বারান্দার জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ৯৫ বছর বয়সী রত্নগর্ভা। বাকরুদ্ধ হয়ে দুচোখ দিয়ে দেখছেন দশম ছেলে সাইফুজ্জামান মিন্টুর বড় মেয়ে নাতনি আশরা আনম খানের মরদেহ। তার আগে চিরবিদায় জানিয়েছেন ছেলে সাইফুজ্জামান মিন্টু ও তার ছোট মেয়ে তাসনিম জামান খানের মরদেহ। একসঙ্গে তিনজনের মরদেহ বিদায় জানিয়ে স্তব্ধ রত্নগর্ভা এই মা।
রত্নগর্ভা মায়ের নামটি জানতে চাইনি। তার নামটি দেশের সরকারি বিভিন্ন দফতরে গর্বিত সন্তানদের পাশে লেখা রয়েছে। শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অজ পাড়াগাঁয়ে বেড়ে ওঠা সন্তানরা আজ আলোকিত। ছয় ছেলে ও পাঁচ সন্তানের জননী এই রত্নগর্ভা।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে সমাহিত হলেন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ দুই মেয়ে
রত্নগর্ভার বড় ছেলে আবুল হাশেম খান অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন। সম্প্রতি তিনি অবসরে সময় কাটাচ্ছেন। দ্বিতীয় ছেলে কর্নেল ডা. নজরুল ইসলাম, তৃতীয় ছেলে নর্থ ইউনিভার্সিটির প্রভাষক ড. মোস্তফা কামাল খান, চতুর্থ ছেলে মিজানুর রহমান কুমিল্লা জেলা সমবায় কর্মকর্তা ও ছোট ছেলে ঝন্টু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। আর সাইফুজ্জামান মিন্টু ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক। অনেক আগেই তারা বাবাকে হারিয়েছে। ছয় ছেলের মধ্যে পঞ্চম ছেলে সাইফুজ্জামান মিন্টু। নিভে গেল মিন্টুর আলোকিত জীবন। তছনছ হয়ে গেছে সাজানো সংসার। সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানে যুক্ত হলো সাইফুজ্জামান মিন্টু ও তার দুই কন্যা সন্তানের নাম। একটি সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ানোর আনন্দকে বিষাদে ভরিয়ে দিল। গোটা পরিবারকে করে ফেলল তছনছ।
রত্নগর্ভা এই মায়ের দিন কাটে প্রতিষ্ঠিত সন্তানদের বাসায় ও গ্রামের বাড়িতে। গর্ভের সন্তান ও দুই নাতনিকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ছেলের বউ কণিকা আক্তার (৪০) ও দশ বছর বয়সী নাতি মন্টু এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে লরি-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে দুই মেয়েসহ বাবার মৃত্যু
সপরিবারে সাইফুজ্জামান মিন্টু শনিবার সকালে নিজেই ড্রাইভিং করে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বাইপাস মোড়ে তাদের বহন করা প্রাইভেটকারটি ধীরগতিতে আসলে ঢাকা থেকে আসা একটি লরি মোড় ঘুরতে গিয়ে সজোরে চাপা দেয়। এতে করে ঘটনাস্থলেই মারা যান সাইফুজ্জামানের দুই মেয়ে। আহত অবস্থায় সাইফুজ্জামানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে শোকের মাতম