অমর একুশে গ্রন্থমেলা এলাকায় প্রবেশ করা যায় দুই দিক থেকে। একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে অপরটি দোয়েল চত্বর দিয়ে। মূলত টিএসসি-দোয়েল চত্বর এই রাস্তাটিই মেলায় প্রবেশ করতে ব্যবহার করেন বেশিরভাগ মানুষ।
দুই দিকের যে দিক দিয়েই প্রবেশ করা হোক না কেন, রাস্তার মাঝে মাঝে রাখা কর্তৃপক্ষের সাউন্ড বক্স থেকে কানে ভেসে আসবে, 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি' গানের সুর। এটি ছাড়াও কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের লেখা, ‘ওগো মা, তোমার কোলে জনম আমার, মরণ তোমার বুকে' গান দুটির সুর।
মেলায় আগত দর্শনার্থী, পাঠক, লেখকদের অন্তরে যেনো এ সুর রক্তে দোলা দেয়, সৃষ্টি করে অসাধারণ অনুভূতি, মনে করে দেয় ভাষা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান।
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রাঙ্গণে আয়োজিত মেলায় শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) অন্তত ১০ জন দর্শনার্থী ও পাঠকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের সবার মুখেই প্রকাশ পায় মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা শহীদদের রক্তদানের মহানুভবতা। স্পষ্ট বুঝা যায় মাতৃভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ইমাম। বইমেলায় এসেছেন স্ত্রী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রতি বছরই এ এলাকায় বই মেলার আয়োজন করা হয়, কখনো একা আসি, আবার ওদের সাথে নিয়ে আসি, বই কিনি। গানের সুর কানে আসার পরই অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করে, অব্যক্ত অনুভূতি। মনে করিয়ে দিচ্ছে শহীদদের ত্যাগ, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা তো ভাষা শহীদদের ভুলতেই বসেছি। যখন মেলার ভেতরে প্রবেশ করছিলাম, গানগুলোর সুর কানে আসছিল, তখন শরীরের মধ্যে যেন দোলা দিয়ে গেল; মনে হল, এ সুর রক্তে দোলা দিয়ে যায়।’
ঢাকা কলেজের রসায়ন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন আবিদ পল। তিনি বলেন, ‘রফিক, শফিক, জব্বার আমাদের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের স্মরণ করেই এই গানের সুর বাজানো হচ্ছে। অসাধারণ অনুভূতি হচ্ছে। গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। শহীদরা শুধু আমাদের দিয়েই গেছেন, বিনিময়ে আমরা তাদের কিছুই দিতে পারিনি। তাদের অবদান, চেতনা যদি আমরা মনে প্রাণে ধারণ করতে পারি, হৃদয়ের গভীর থেকে যদি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে পারি তাহলেই তাদের আত্মা শান্তি পাবে।’