বাংলা কথা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ হুমায়ূন আহমেদ ধরার মায়া ছেড়ে যান ২০১২ সালের জুলাই মাসে। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের বই মেলাতে অন্য প্রকাশের কালো বোর্ডের ওপর হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতির পাশে লেখা ছিল রবীন্দ্রনাথের এ চরণটি- `নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে, রয়েছো নয়নে নয়নে।'
হুমায়ূনের প্রস্থানের এই সাত বছরেও কথাটি যেন অমর একুশে গ্রন্থমেলার ক্ষেত্রে ধ্রুব সত্য। এ মেলার আবহে ঘুরে ঘুরে আসেন হুমায়ুন আহমেদ। যেসব প্রকাশনীতে হুমায়ূন আহমেদের বই রয়েছে, সেসব স্টলেই রয়েছে হুমায়ূন কেন্দ্রীক সব বয়সী পাঠকদের ভিড়।
পাঠকদের মতে, হুমায়ূন আহমেদ এক জীবনে যত সৃষ্টি করেছেন, তার ধারা বয়ে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে৷ আর এর মধ্য দিয়েই একুশে গ্রন্থমেলায় পাঠকদের মাঝে বেঁচে আছেন তিনি। অসংখ্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে স্বমহিমায় নিজেকে মেলায় উদ্ভাসিত করে রেখেছেন তিনি। মেলায় এখনো অনেক স্টল-প্যাভিলিয়নে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় হুমায়ূন আহমেদের বই।
বই মেলায় নতুন আঙ্গিকে বিভিন্ন মোড়কে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আসছেন প্রকাশকরা। সেরা নির্বাচিত ছাড়াও চরিত্রগুলোকে নির্ভর করে সংকলন বের করছেন তারা। আবার পুরনো বইগুলোর নতুন নতুন সংস্করণ নিয়েও হাজির হয়েছেন অনেকে। পাশাপাশি তার অগ্রন্থিত নানা লেখাও উঠে আসছে অনেকের লেখায়।
প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশ হুমায়ূন আহমেদের বই বের করে থাকে। এবারের মেলায় প্রকাশনাটির প্যাভিলিয়ন উৎসর্গ করা হয়েছে এই গুণী লেখককে। প্রকাশ করা হয়েছে ১৪০টিরও বেশি বই। প্যাভিলিয়নের উপরে বাড়ির আদলে তৈরি বারান্দায় হুমায়ূন আহমেদের কাটআউট। সেখানে দাঁড়িয়ে যেন মেলার দিকেই দৃষ্টি এই কথা সাহিত্যিকের।
এখানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের বই। এর মধ্যে রয়েছে- ‘দেয়াল’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশা নামদার’, ‘লীলাবতী’। এ প্রকাশনী থেকে হুমায়ূন আহমেদের ৭০ দশকের নির্বাচিত পাঁচটি উপন্যাস প্রকাশ হয়েছে, যাতে স্থান পেয়েছে ‘নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘অচিনপুর’, ‘নির্বাসন’, ‘সৌরভ’।
একইভাবে ৮০ দশকের পাঁচটি উপন্যাস গ্রন্থে স্থান পেয়েছে ‘আমার আছে জল’, ‘বাসর’, ‘আকাশজোড়া মেঘ’, ‘সাজঘর’ ও ‘জনম জনম’। আর ৯০ দশকের সংকলনে স্থান পেয়েছে ‘একজন মায়াবতী’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’, ‘জল জোছনা’ ও ‘পেন্সিলে আঁকা পরি’।
মেলা প্রাঙ্গণে অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পাঠকরা হুমায়ূন আহমেদের লেখার মধ্য দিয়ে যেমন পরিচিত হচ্ছেন, তেমনি পুরনোরা যেসব বই পড়েননি সেগুলো এখন পড়ছেন।’
এছাড়া কাকলী প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে- ‘হুমায়ূন আহমেদ শ্রেষ্ঠ ভূত, যাতে লেখকের ভূতবিষয়ক উপন্যাস ও গল্প স্থান পেয়েছে। অন্বেষা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে- পিয়াস মজিদের সম্পাদনায় ‘কিছু হুমায়ূন: হুমায়ূন আহমেদের অগ্রন্থিত গদ্য ও পত্রগুচ্ছ’।