হামলার ভয়ে হলেই ঈদ করলেন রাবি শিক্ষার্থী

, ক্যাম্পাস

রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 23:24:31

বাড়িতে গেলে হামলার শিকার হওয়ার ভয়ে হলেই ঈদ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম রফিকুল ইসলাম শান্ত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডি ইউনিয়নের রসিদাবাদ গ্রামে। তার পিতা কাজি মো. নুরুল ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য।

শান্ত জানায়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকার এক মেসে থাকেন। তবে ঈদের ছুটির কারণে মেস ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তিনি তার বন্ধুর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে থাকছেন। বসতভিটার জমি নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে দীর্ঘশত্রুতার জেরে হামলার ভয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাননি তিনি।

শান্তুর অভিযোগ, সর্বশেষ ঈদের দিন বিকেলেও তার ভাইয়েরা হামলার শিকার হয়েছে। এতে তার এক ভাইয়ের পায়ের রগ কিছুটা কেটে দিয়েছে তার প্রতিবেশী। এঘটনায় শান্তর বড়ভাই রাশেদুল ইসলাম বাদি হয়ে স্থানীয় পটিয়া থানায় মামলা দায়ের করায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পটিয়া থানাপুলিশ। গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তির নাম আবদুস সালাম। তিনি মামলার ১ নম্বর আসামী।

তবে মামলার বিবাদীরা বলছেন, ঈদের দিন কোনো মারামারির ঘটনাই ঘটেনি। তবে তাদের সাথে জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম শান্ত বলেন, আমাদের প্রতিবেশি দীর্ঘদিন দিন ধরে আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমার বাবার পৈতৃক সম্পত্তির উপর আমাদের ঘর করা আছে। তারা বিভিন্নভাবে ২০০৮ সাল থেকে প্রভাব খাটিয়ে হয়রানি করে আমাদের বাড়ি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৪ জুন গভীর রাতে তারা আমাদের বাড়িতে হামলা করে এবং বাড়ির সামনের টিনের বেড়া উঠিয়ে নিয়ে যায়। বাসায় শুধু আমার ভাই আর ভাবি ছিল। আমার ভাইকে হত্যার হুমকিও দেয়।

তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীরা এদের ভয়ে কিছু বলতে পারে না। এদের ভাড়াটে গুন্ডা বাহিনীও রয়েছে। গত ২৪ জুন ভোটার হতে গেলে আমাকেও হামলা করার চেষ্টা করে এবং উল্টো আমার নামেই অভিযোগ দায়ের করেন। সেই ভয়ে আমি রাজশাহীতেই ঈদ কাটালাম। রোববার পবিত্র ঈদের দিন আমার দুই ভাইকে ওরা ৫-৬ জন ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে মারধর করিয়েছে। পরে আমরা থানায় মামলা দায়ের করি। পুলিশ তদন্ত করতে এসেছিলেন। এখন আমার পরিবার আরও ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

মামলার বিবাদী মো. লোকমান বলেন, আমি সম্পূর্ণভাবে অন্ধ। আর ওরা সবল এবং চালাক মানুষ। গত ঈদের দিনে এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে ক্ষমা করে দেয়, বুকে বুক মিলায়, মারামারি করে না। সেদিন কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। মূল ঘটনা হচ্ছে, আমার বাবার সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য নুরুল ইসলাম অনেক আগে থেকে পায়তারা করে আসছে। আব্দুর রাজ্জাক কাজী বাড়ির এমন কোনো পরিবার নাই, যাদের সাথে ওর বিবাদ হয় নাই।

তিনি আরও বলেন, নুরুল ইসলামের চাচার থেকে আমার বাবা জমি কিনেছিলো। সেই জমিতে আমি বাড়ি বানিয়েছি। এরপাশে ওর বাড়ি। জমিটা এখন একটু দামি হয়ে গেছে। আর আমার দুইটা মেয়ে আছে, কোনো ছেলে সন্তান নাই। এজন্য সে জমিটা জবরদখল করার জন্য বা আমি যেনো ছেড়ে দিয়ে আসি, সেজন্য পায়তারা করছে। এ বিষয়ে এসিল্যান্ড অফিসে একটা মামলা চলমান আছে।

এছাড়া, গত ফেব্রুয়ারি মাসে নুরুল ইসলাম ও তার দুই ছেলে মিলে আমাকে, আমার স্ত্রী এবং এক ভাইয়ের বউকে মেরেছিলো। এবিষয়ে থানায় একটা অভিযোগও দিয়েছিলাম, পরে সেটা উঠিয়ে নিয়েছি। ভেবেছিলাম, প্রতিবেশি মানুষ হয়তোবা ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু ভালো না হওয়ায় আমি আবার কোর্টে একটা মামলা করেছিলাম। এটার তদন্ত প্রতিবেদন থানা থেকে দেওয়া হয়নি।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম বলেন, এঘটনায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার মূল আসামি মো. আবদুস সালামকে (৪০) গেফতার করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত কাজ এখনো চলছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিবো।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে কাজি মো. নুরুল ইসলামের মেজো ছেলে রাকিবুল ইসলাম শাওন প্রশ্নপত্র ফাঁস নিরোধে কুইক ট্রেসিং প্রিন্ট (কিউটিপি) পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। এটা নিয়ে বেশ কিছু গণমাধ্যমে সেসময় খবর প্রকাশিত হয়েছিলো। শাওন এখন ইসলামি ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর