ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী চিন্তিত জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এই মুহূর্তে ধান কিনে দাম বাড়ানোর তেমন সুযোগ নেই। তবে অন্য কোনো উপায়ে এ সমস্যার সমাধান করা যায় কি না সে ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ মহলে আলোচনা চলছে।
শনিবার (১৮ মে) দুপুরে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের সেমিনার হলে ‘জলবায়ু পরিবর্তন: কৃষি খাতের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম (বিসিজেএফ) আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি কাওসার রহমান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক কৃষি সচিব ড. আনোয়ার ফারুক, বিসিজেএফ সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রমুখ।
ধানের দাম কমায় ধান খেতে আগুন লাগানোর বিষয়টি খারাপ চোখে না দেখার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ধানের দাম অনেক কম। এ দেশে আগে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে মানুষ কাউন খেয়ে থাকত। আশ্বিন-কার্তিক মাসে শাপলা খেয়ে থাকত। মানুষের অস্বাভাবিক কষ্ট হতো। সেই দেশে এখন ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যায় না। এটা ভালো দিক। এই যে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না এটা খারাপ কোনো দিক না। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো ইঙ্গিত। দেশ উন্নত হচ্ছে, মানুষের জীবন-যাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। এটা অত্যন্ত ভালো একটি দিক। কৃষি কাজ আর মানুষ করতে চাচ্ছে না। খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে আমাদের দেশ এখন খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে। এ রকম প্রতিবাদ অনেক দেশেই হয়।
এই মুহূর্তে ধান কিনে দাম বাড়ানোর তেমন সুযোগ সরকারের হাতে নেই। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই চিন্তিত। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের সর্বোচ্চ মহলে আলোচনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের বিষয়টি সরকার আগেই উপলব্ধি করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যন্ত্রিকীকরণের জন্য পৃথিবীর কয়টা দেশে আছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেয়, উপকূল এলাকার জন্য ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়? আমাদের সরকার কিন্তু দিচ্ছে। এখন সমস্যাটা প্রকট হয়েছে। আমাদের ছাড় দিতে হবে। তবে সরকার অত্যন্ত সচেতন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই চিন্তিত।
চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার সমস্যার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমি যখন খাদ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন দেখেছি, চাষিদের ভর্তুকি দেওয়ার কথা উঠলে রাজনৈতিক প্রভাবশালী লোকেরা সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের নামেই ভর্তুকি তুলে নিতেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিদ্যমান গুদামে ২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ করার ক্ষমতা রয়েছে। আরো ছয় লাখ টনের সাইলো হচ্ছে, সেটাও তারাতরি হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে গত বছরের আট থেকে ১০ লাখ টন চাল আছে, গমও আছে। আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা সাড়ে তিন কোটি মেট্রিক টন। এখন এই ১০-১২ লাখ মেট্রিক টন নিয়ে নিলে কী প্রভাব পড়বে? দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক কোটি ৫০ লাখ কৃষক রয়েছেন। কিন্তু কৃষক নির্বাচন করা একটা জটিল কাজ। এখানে অনেক ভুয়া নামে ভর্তুকির টাকা তুলে নেওয়ার নজির আছে।
মন্ত্রী বলেন, অভিযোগ আছে, মিলাররা ধান কিনছেন না। কিনবেন কীভাবে? তারা আমন মৌসুমে ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নিয়ে ধান কিনেছেন সেটাই এখনও বিক্রি করতে পারেননি। হঠাৎ করে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।একটা সমাধান আমাদের হাতে আছে। সেটা হলো-যদি রফতানিতে যাই। তবে রফতানিতে গেলেও ঝামেলা আছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। দেখে গেল রফতানি করার পর হঠাৎ বন্যায় ফসলের ক্ষতি হল, তখন আবার সমস্যায় পড়ব। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, বিষয়টি সমাধান করার। রফতানি করতে হলেও ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে হবে। তারপরও আমরা রফতানি করার চেষ্টা করছি। ধান কাটা পুরোপুরি শেষ করার পর কিছু ধান রফতানি করার চেষ্টা করা হবে।