জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে এক বহিরাগত ব্যক্তিকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) ধর্ষণের ঘটনার বিচার দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১২টায় শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তায় মানববন্ধন শেষে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আরেকটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের কক্ষের সামনে অবস্থান নেয়।
এসময় জাবি উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছে ৩ দফা দাবি জানায় তারা। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাদী হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে, অছাত্রদের হল থেকে বের করতে হবে, এই ধর্ষণের বিচার ছাড়া সিন্ডিকেট নয়।
প্রক্টরিয়াল বডির বিচার ও পদত্যাগ দাবি করে বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামিমা সুলতানা বলেন, এমন অথর্ব প্রশাসন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চলে না। আমরা বারবার প্রশাসনকে বলেছি যারা অবৈধ শিক্ষার্থী তারা যেন হলে থাকতে না পারে। কারণ তারা কোন অন্যায় করলে সেটির কোনো বিচার হয় না। এখন দেখবো ৪৫তম ব্যাচের যারা অপকর্ম করেছে তদের বিচারটা কী করেন।
জড়িতদের সার্টিফিকেট বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা সজাগ থাকলে প্রশাসন যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেনা।
এ ঘটনায় প্রক্টরের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং অভিযুক্তদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করার অভিযোগ এনে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, প্রক্টরের উপস্থিতিতে রাত একটার দিকে ধর্ষক মোস্তাফিজ ছাত্রলীগের সহায়তায় হল ক্যান্টিনের তালা ভেঙে পেছন দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আমরা এই অথর্ব প্রক্টরের পদত্যাগ চাই। প্রক্টর তার পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা অনেক আগেই হারিয়েছে। এই ঘটনায়ও তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রক্টরের উপস্থিতিতে ধর্ষক কীভাবে পালিয়ে যেতে পারলো?
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি ও সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, জরুরি সিন্ডিকেট মিটিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বেলা ৩টায় জরুরি সিন্ডিকেট শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়। এরপর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় সিন্ডিকেটে গৃহীত সিদ্ধান্ত জানাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান জানান, প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, প্রধান অভিযুক্ত মোস্তাফিজের সনদ স্থগিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা ,মুরাদকে সাময়িক বহিষ্কার ও সনদ স্থগিত করা হলো, শাহ পরান সনদ স্থগিত করা হলো, সাব্বির আহমেদ সাগরকে সাময়িক বহিষ্কার ও সনদ প্রদান স্থগিত, এ এস এম মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকীকে সাময়িক বহিষ্কার ও সনদ স্থগিত, হাসানকে সনদ স্থগিত ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা।
এছাড়া সিন্ডিকেট সদস্য ড. অজিত কুমার মজুমদারকে সভাপতি করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আফসানা হক। এছাড়া ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) মাহতাব-উজ-জাহিদকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলের ৩১৭ নং কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনুর রশীদ মামুন।
অভিযুক্ত মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
এ ঘটনার অভিযোগে এখনো পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।