নিয়ে আসতে পারতাম। একদিন ধান কাটছি আরেকদিকে মাড়াই করছি৷ শুকিয়ে ঘরে তোলার চেষ্টা করছি। গতকালের শিলাবৃষ্টি ভয় তৈরি করেছে। কারণ শিলাবৃষ্টিতে ধানের অনেক ক্ষতি হয়। 


কিশোরগঞ্জে রোববার (৬ মে) রাতে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। প্রায় পাঁচ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। বৃষ্টির সঙ্গে ছিল তীব্র বাতাস। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে কখনো থেমে, কখনো অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে রাত তিনটা পর্যন্ত। বৃষ্টিতে স্বস্তি এলেও দুশ্চিন্তা বেড়েছে কৃষকদের। শিলাবৃষ্টিতে শেষ মুহূর্তে ধানের ক্ষতি হলে বড় বিপর্যয় ঘটবে কৃষকদের।

এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বৃষ্টি পড়েছে। স্বস্তির বৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে প্রশান্তি নেমে এসেছে। জেলা সদর ও আশপাশের উপজেলায় শুরু হয় ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। থেমে থেমে কয়েকদফা বৃষ্টিতে নেমে আসে স্বস্তি।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে হাওরে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৫ টন ধান। যা বিক্রি হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই বাকি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।


কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘উঁচু-নিচু জমি হাওরের একটা বড় সমস্যা। অতি বৃষ্টি হলে ধান ডুবে যায়। এর ফলে কৃষকরা নিচের দিকে ধান কেটে ওপরের দিকে আসছে। আমরা আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। তাদেরকে দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷

 

;