'নিমগ্ন পাঠচর্চার সন্ধানে: সমাজে গ্রন্থাগারের ভূমিকা বিষয়ক সমীক্ষায় কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি' ড. মাহফুজ পারভেজের গবেষণালব্ধ গ্রন্থ। দীর্ঘ একবছরের মাঠ পর্যায়ের গবেষণা ও ক্ষেত্রসমীক্ষার ভিত্তিতে রচিত গ্রন্থটি জুন মাসে (২০২৩) প্রকাশ করেছে ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'স্টুডেন্ট ওয়েজ'। পাশাপাশি অনলাইন বুকসেলার রকমারি.কম গ্রন্থটি বিপণন করছে।
গ্রন্থের সূচনায় ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, সভ্যতার আদি সূচনা থেকে আজকের অত্যাধুনিক জগত পর্যন্ত গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরির উপস্থিতি বিদ্যমান এবং মানব জাতির সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতি ও বিকাশের প্রতীক রূপে বিবেচিত। লাইব্রেরি-বিহীন সমাজের ঐতিহ্যগত শেকড়, সাংস্কৃতিক দ্যুতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি দুর্বল।
প্রাচীন সভ্যতা থেকে মুঘল ও ব্রিটিশ যুগ পেরিয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের পর্যালোচনায় ড. মাহফুজ পারভেজ উল্লেখ করেন, পৃথিবীতে বিশেষায়িত ও সাধারণ গ্রন্থাগার যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে গণগ্রন্থাগার বা পাবলিক লাইব্রেরি, যা সভ্যতার চাকাকে সচল রেখেছে এবং মানব জাতির মেধার ভাণ্ডারকে প্রজন্মব্যাপী সম্প্রসারিত করে চলেছে।
গবেষণা পরিচালনা ও প্রকাশনা দপ্তর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মঞ্জুরিতে সম্পন্ন ‘বাংলাদেশের সমাজে পাবলিক লাইব্রেরির ভূমিকা: একটি কেসস্টাডি’ শীর্ষক গবেষণাকর্মের প্রয়োজনীয় পরিমার্জনা, পরিবর্ধনের ভিত্তিতে এই গ্রন্থ রচিত হয়েছে। এতে সরেজমিন গবেষণায় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান রূপে লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগারের ঐতিহাসিক অবদান পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং তথ্য-প্রযুক্তির অপ্রতিরোধ্য এ যুগের সমকালীন বাস্তবতায় প্রথাগত লাইব্রেরির নানামুখী রূপান্তরের পটভূমিতে যুগোপযোগী সংস্কারের জন্য কতিপয় সুপারিশ উপস্থাপিত হয়েছে।
গ্রন্থটি শুধু গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বা লাইব্রেরি সায়েন্সের নয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং সমাজ ও মানব বিদ্যার নানা বিষয়কেও স্পর্শ করেছে। বিশেষত, কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরিকে সমীক্ষার আওতায় এনে কিশোরগঞ্জের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বির্নিমাণ গ্রন্থের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। সঙ্গত কারণেই গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের সাংস্কৃতিক পরম্পরার কয়েক প্রজন্মের কৃতবিদ্য উত্তরাধিকারীকে।
'নিমগ্ন পাঠচর্চার সন্ধানে: সমাজে গ্রন্থাগারের ভূমিকা বিষয়ক সমীক্ষায় কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি' ড. মাহফুজ পারভেজের ত্রিশতম গ্রন্থ। লেখক জানান, আমার এই সর্বশেষ গ্রন্থটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক আবেগ ও আনন্দ। কারণ আমার শৈশবে পাঠ্য-সহায়ক পাঠের শুরুই হয়েছে কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে। পরবর্তীতে বহু লাইব্রেরিতে পড়াশোনা ও গবেষণার কাজে জড়িত হয়েছি। ফলে এ বিষয়ে গবেষণা ও গ্রন্থ প্রকাশের বিষয়টি আমার কাছে নিঃসন্দেহে এক উপভোগ্যকর তৃপ্তির ঘটনা।
উল্লেখ্য, ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম ৮ মার্চ ১৯৬৬ সালে কিশোরগঞ্জ শহর। তাঁর পিতা ডা. এ.এ. মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক; মাতা নূরজাহান বেগম, সামাজিক ব্যক্তিত্ব; উভয়েই প্রতিষ্ঠা করেছেন কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, গবেষণামূলক ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’। তিনি পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা অধ্যাপনা, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; লেখালেখি, গবেষণা, সাহিত্য সাধনা, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমে ব্রতী।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ত্রিশ। উল্লেখযোগ্য হলো, গবেষণা-প্রবন্ধ: বঙ্গবন্ধু: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো, দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর, প্রকাশনা শিল্প স্টুডেন্ট ওয়েজ মোহাম্মদ লিয়াকতউল্লাহ, শান্তিচুক্তির দুইযুগ: শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের পথে পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিদ্যমান সমস্যা ও সমাধানের রূপরেখা, আনারকলি: মুঘল হেরেমের রহস্যময়ী নারী, একবিংশ শতকের বাংলাদেশ, বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মানচিত্রের গল্প। উপন্যাস: পার্টিশনস; নীল উড়াল, রঙধনু। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে, উত্তর ভারতের পথে-প্রান্তরে। গল্প: ইতিহাসবিদ; বুুড়ো ব্রহ্মপুত্র; ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার; আমার সামনে নেই মহুয়ার বন; গন্ধর্বের অভিশাপ।