আপন মনে কাগজে একের পর এক পেন্সিলের আঁচড় কেটে যাচ্ছেন কয়েকজন চিত্রশিল্পী। তৈরী হচ্ছে সামনে বসে থাকা মানুষের অবিকল প্রতিচ্ছবি। বইমেলায় আসা দর্শনার্থীগণ মেলায় টিএসসি গেইট দিয়ে প্রবেশ হয়ে যাচ্ছে হুবহু মানুষটির অবয়ব। এই ডিজিটাল যুগেছবি তুলে প্রিন্ট দিতে দিতে এর চেয়েও যেন বেশি সময় লেগে যায়।
কিন্তু এখানকার শিল্পীগণ ১০-২০ মিনিটেই হুবহু ছবি এঁকে দিচ্ছেন। হাতের আঁকা ছবিতে চোখ থেকে ঠোঁট , পুরোটা মুখ সব মিলেয়েই যেন একদম স্পষ্ট ছবি ফুটে উঠছে।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪ এর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গনে টিএসসি গেইট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে এ দৃশ্য। কাগজের মাপ বেধে এক একটা সাদাকালো পোর্ট্রেট ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার বিনিময়ে শিল্পীরা এঁকে দিচ্ছেন মানুষের ছবি। রঙিন ছবিও এঁকে দিচ্ছেন চাহিদা অনুযায়ী এতে সময় আরেকটু বেশি লাগে।
জানা যায়, এক সময় এখানে এমন করে বসে ছবি আঁকতে তাদেরকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তবে এখন বাংলা একাডেমির সাহায্যে শিল্পীগণ মেলা প্রাঙ্গনের প্রবেশ মুখে তারা সমস্যা ছাড়াই নির্বিঘ্নে আপন মনে ছবি আঁকতে পারেন। সেখানে নির্দিষ্ট একটি জায়গা বরাদ্দ নিয়ে তারা সকলেই আঁকছেন মানুষের ছবি।
আশপাশে ঝুঁলিয়ে রেখেছেন নিজের আঁকা বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষের ছবি- প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ থেকে নগর বাউল জেমস, কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ থেকে চিত্র নায়িকা শাবনূরসহ অনেকেরই আঁকা ছবি।
ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে বার্তা ২৪.কমের প্রতিনিধির কথা হয় শিল্পী বিশুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা তার নেশা। এখানে মানুষের ছবি আঁকতে ভালোলাগা কাজ করে। মানুষ অনেকেই শিল্পীকে তার প্রাপ্য সম্মান দেন না। তবে, অনেকেই আবার কদর করতে জানেন। নাম মাত্র মূল্যে ছবি এঁকে দিচ্ছেন তারা। অনেকেই খুশি হয়ে বেশি টাকাও দেন। আবার অনেকেই অনুরোধ করলে কম টাকা রাখেন নিজ থেকেই।’
মেলায় ছবি আঁকতে থাকা আরেকজন শিল্পী তরুণ কান্তি সরকার বার্তা ২৪.কমকে জানান, তিনি ১৭ বছর যাবৎ ছবি আঁকছেন। এটা আবেগের জায়গা। মেলায় বিভিন্ন রকম ছবি আঁকছেন তিনি। প্রায় সব রকম ছবিই আঁকা হয়। প্রকারভেদে সরাসরি সামনা সামনি বসিয়ে ছবির আঁকার ক্ষেত্রে ২০০ থেকে ২০০০ টাকায় ছবি এঁকে দিচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে, মোবাইলের পর্দায় ছবি দেখে কিংবা ছবি থেকে ছবি আঁকতে নিচ্ছেন ৫০০-৭০০ টাকাও। অনেকে রঙিন ছবি আঁকায় তবে অধিকাংশই পেন্সিলের সাদাকালো পোট্রেট পছন্দ। রঙিন ছবি হলে রঙ এর দাম বেশি হওয়ায় ১০০০- ২০০০ টাকা রাখছেন তিনি।অর্ডার দিলে ছবি এঁকে দিতে পারেন অয়েল পেন্টিংয়েও। প্রতিদিন অনেক ছবি আঁকা হয় তবে শুক্রবার ও শনিবারে বেশী ভিড় থাকে।
ব্যক্তিগত জীবনে শিল্পীরা ছবি আঁকা ছাড়াও অন্যান্য পেশায় যুক্ত আছেন। এই বইমেলা উপলক্ষে তারা একেকজন এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি উপার্জন করেন। ছবি আঁকা শেষে কেও কেও দিচ্ছেন একটি ভিজিটিং কার্ড অথবা নাম্বার। এই সূত্র ধরে বছরের বাকি সময়েও আসে ছবি আঁকার অর্ডার।
ছবি আঁকানোর সময় কথা হয় রাজধানীর বনশ্রী থেকে আসা এক দম্পতির সঙ্গে। তারা বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়তই ছবি তুলি ফোনে। কিন্তু, হাতে পেন্সিলে আঁকা ছবির সৌন্দর্যটা আরও সুন্দর মনে হয়। শিল্পী তার আপন কিছু বৈশিষ্ট্য ছবিতে ফুটিয়ে তোলেন, যা আমরা ফোনে তোলা ছবিতে দেখতে পাই না।’
প্রসঙ্গত, অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪ এর আয়োজনে বাংলা একাডেমির সহায়তায় মেলা চলাকালীন প্রতিদিন বিকাল ৩ টা থেকে ৮ টায় এবং ছুটির দিন সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯ টা অবদি শিল্পীরা উপস্থিত থাকবেন মেলার টিএসসি গেইটের সামনে।