সামগ্রিক অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৯ পেয়েছেন রাবেয়া খাতুন এবং নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে পুরস্কার পান সাদাত হোসাইন।
নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এ পুরস্কারের আয়োজন করেন এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন। আগামীকাল বুধবার (১৩ নভেম্বর) এ সাহিত্যিকের জন্মদিন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এটি এ অনুষ্ঠানের পঞ্চম আয়োজন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
মন্ত্রী বলেন, 'হুমায়ূন আহমেদের লেখনি সর্বমহলে সমাদৃত। স্কুলের শিক্ষার্থী থেকে মধ্যবয়স্ক সবার জন্য আকর্ষণীয়। উনি নিজেকে প্রকাশ করার যে একটি কল্পতত্ত্বের বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছেন তার জন্য উনি আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন।'
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এমন ক্ষণজন্মা পুরুষের পাশে থাকার সুযোগ খুব কম মানুষেরই ভাগ্যে জোটে। আমি সেদিক থেকে ভাগ্যবান।'
পুরস্কারপ্রাপ্ত দুজনের উদ্দেশে আব্দুল মোমেন বলেন, 'আজকে যে দুজন সম্মানিত হয়েছেন তারা প্রকাশের ক্ষেত্রে যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তার মাপকাঠি হলো তাদের পাঠক। তারা যদি ভালো না লিখতেন তবে তাদের পাঠক থাকতেন না, তাদের কাছে প্রকাশকরাও আসতেন না।'
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, হুমায়ূন আহমেদের সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন, হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই সাহিত্যিক জাফর ইকবাল, সভাপতি আনিসুজ্জামান, অন্যদিনের সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হায়দার আলী সহ হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা।
এ সময় আসাদুজ্জামান নূর বলেন, 'গতকালকেই একজন সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, অনেকেই বলেন হুমায়ূন আহমেদ একজন জনপ্রিয় লেখক কিন্তু উনি কি আসলেই উঁচুমানের লেখক? এক্ষেত্রে আমি বলব জনপ্রিয় লেখক আর উঁচুমানের লেখক এর মধ্যে কোনো বিরোধ আছে বলেতো আমার মনে হয় না। যদি কেউ উঁচুমানের না হন তাহলে তার লেখা জনপ্রিয় হয় কী করে?'
তিনি আরও বলেন, 'তার একগুঁয়েমি ও বুদ্ধির তুলনা হয় না। সে অনেক বড় লেখক। কিন্তু এমন বন্ধু আর আসবে না।'
হুমায়ুন সহধর্মিণী শাওন বলেন, 'এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পঞ্চম বছরে পদার্পণ করেছে। তাই এটি আমার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বছর। হয়তো এক সময় আমরা থাকব না, কিন্তু আমি আশা করব আজীবন এ নাম নিয়েই এ আয়োজন চলতে থাকবে।'
তিনি রাবেয়া খাতুন প্রসঙ্গে বলেন, 'রাবেয়া আপা আমার এবং হুমায়ূন আহমেদের পারিবারিকভাবে অনেক কাছের একজন। উনি হুমায়ূন আহমেদের অনেক প্রিয় একজন মানুষ। আমাদের অনেক কঠিন সময়ে উনি সাহস যুগিয়েছেন। আমরা গর্ববোধ করছি, আপনাকে এ সম্মান দিতে পেরে।'
সাদাত প্রসঙ্গে বলেন, 'পাঠককুলে ওর একটি নাম আছে, ও নাকি হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখে। এ বিষয়টাতে নবীন সাহিত্যিকরা এক ধরনের আপ্লুত অনুভব করে এটা অবশ্যই গর্বের বিষয়। কিন্তু সাদাত হোসেনের ক্ষেত্রে দেখেছি হুমায়ূন আহমেদের বলাটা গর্বের বিষয় হলেও ও নিজের একটি আলাদা ধারা তৈরি করছে। এটি সবচেয়ে প্রশংসাযোগ্য।'
বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদের প্রশংসা করে জাফর ইকবাল বলেন, 'হুমায়ূন আহমেদের 'আই ডোন্ট কেয়ার' কে কি মনে করল সেটাকে পাত্তা না দেওয়ার বিষয়টি আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।'
অনুষ্ঠানের শুরুতেই গত চার বছরের এ আয়োজনের খণ্ড চিত্র দেখানো হয়। এরপর নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ এবং তার দল, হুমায়ূন আহমেদের 'তুমি চলে এসো এক বরষায়' এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সাদাত হোসেন এবং রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে রাবেয়া খাতুনকে পাঁচ লাখ টাকা এবং সাদাত হোসেনকে এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।