মুজিবের মুক্তি: ময়দানের সেই সভা

, শিল্প-সাহিত্য

আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম | 2023-11-02 21:33:41

(পূর্ব প্রকাশের পর...)

এতো গেল সদ্য স্বাধীন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের আগমনের খবর। কিন্তু আমরা যদি আরও পেছনে ফিরে তাকাই..দেখবো বাংলাদেশের মুক্তির জন্য অখণ্ড স্বদেশের ভাবাবেগ যেন দুর্দমনীয় আবেগে সব ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। বলছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনে ৬ আগস্ট ১৯৭১ এ কলকাতার ময়দানে পাকিস্তানের অন্ধ কারাপ্রকোষ্ঠে বন্দি মুজিবের মুক্তির জন্য এক বিরাট সভা আহ্বানের বিজ্ঞপ্তির কথা।

বৃহত্তর বাঙালি তথা ভারতের শীর্ষ পর্যায়ে শিল্প-সাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তিরা সেদিন বিবৃতি দিয়ে সভা আহ্বান করেছিলেন মুক্তির দিশারী মুজিবের মুক্তির জন্য জনগণকে ময়দানে সমবেত হতে। এবার আমরা দেখবো সেই দীর্ঘ তালিকা, কারা ছিলেন বিবৃতিদাতাদের মধ্যে?


‘মুজিবের মুক্তির দাবিতে শনিবার ময়দানে সভা’ শীর্ষক খবরে লেখা হয়েছে, ‘শেখ মুজিবর রহমান চেয়েছেন মানুষের মুক্তি। তিনি চেয়েছেন নতুন বাংলাদেশ গড়তে। তাঁকে শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব মানব সভ্যতার জন্য কলংক। কলকাতার লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরা এই ঘৃণ্য প্রয়াসকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ধিক্কার জানাচ্ছে। আমরা শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি চাই।’

‘শনিবার বেলা আড়াইটের সময় ময়দানে (টাটা বিল্ডিংয়ের বিপরীত দিকে) কলকাতার লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, গায়ক, অভিনেতা এবং অন্যান্য সৃষ্টিকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা সমবেত হয়ে এই উপলক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। শ্রেণী মতো নির্বিশেষে সকলকে যোগ দেবার জন্য আহ্বান জানাই।’


আরও পড়ুন: ‘বাঙালি দেখিয়েছে, তারা মানুষ’


বিবৃতির নিবেদকরা হলেন, ‘তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়, অন্নদাশংকর রায়, বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিৎ রায়, শান্তিদেব ঘোষ, আবু সায়ীদ আইয়ুব, কানন দেবী, সুচিত্রা মিত্র, মনোজ বসু, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, প্রতিভা দেবী, সন্তোষকুমার ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন বসু, নন্দগোপাল সেনগুপ্ত, মণীন্দ্র রায়, সাগরময় ঘোষ, নীরেন্দ্র চক্রবর্তী। গৌরী আইয়ুব, গৌরী কিশোর ঘোষ, রমাপদ চৌধুরী, বিমল কর, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্বেশ্বর সেন, তরুণ স্যানাল, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত, চিন্তামনি কর, আমিনা কর, প্রকাশ কর্মকার, পূর্ণেন্দু পত্রী, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, আশাপূর্ণা দেবী, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, গোপাল হালদার, সমরেশ বসু, গোলাম কুদ্দুস, শঙ্খ ঘোষ, অরুণ সরকার, চিন্মোহন সিহানবীশ, দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, কামাঙ্খীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বিমল চন্দ্র ঘোষ, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, সবিতাব্রত দত্ত, উৎপল দত্ত, শোভা সেন, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বাদল সরকার, তিমিরবরণ, অমলাশঙ্কও, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজী সব্যসাচী, কালী ব্যানার্জি, দেবব্রত বিশ্বাস, মণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখ্যোপাধ্যায়, সুখেন্দু গোস্বামী, নির্মলেন্দু চৌধুরী, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় কর, হরিসাধন দাশগুপ্ত, অপর্ণা সেন, মাধবী চক্রবর্তী, অসিত চৌধুরী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, তরুণ মজুমদার, অরুন্ধতী দেবী, জহীর রায়হান, হাসান ইমাম, আলমগীর কবির, সুপ্রিয়া দেবী, নির্মল কুমার, দীপান্বিতা রায়, অজিত বসু, হরিদাস ভট্টাচার্য, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, তরুণ মজুমদার, সন্ধ্যা রায়, বসন্ত চৌধুরী, আশা দেবী, অমিতাভ চৌধুরী, মহাশ্বেতা দেবী, গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লীলা মজুমদার, সুবোধ ঘোষ, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ, মতি নন্দী, গণেশ বসু, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখ্যোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু পালিত, বারণ গঙ্গ্যোপাধ্যায় এবং আরও অনেকে।’


এসব গুণীজনদের নাম নতুন করে উৎকীর্ণ করা এজন্য জরুরি যে, ভারতের সরকারের অনেক পদক্ষেপ মানুষ জানেন যে তারা বাংলাদেশের জন্য ও মুজিব মুক্তির জন্য কতটা করেছেন। কিন্তু নাগরিক সমাজের কথা ও বুদ্ধিজীবীদের কথা কমই উচ্চারিত হয়। সেকারণেই তাদের নাম নতুন প্রজন্মের জানা ও জানানো অবশ্য কর্তব্য।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভারতের জনগণের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গবাসীর গভীর ভালোবাসার এই প্রকাশ সদ্য স্বাধীন দেশে কারামুক্ত মুজিবের কলকাতা আগমনের সময়েও দেখব। নয় মাস রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে পাশে থাকা ভারতে র জনগণ যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে বরণ করেছিল নিয়েছিল তার অনুপুঙ্খ বিবরণ আমরা পাবো সেই সময়কার সংবাদপত্রে। (চলবে...)

এ সম্পর্কিত আরও খবর