বঙ্গবন্ধু নিহত হলে তাৎক্ষনিক অলৌকিক যানে
উড়ে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বরে,
ভস্ম ছেড়ে মূর্তি ধরে ছুটে এসেছিলেন মেঘদূতের কবি কালিদাস,
এসেছিলেন বিদ্যাপতি ভূসুকূ লুইপা কাহ্নপা আলাওল
মুকুন্দ দাস আব্দুল হাকিমসহ আরো কতো বিদগ্ধজন,
যেন শেখ মুজিবের মৃত্যুতে শোকার্ত কবিদের স্বতঃস্ফূর্ত কাব্যসভার আয়োজন!
বিষন্ন রবীন্দ্রনাথ একটি কবিতার জন্য
রক্তভেজা সিঁড়িতে বসে সঞ্চয়িতা উল্টে যাচ্ছিলেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা,
গীতবিতান ওল্টাতে থাকলেন প্রথমে ধীরে,
অত:পর কিছুটা দ্রুত,
অতঃপর অনেকটা উম্মাদের মতো,
হাত দিয়ে নায়ের খোলের থেকে জলসিঞ্চনের মতো
একটি কবিতা তিনি তন্ন তন্ন করে পেলেন না কোথাও,
জগতের শ্রেষ্ঠ কবি তাঁর লেখা হাজারো কবিতা থেকে
মুজিবের লাশের পাশে বসে আবৃত্তি করার মতো
একটি কবিতাও খুঁজে পেলেন না!
পেলেন প্র্চুর রক্ত আর বারুদের ঈষৎ ঝাঁঝালো গন্ধ
মিলিটারি বুটের দানবীয় বর্বর আঘাত ও অসহায় নারীদের কাতর মৃত্যু-আর্তনাদ,
কামাল, জামাল, রাসেল, সুলতানা, বেগম মুজিবের
আর গেটের গোড়ায় পড়ে থাকা কিছু পুলিশের লাশ
অদুরে দেখতে পেলেন সড়কে শায়িত বিশ্বস্ত কর্নেল জামিলের দেহ।
রবীন্দ্রনাথ সিঁড়িতে বসে থাকলেন রক্তেভেজা মুজিবের
নিস্তব্ধ নীরব দেহটিকে আলগোছে ছুঁয়ে,
পাঞ্জাবি আলখাল্লা আর হাত দুটো ঈষদুষ্ণ রক্তে ভেজা
গীতাঞ্জলির পাতাগুলো থেকে সবগুলো গান
কার নির্দেশে যেন পৃষ্ঠা খালি করে উড়ে চলে গেছে,
একটি অক্ষরের চিহ্নও নেই সঞ্চয়িতা গীতবিতান মেঘদূতের পাতায়,
শুধু লাল থকথকে রক্তমাখা সবগুলো পুস্তকের পাতা।
বিরহী যক্ষের মতো জলভারনত মেঘের দিকে তাকিয়ে
বাক্যহারা কালিদাস নিজেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন,
কৈলাস পর্বত থেকে এত দূরে এসে তিনি কি দেখতে পেলেন?
একে একে দান্তে, হোমার, গ্যয়টে, বাল্মীকি, কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস,
সবাই এলেন, কারো মুখে কথা নেই বিষন্নতা আর করুন দীর্ঘশ্বাস ছাড়া।
রক্তে হাঁটুগেড়ে শুধু শেক্সপিয়ার বিড়বিড় করে বললেন,
Oh my God, how could it happen?
How could You allow this to happen?
My pen shall fail to write a sentence on this!
Are they human beings who did this grisly act!
আকাশের দিকে থেকে এই স্বগতোক্তির কোনো জবাব এলো না।