বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার অন্যতম মদদদাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমদকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জবি প্রাঙ্গণে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার মদদদাতা এ শিক্ষককে আটক করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে তাকে কোতোয়ালি থানায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহিদ ইসলাম বলেন, আজ সকালে অধ্যাপক ফরিদ আহমদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। এসময় তাকে চিনতে পেরে কোন কিছু না করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করি। শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় সহযোগিতা করার অভিয়োগে তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটা মামলা আছে, বলেও জানান তিনি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক ফরিদ আহমদকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যম্পাসে আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করে। তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। তিনি এখন আমাদের হেফাজতে আছেন।
তিনি আরও বলেন, আশুলিয়া থানা যদি তাকে গ্রেফতার দেখায় তাও করতে পারে। আর তাকে গ্রেফতারের বিষয় আমরা যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাই তাহলে গ্রেফতার করে আদালতের কাছে সোপর্দ করবো।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৪ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৮ আগস্ট ফরিদ উদ্দিনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলন চলাকালীন গত ১৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের একটি চ্যাট ফাঁস হয়। চ্যাটবক্সে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেবুন্নেসার লিখা 'আমাদের এতগুলো শিক্ষক আহত হয়েছেন। আমরা না খেয়ে আছি। আমাদের খবর কাউকে নিতে দেখিনি৷ এই মেসেজের প্রত্যুত্তরে অধ্যাপক ফরিদ শিক্ষার্থীদের 'রাজাকার' আখ্যায়িত করে বলেন - আর একটু অপেক্ষা করুন। রাজাকারদের পরাজয় সমাসন্ন। আপনাদের কষ্টের বিনিময়ে দেশ আগামীতে শুদ্ধ ধারায় এগিয়ে যাবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু৷
ফাঁস হওয়া চ্যাটবক্সে আরও দেখা যায়, স্যার একজন শিক্ষকের মনে এতো প্রতিহিংসা থাকা উচিত না। সরি স্যার প্লিজ আপনি গালি দিবেন না। এরা কেউ রাজাকার না' জনৈক শিক্ষকের এই মেসেজের প্রত্যুত্তরে শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে অধ্যাপক ফরিদ লিখেন - জাতির পিতার কন্যা যে কথা বলেননি সেটা যারা বানিয়ে নিজের ওপর আরোপ করে স্লোগান দেয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ অধিবেশন ডেকে বিল পাস করতে সাহস দেখায়, দিন-ভর রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ভাঙচুর করছে তাদের কিভাবে সমর্থন করি? আমরা বলেছি কোটা যৌক্তিকভাবে সংস্কার করা হবে তার কোনো মূল্যই দিচ্ছে না, সে কিভাবে আমার ছাত্র-ছাত্রীর অবস্থানে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো প্রতিহিংসা নেই। তাদের উন্মাদনা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমি মেধা বলে শিক্ষক হয়েছি। আমার কেউই কোটায় কোনো চাকরি পায়নি। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, রাজাকার দেখেছি, পাক হানাদার বাহিনীদের দেখেছি, তাদের নির্যাতন সহ্য করেছি, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাও দিয়েছেন কিন্তু তিনি সনদের জন্য আবেদন করেননি। প্রতিহিংসা তাদের মনে যারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহ্য করতে পারছে না। তাদের সন্মান দিতে পারছে না। পুরো দেশটা তাদের হাতে ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। কোনোকিছু না নিয়ে জাতির হাতে তুলে দিয়েছে দেশটা। মুক্তিযুদ্ধ আমার অস্তিত্ব-সেই অস্তিত্বে আঘাত যে করে সে কিভাবে মানবিক আচরণ আশা করো।
এদিকে গত ১৫ জুলাই রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলামের আশুলিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় হামলার মদদ দেওয়ার অভিযোগে ফরিদ উদ্দিনকে ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া এ মামলায় সাবেক দুই উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম ও অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, সাবেক দুই প্রক্টর ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জন আসামিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।