চবির আবাসিক শিক্ষক পদে যোগদানে অপারগতা প্রকাশ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে যোগদানে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফণী ভূষণ বিশ্বাস।
সোমবার (১৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এ অপরাগতার কথা জানান ড. ফণি ভূষণ বিশ্বাস। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) তাকে শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের আমলে তৎকালিন প্রক্টর ও শহীদ আব্দুর রব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নূরুল আজিম শিকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তার অধীনে কাজ করাটা লজ্জা, অপমান ও বিব্রতকর বলে জানিয়েছেন চবির এ শিক্ষক।
রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৯ মে আপনার প্রেরিত পত্রের মাধ্যমে আমি জানতে পারি যে, আগামী এক বছরের জন্য আমাকে শহীদ আবদুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। আপনি নিশ্চই অবগত আছেন যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনিবাহী পর্ষদ-২০২২ এ কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সদ্য সাবেক উপাচার্য প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপশাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। আমাকে এমন একটি হলে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে যেখানে হল প্রাধ্যাক্ষের দায়িত্বে এখনো আসীন আছেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের আমলে বিভিন্ন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত একজন শিক্ষক, যার বিরুদ্ধে ইউজিসির পক্ষ হতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান প্রশাসনের বিভিন্ন পর্ষদে প্রায় দুই মাস পূর্বে বিদায়ী উপাচার্য প্রশাসনের অপকর্মের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বেশ কিছু শিক্ষক এখনো বিভিন্ন হলে প্রাধ্যাক্ষের দায়িত্বসহ আরও অনেক প্রশাসনিক পর্ষদে বহাল রয়েছেন।
অধিকন্তু, আমার নামে ইস্যুকৃত চিঠির সাথে একই দিনে সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের প্রশাসনে অত্যন্ত সক্রিয় থেকে বিতর্কিত কাজ করা আরও কয়েকজন শিক্ষককে কয়েকটি হলে নতুন করে আবাসিক শিক্ষকের পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, উপরোক্ত প্রশাসনিক পদে যোগদান করা আমার জন্য অত্যন্ত লজ্জা, অপমান ও বিব্রতকর।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি উক্ত আবাসিক শিক্ষক পদে যোগদান করতে সজ্ঞানে এবং সুস্থ মস্তিস্কে অপরাগতা প্রকাশ করছি। তবে উল্লেখ থাকে যে, একজন দায়িত্বশীল শিক্ষক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নয়নের স্বার্থে যেকোন শুভ কাজে প্রশাসনকে আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
এ বিষয়ে ড. ফণি ভূষণ বিশ্বাস বলেন, আমি দীর্ঘদিন বিদায়ী উপাচার্যের আমলে প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। যাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি এতদিন অবস্থান নিয়েছিলাম তাদের সাথেই কাজ ভাগাভাগি করাটা আসলে আমার জন্য লজ্জার। এটা ঠিক যে আমাদের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে এর মানে এই নয় যে দুর্নীতিবাজদের নিয়েও কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের অধীনে যারা দুর্নীতি করেছিলেন তাদের বেশিরভাগই এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বহাল আছেন। এছাড়া আমার সাথে একইদিন আরও কয়েকজনকে বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব কিছু বিবেচনায় আমি শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম. নূর আহমদ বলেন, আমি এখনো চিঠি হাতে পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর বিস্তারিত বলতে পারব। যদি তিনি যোগদান করতে না চান তাহলে উনার জায়গায় অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।