আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সমন্বয়ধর্মী ধারার প্রবর্তক, কালজয়ী উপন্যাস ‘বিষাদ-সিন্ধু’র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের ১১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর নানা বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে সৈয়দ মীর মুয়াজ্জেম হোসেন ও মা দৌলতন নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়ায় অবস্থিত। তার এ জন্মস্থানকে ঘিরে বর্তমানে এখানে একটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর ও অডিটোরিয়াম রয়েছে। সেখানে মীর মশাররফ হোসেনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র রয়েছে।
অডিটোরিয়ামে সাহিত্যিকের ব্যবহৃত আরাম-কেদারা, বেতের তৈরি যুদ্ধাস্ত্র-ঢাল, বদনা, কাঠের টুলসহ একটা পালকি রয়েছে। দেওয়ালে সাঁটা রয়েছে দেশি বিদেশি কবি, সাহিত্যিক ও মনিষীর ছবিসহ ফ্রেমে বাঁধানো কবির নিজ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির অংশ বিশেষ।
পুরো ঘরটিতে বেশ ক’টি চেয়ার, বই রাখার জন্য একটি শেলফ। আর কবির হাতের রোপিত আমগাছের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ করা হয়েছে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তেমন কোন আয়োজন করা হয় না বলে জানান মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটার কেয়ারটেকার।
তিনি বলেন, এখানে কেবলমাত্র জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জন্মবার্ষিকীর আয়োজন করা হয়ে থাকে।
মীর মশাররফ হোসেনের স্কুল জীবন কেটেছে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে পদমদী এবং শেষে কৃষ্ণনগর শহরে। জগমোহন নন্দীর পাঠশালা, কুমারখালির ইংলিশ স্কুল, পদমদী নবাব স্কুল ও কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল এ পড়ার কথা লেখকের আত্মজীবনীতে লেখা আছে।
কর্মজীবনের শুরুতে মশাররফ হোসেন পিতার জমিদারি দেখাশুনা করেন। পরে তিনি ফরিদপুর নবাব এস্টেটে চাকরি নেন এবং ১৮৮৫ সালে দেলদুয়ার এস্টেটের ব্যবস্থাপক হন। এক সময় এ চাকরি ছেড়ে তিনি লাহিনীপাড়ায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং পরে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় গিয়ে ১৯০৩-০৯ পর্যন্ত অবস্থান করেন।
গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, আত্মজীবনী, প্রবন্ধ ও ধর্মবিষয়ক ৩৭টি বই রচনা করেছেন। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছেন তিনি। মীর মশাররফ হোসেনের কীর্তির মধ্যে বসন্ত কুমারী, জমিদার দর্পণ, মদিনার গৌরব, বিষাদ সিন্ধু, বেহুলা গীতাভিনয়, গাজী মিয়ার বস্তানী, মোসলেম বীরত্ব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কালজয়ী উপন্যাস 'বিষাদ সিন্ধু'র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন ১৯১১ সালের এই দিনে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পদমদী গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন।