চারদিকে সাজানো রঙিন মলাটের বই। ছোট ছোট শিশুদের কেউ বুঝে, আবার কেউ না বুঝেই বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে যাচ্ছে। কোমল হাতের স্পর্শে বইগুলো পাচ্ছে পূর্ণতা। পাশাপাশি হাসি, উল্লাস, খুনসুটি, আবদার, মান-অভিমান আর দুরন্তপনা চলছে অবিরাম।
শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৫তম দিন, একই সঙ্গে পঞ্চম শিশু প্রহরে শিশুরা এমন দুরন্তপনায় মেতে উঠে।
চার দেয়ালে বন্দি এই নগরীতে প্রতিদিন উদ্দীপনা হারাচ্ছে শৈশব। তবে কখনো কখনো সেই নগরীও ফিরে পায় প্রাণ। অমর একুশে বইমেলায় সেই প্রাণের স্পন্দন শিশু প্রহর। মেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে আসছে শিশুরা। বাড়তি উচ্ছ্বাস তৈরি হয় সিসিমপুরের আগমনে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, বাবা-মায়ের হাত ধরে বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে বই দেখছে শিশুরা। স্টলে ঢুকে রঙ-বেরঙের বই নেড়ে-চেড়ে দেখছে তারা। কিনে নিচ্ছে পছন্দের বইটি।
শিশু প্রহর উপলক্ষে অমর একুশে বইমেলা শুক্রবার বেলা ১১টায় শুরু হয়। চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। প্রতি শনিবার ও শুক্রবার মেলায় শিশু প্রহর ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
মায়ের সঙ্গে বইমেলায় এসেছে ক্ষুদে শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান ইফা। সিসিমপুরের বই তার চাই-ই-চাই। ফুলের ছড়া বইটি হাতে পেয়েও কিছুটা গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে সিসিমপুরের বইয়ের আবদার তার। বাধ্য হয়েই সন্তানের সেই আবদার রাখতে বাধ্য হলেন তার মা। কী কী বই কিনতে চায় জানতে চাইলে ইফার সরল আবদার, ‘কার্টুন বই কিনব।’
কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে মায়ের হাত ধরে বই মেলায় এসেছে কেজি শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহজানা রশিদ জায়না। তার মা জানান, 'প্রতি বছরই বই মেলায় আসি। শিশু একাডেমির ক্লাস শেষ করে আজ বায়না ধরে মেলায় যাওয়ার। তাই নিয়ে এসেছি। বেশ কয়েকটি বই কিনেছে ওর পছন্দ মতো। ছবিসহ বিভিন্ন ছড়ার বইয়ে বেশ আগ্রহ তার।' পাশ থেকে কায়রা বলে, 'আমি কার্টুন, ভুতের গল্প, কবিতার বই কিনেছি।'
এদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলাপ্রাঙ্গন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। শিশু-অভিভাবক ও বইপ্রেমীদের পাশাপাশি লেখকরাও অনেকে বইমেলায় উপস্থিত থেকে বইয়ে শুভেচ্ছা বার্তা লিখে দিচ্ছেন।
টাপুর টুপুর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত 'স্মার্ট ভুত' লিখে বেশ সাড়া পেয়েছেন মোহসিন আলি। এবারের বই মেলায় তার দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমার লেখক জীবনের বড় প্রাপ্তি পেয়েছি এবারের বই মেলায়। ছোট শিশুরাও বইটি পছন্দ করে কিনে নিচ্ছে। অনেককেই অটোগ্রাফ দিয়েছি।‘
টোনাটুনি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আসিফ আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শুরু থেকে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে শুক্রবারের বিক্রিটা একটু বেশি। আজ সকাল থেকেই শিশুদের উপস্থিতি বেশি। তাই বিক্রিও অন্য দিনের তুলনায় বেশি।’
মিরপুর থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আসা মিনহাজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'বাচ্চারা ঘুরে ঘুরে দেখছে। কোনো বই পছন্দ হলেই কিনে দিতে আবদার করছে, আমিও না করছি না। আবার কোনো কোনো বই কেনা না হলেও ওরা সেটিকে স্পর্শ করে বইয়ের প্রতি যে আগ্রহ দেখাচ্ছে সেটিও বেশ ইতিবাচক। আর শিশুপ্রহরের আয়োজনটি অসাধারণ।’
বইমেলায় শিশু প্রহরে শিশুদের আনন্দ দিগুণ করে দেয় সিসিমপুরের টুকটুকি, হালুম ও ইকড়ি। তারা বটমূলে শিশু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। আড্ডায় তাদের টুকটুকি সবাইকে বই পড়তে বলে। কেননা বই টুকটুকির মতো সবার বন্ধু। হালুম আসার সাথে সাথে অনেকে দৌড়ে হালুমকে ছুঁয়ে দেখতে যায়। হালুমও কাওকে নিরাশ করে না। হালুম তার সব বন্ধুদের বেশি বেশি করে মাছ খেতে বলে।’
এমন আয়োজনে বাড়তি উদ্দীপনা দেখা যায় শিশুদের মাঝে। ভিড় তৈরি হয় শিশু চত্বরে। অমর একুশে বইমেলার শিশুপ্রহরে কচি-কাঁচাদের এমন সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছে মা-বাবার সঙ্গে মেলায় এসে খুশি তারা। তাইতো সবার মুখে ছিল মিষ্টি হাসি।