সম্প্রতি অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সোনাই নদীর তীর ভেঙে হবিগঞ্জের মাধবপুরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অন্তত ২০টি গ্রাম বেশ কয়েকদিন যাবৎ পানিবন্দি ছিল। বর্তমানে ঐ গ্রামগুলোতে পানি নামলেও ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো। রাস্তাগুলো ভেঙে পড়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে। সেই সাথে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে ফসল ও মৎস খামারের।
এদিকে, সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া কৃষকরা এখনো কোনো সরকারি সহযোগিতা পাননি। ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও সফল হতে পারছেন না অনেকেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুন রাতভর প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোনাই নদীর আলাবক্স ও কমলপুর অংশে তিনটি ভাঙন দেখা দেয়। ঐ ভাঙনগুলো দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় উপজেলার কমলপুর, হরিণখোলা, সিদ্ধরপুর, চৈতন্যপুর, কালিকাপুর, জয়নগর, দেবপুর, নুরুল্লাপুর, মনোহরপুর, সাতপাড়িয়াসহ প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
গ্রামগুলো পানিবন্দি হওয়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানিতে ভেসে যায় প্রায় দুই শতাধিক পুকুরের মাছ। ৫০০ হেক্টর জমির উঠতি ফসল (বিভিন্ন ধরনের সবজি) তলিয়ে যায়।
বেশ কয়েকদিন পানিবন্দি থাকার পর এখন পানি নামলেও দেখা দিয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ। গ্রামগুলোর অধিকাংশ রাস্তায়ই দেখা দিয়েছে ভাঙন। অনেক গ্রামে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ছোট ব্রিজ ও কালভার্ট ভেঙে গেছে। স্কুল-কলেজের রাস্তাঘাট নষ্ট হওয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষা কার্যক্রমে। পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে ঐসব গ্রামের জনসাধারণকে।
এ ব্যাপারে চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আপন মিয়া বলেন, ‘এর আগে কখনো পাহাড়ি ঢলে চৌমুহনী এলাকার এমন ক্ষতি হয়নি। প্রতিটি গ্রামের ছোট-বড় রাস্তা বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারি বিভিন্ন দফতরে জানানো হয়েছে। বরাদ্দের অপেক্ষায় আছি।’
শাহজাহানপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের তৌফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের শাহপুর, জালোয়াবাদ, নোয়াগাঁও গ্রামের রাস্তাঘাট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করা হয়েছে।’
এদিকে, মাধবপুর-চুনারুঘাট আসনের সাংসদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. মাহবুব আলী স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আপাতত চার মেট্রিকটন চাল ও ঘর হারাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১০০ বান্ডিল টিনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। গ্রামীণ ভাঙা রাস্তা বিশেষ টিআর-এর মাধ্যমে মেরামতের কাজ চলছে।’
আরও পড়ুন: মাধবপুরে সোনাই নদী ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত